ইমেইলে CC এবং BCC কী? কীভাবে ব্যবহার করতে হয় জানুন

আজকাল অফিসিয়াল ও প্রফেশনাল কাজে ইমেইল খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পুরনো চিঠির স্থান দখল করে নিয়েছে ইমেইল। তাই ইমেইলের সঠিক ব্যবহার জানা জরুরি হয়ে গেছে এখন। ইমেইল পাঠানোর অভিজ্ঞতা থাকলে নিশ্চয় CC এবং BCC নামের সাথে পরিচয় থাকবে আপনার। তবে আমরা সাধারণত এই দুটি জিনিস ব্যবহার করি না বলে অনেক সময়ই এর কার্যকারিতা ভুলে যাই। অনেকের হয়তো এই বিষয় সম্পর্কে তেমন ধারণাই নেই। তবে প্রফেশনাল কাজে ইমেইল ব্যবহার করে থাকলে CC এবং BCC এর ব্যবহার জেনে নেয়া বেশ জরুরি।

আজকের পোস্টে আমরা ইমেইলের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ফিচার CC এবং BCC নিয়ে আলোচনা করবো। আপনি জেনে নিতে পারবেন CC ও BCC বলতে আসলে কী বোঝানো হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মূলত এগুলো কাজে লাগবে আপনার।

CC এবং BCC এর মানে কি?

CC এবং BCC সম্পর্কে বুঝতে হলে আমাদের প্রথমেই CC এবং BCC এর মানে সম্পর্কে জেনে নেয়া প্রয়োজন। এই দুটি জিনিস আসলে শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। ইংরেজিতে CC এর পূর্ণ রূপ ‘Carbon Copy’ এবং BCC এর পূর্ণ রূপ ‘Blind Carbon Copy’। 

কার্বন কপি কথাটি শুনলেই আমাদের পুরনো দিনের কথা মনে পড়বে যখন মূলত সকল কাজে হাতে লেখা বিভিন্ন ডকুমেন্টের প্রচলন ছিল। অফিসিয়াল বিভিন্ন কাজের রেকর্ড সংরক্ষন করে রাখতে এই কার্বন কপি মূলত ব্যবহৃত হতো। এটি একটি কালিযুক্ত কাগজ যা মূল ডকুমেন্টের নিচে রেখে কলম দিয়ে কিছু লিখলে সেই চাপে কার্বন কাগজের নিচে থাকা কালির মাধ্যমে নিচেও লেখা হুবহু কপি হয়ে যেত। ফলে একটি ডকুমেন্টের রেকর্ড রাখতে বারবার টাইপ করতে হতো না।

তবে ইমেইলের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি কিছুটা ভিন্ন। অবশ্য CC এবং BCC সেই হাতে লেখা কাগজের মতোই কপি করে সংরক্ষন করে রাখার মতো কাজ করে থাকে। তবে শুধু এই কাজেই CC এবং BCC এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ নয়। আরও অনেক কাজ করা যায় এই দুটি জিনিস দিয়ে যেগুলো আমরা পরের অংশে আলোচনা করবো।

CC কোথায় ব্যবহৃত হয়?

CC বলতে ‘Carbon Copy’ বুঝানো হয়। স্বাভাবিকভাবেই কাউকে ইমেইল পাঠালে তার একটি আলাদা কপি পাঠাতে এটি ব্যবহার হবে বোঝা যাচ্ছে। আপনি ইমেইল মূলত যাকে উদ্দেশ্য করে পাঠাচ্ছেন সে ছাড়াও অন্য কাউকে এই ইমেইলের বিষয়ে অবগত রাখতেই মূলত CC অংশটির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমনঃ কর্মক্ষেত্রে আপনি গ্রাহককে পাঠানো ইমেইলের CC অংশে আপনার ম্যানেজারকে যুক্ত রাখতে পারেন যাতে ম্যানেজার এই পুরো বিষয়ে অবগত থাকতে পারেন।

অর্থাৎ CC অংশে এমন কাউকে যুক্ত করা হয় যার কাছ থেকে আপনি কোন রিপ্লাই আশা করেন না। বরং শুধু তাকে অবগত রাখতে চান। তবে অনেককে একটি ইমেইল একসঙ্গে পাঠাতে চাইলেও CC এর ব্যবহার করা হয়। তবে সেক্ষেত্রে BCC এর ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। কেন অনেককে একসঙ্গে ইমেইল পাঠাতে চাইলে BCC ভালো পদ্ধতি সেটি সম্পর্কে একটু পরেই আলোচনা করা হবে।

অর্থাৎ CC এর মাধ্যমে মূলত অন্যের সাথে তথ্য শেয়ার করা হয়ে থাকে। CC তে কাউকে উদ্দেশ্য করে বা তার কাছ থেকে কিছু আশা করা হয় না সাধারণত। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে প্রতিটি ইমেইলের একজন প্রাপক থাকবেই। প্রাপক (To) ছাড়া কাউকে শুধু CC অংশে রেখে আপনি সাধারণত ইমেইল করতে চাইবেন না। আর প্রাপকই মূলত ইমেইলের উদ্দেশ্য হয়ে থাকেন। আর CC শুধুমাত্র এই ব্যাপারে অবগত থাকেন। তবে CC অন্য অনেকভাবেও ব্যবহার হতে পারে। তবে CC এর মূল উদ্দেশ্য তথ্য শেয়ার করা বা কাউকে অবগত রাখা।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

ইমেইলে CC এবং BCC

👉 ইমেইল আইডি খোলার নিয়ম

BCC কোথায় ব্যবহৃত হয়?

