আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময় হচ্ছে অ্যারোপ্লেন বা উড়োজাহাজ। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার দ্রুততম ও নিরাপদ মাধ্যমে এই বিমান বা উড়োজাহাজ। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন বিস্ময়কর অনেক কিছুই স্বাভাবিক মনে হয়। তবে কখনও কী ভেবে দেখেছেন যে প্লেন কীভাবে আকাশে ওড়ে?
বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে, প্লেনের আকাশে ওড়ার ব্যাপারটি পুরোটাই ফিজিক্সের কারসাজি। এই পুরো ব্যাপারটি আজকের এই পোস্টে আলোচনা করবো আমরা। কীভাবে প্লেন বিস্ময়করভাবে আকাশে ভাসছে আর অভাবনীয় গতিতে ছুটে চলছে সেটি বোঝা অনেকেটাই সহজ হয়ে যাবে এই পোস্ট থেকে।
মানুষের ওড়ার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
প্লেনের আবিষ্কারক হিসেবে আমরা রাইট ভাইদের নাম জানি (রাইট ব্রাদার্স)। তারা আকাশে ওড়া প্রথম মানুষ । ১৯০৩ সালে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় প্রথম উড়তে সফল হয়েছিলেন। তাদের প্লেনের পাখা ছিল ৪০ ফুট লম্বা। তারাই প্রথম প্রমাণ করেন যে মানুষের পক্ষেও ওড়া সম্ভব। তাদের এই চেষ্টার ফলেই পরবর্তীতে আরও অনেকে আধুনিক প্রযুক্তির প্লেন বানাতে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে বাইপ্লেন তৈরি করে জার্মানরা। ১৯১৪ সালে প্রথম আমেরিকান প্লেন তৈরি হয়।
প্লেন কীভাবে ওড়ে?
আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে মানুষ নিজে নিজে কেন উড়তে পারে না প্লেনের চেয়ে এতোটা হালকা হওয়া সত্ত্বেও? এর পিছনেই কাজ করছে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান। রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের সময় থেকে এর পিছনের মূল প্রযুক্তি এক থাকলেও অনেক পরিবর্তন এসেছে আধুনিক প্লেনের ডিজাইনে। একটি প্লেনের আকাশে ওড়ার ক্ষেত্রে মূলত দুই ধরণের শক্তি দরকার হয়ঃ ধাক্কা এবং উড্ডয়ন শক্তি।
ধাক্কা হচ্ছে সামনের দিকে যাবার জন্য গতি, প্লেনের ক্ষেত্রে এই গতি দেয়া হয় প্রপেলার বা জেট ইঞ্জিনের মাধ্যমে। সামনের দিকে জোরে এগোতে গেলে বাতাসের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে আপনি বাঁধা প্রাপ্ত হবেন। এই বাঁধার ব্যাপারটি খুব সহজেই বোঝা যায়। ধরুন আপনি কোন গাড়িতে করে কাচ্ছেন। আপনি যদি জানালা দিয়ে একটু বাইরে হাত বাড়ান (এটা খুবই বিপজ্জনক, গাড়ি চলাকালীন বাইরে শরীর বের করা থেকে বিরত থাকুন) তাহলে মনে হবে যে বাতাস আপনার পাশ দিয়ে বেশ গতিতে বয়ে চলেছে। এবার যদি আপনি আপনার হাতটি হাই ফাইভ দেয়ার মতো করে উঁচু করেন তবে দেখবেন যে অনেক জোরে এই বাতাস আপনার হাতকে পিছনের দিকে ঠেলছে। এই বাঁধার ব্যাপারটি প্লেনের চলার ক্ষেত্রেও ঘটে।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
এবার আপনি যদি আপনার হাতকে হাই ফাইভের মতো করে না রেখে স্বাভাবিকভাবে নামিয়ে রাখলে দেখবেন এই বাতাসের বাঁধা অনেকটাই কমে আসছে। এই ব্যাপারটিই প্লেন তৈরির ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়। যেভাবে রূপ দিলে প্লেনের কাঠামোটি বাতাসের বিরুদ্ধে সবথেকে কম বাঁধা পেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে সেভাবেই এটি বানানো হয়ে থাকে। প্লেনকে উড়তে হলে এই ধাক্কার শক্তি অবশ্যই বাতাসের বাঁধার সমান বা তার বেশি হতে হয়।
এবার আসা যাক ওড়ার জন্য যে মূল শক্তি দরকার যাকে আমরা উড্ডয়ন শক্তি বলছি সেটির ব্যাপারে। এই শক্তি উৎপন্ন হয় প্লেনের ডানার বিশেষ কাঠামোর জন্য যাকে এয়ারফয়েলও বলা হয়ে থাকে। প্লেনের ডানাগুলো এমনভাবে বানানো ও কাত করে বসানো থাকে যেন বাতাস এর চারপাশে বয়ে চলার সাথে সাথে উপরের দিকে একটি আলাদা শক্তি তৈরি করতে পারে। এই উড্ডয়ন শক্তি অবশ্যই পৃথিবীর অভিকর্ষ বল থেকে বেশি হতে হয়। এরপরই প্লেন আকাশে উড়তে পারে।
ডানার থেকে কীভাবে এই উড্ডয়ন শক্তি তৈরি হয় সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা এখনও দ্বিমত করে থাকেন। কারো কারো মতে এই শক্তিকে বারনলির নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায়। এই নিয়ম অনুযায়ী ডানার উপরে চলাচল করা তীব্র গতির বাতাসের চাপ ডানার নিচে থাকা ধীরগতির বাতাসের চাপ থেকে কম হওয়ায় নিচের বেশি চাপের বাতাস ঠেলে ডানাকে উপরের কম চাপের বাতাসের দিকে ওঠাতে চেষ্টা করে। আর একারণেই এই উড্ডয়ন শক্তির তৈরি হয়।
আবার অনেকের মতে এই উড্ডয়ন শক্তিকে নিউটনের তৃতীয় সুত্র অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা যায়। এই মত অনুযায়ী ডানা কাত হয়ে থাকবার কারণে ডানার উপরে বইতে থাকা বাতাস ডানার ধাক্কায় নিচের দিকে চলে যায়। যেহেতু নিউটনের সুত্র অনুযায়ী সকল ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে তাই নিচের দিক থেকেও উল্টো শক্তি প্লেনকে উপরে উঠতে সাহায্য করে।
তবে এই দুটি মতের যেটিই বিবেচনায় ধরা হোক না কেন অবশ্যই এই উড্ডয়ন শক্তিকে অভিকর্ষ শক্তি হতে বেশি হতে হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। অর্থাৎ প্লেন যত ভারী হবে তাকে তত বেশি উড্ডয়ন শক্তি তৈরি করতে হবে। আর প্লেন যত হালকা হবে তত কম শক্তি দরকার হবে সেই প্লেনকে উড়তে হলে।
👉 উড়োজাহাজ নিয়ে ১০টি অবিশ্বাস্য তথ্য
বড় প্লেনগুলো সাধারণত ছোট প্লেন থেকে বেশি উপরে উড়তে পারে যেহেতু বড় প্লেন বেশি উড্ডয়ন শক্তি তৈরি করতে পারে। এছাড়াও ছোট প্লেন ১০০ মাইল এবং বড় প্লেন ২৪০০ মাইল পর্যন্ত একটানা উড়ে যেতেও সক্ষম। অর্থাৎ প্লেনের আকার প্লেনের ওড়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত উড্ডয়ন শক্তি, ধাক্কার শক্তি, প্রতিকূল শক্তি ও প্লেনের ওজন প্লেনের ওড়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।
প্লেনের ওড়ার ক্ষেত্রে আরও অনেক জটিল সমীকরণ থাকলেও সোজাভাবে এই শক্তিগুলোই প্লেনকে আকাশে ভাসিয়ে রাখে। তবে প্লেন উপরে ওঠার ক্ষেত্রে বা আকাশে দিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আরও অনেক জটিল সমীকরণ ব্যবহার করে থাকে যা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও গতিবিজ্ঞানের অবদান। আজকের পোস্টে এটুকুই রইল। হয়ত ভবিষ্যতে অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। আপনার মতামত কমেন্টে জানান!
👉 বিমানের ব্ল্যাক বক্স সম্পর্কে যেসব তথ্য আপনার জানা দরকার
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।