BCC এর অর্থ ‘Blind Carbon Copy’। সাধারণ বাংলায় ব্লাইন্ড মানে অন্ধ বা যিনি দেখতে পান না। BCC এর উদ্দেশ্যও দেখতে না দেয়া। তবে দেখতে না দেয়া বলতে এখানে বুঝানো হচ্ছে আপনি যে কাউকে ইমেইল পাঠানোর সময় অন্যকেও এই একই ইমেইল পাঠাচ্ছেন এটি জানতে না দেয়া। CC অংশে আপনি যাকে যাকে রাখবেন তারা সহ মূল প্রাপক সবাই সবার ইমেইল ঠিকানা ও কতজনকে আপনি একসঙ্গে এই ইমেইল পাঠাচ্ছেন তা সহজেই দেখতে পারে। অর্থাৎ প্রাইভেসি রক্ষার ক্ষেত্রে CC খুব একটা কাজের নয়। যদি আপনি প্রাপক ও অন্য কাউকে না জানিয়েই প্রাইভেসি বজায় রেখে একই ইমেইল অনেককে একসঙ্গে পাঠাতে চান তবে BCC এই একমাত্র উপায়।

অর্থাৎ একসঙ্গে অনেককে ইমেইল পাঠানোর ক্ষেত্রে CC হতে BCC বেশি কাজের। কেননা এতে করে কেউ দেখতে পাবে না আপনি এই একই ইমেইল কয়জনকে বা কাকে কাকে পাঠাচ্ছেন। ফলে সকলের প্রাইভেসি রক্ষা করা সহজ হয় এবং সহজে কাজ করা যায়।

BCC ও নানা উপায়ে ব্যবহার হতে পারে। চাইলে BCC এর মাধ্যমে আপনি কাউকে না জানিয়েই নিজের অন্য কোন ইমেইলে আপনার পাঠানো ইমেইলের কপি রাখতে পারেন। আবার এমন কাউকে অবগত রাখতে চান বা তথ্য শেয়ার করতে চান যার কাছে আপনি সবার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করতে চান না সেক্ষেত্রেও BCC কাজে দেবে।

👉 ইমেইল পাঠানোর নিয়ম (মোবাইল ও কম্পিউটার থেকে)

কোন প্রতিষ্ঠানে ই-মেইল করতে হলে CC নাকি BCC দিতে হবে?

কোন স্থানে ইমেইল করতে আপনি CC বা BCC কীভাবে ব্যবহার করবেন তা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা ইমেইল শিষ্টাচার অনুযায়ী হওয়াই ভালো। অর্থাৎ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে ব্যবহারবিধি আপনার নিজেকেই আয়ত্ত করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের ব্যবহারবিধি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকাটাই আবশ্যক। গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের ক্ষেত্রে প্রাপকের নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি রক্ষা করা জরুরি হলে কোন ক্ষেত্রেই আপনার CC এর ব্যবহার করা উচিত নয়। তেমনি আপনার ঊর্ধ্বতন কাউকে পুরো ইমেইল সম্পর্কে অবগত রাখা জরুরি হলে BCC এর মাধ্যমে প্রাপক ও অন্যান্যদের পরিচয় গোপন রাখাও সঠিক নয়।

কোন প্রতিষ্ঠানে আপনি যখন ইমেইল পাঠাবেন তখন প্রাপক হবে আপনার প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কেউ। সেই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কাউকে যদি আপনি আপনার ইমেইলের ব্যাপারে অবগত রাখতে চান তবে আপনি CC এর ব্যবহার করতে পারেন। আবার যদি প্রাপককে আপনি জানাতে না চান এই ব্যাপারে তবে BCC ব্যবহার করাই শ্রেয়। আবার আপনি কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে অনেককে একসঙ্গে ইমেইল পাঠাতে চাইলে BCC ব্যবহার করাই ভালো সকলের পরিচয়ের গোপনীয়তা বজায় রাখতে। অর্থাৎ আপনি CC নাকি BCC এর ব্যবহার করবেন তা সম্পূর্ণই পরিস্থিতি, বিষয়, প্রয়োজন এই সকল কিছুর উপর নির্ভর করেই আপনাকে বিচার করতে হবে। তাই এই ব্যাপারে নিজের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করাটাই জরুরি। এক্ষেত্রে আপনি অভিজ্ঞ কারো সহায়তাও নিতে পারেন।

আশা করা যায় এবার CC এবং BCC নিয়ে অনেকের ধারণাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। ইমেইলের সকল ফিচার সম্পর্কে ধারণা রাখার মাধ্যমেই শুধুমাত্র ইমেইলের পূর্ণ সুবিধা উপভোগ করা যায়। তাই এই ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ আপনার প্রফেশনাল জীবনের জন্য।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,567 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *