কেমন হবে যদি আপনাকে বলা হয় যে খুব বেশি কাজ না করেই আয় করতে পারবেন? শুনতে অবাক লাগছে? অবাক করার মত ব্যাপার হলেও প্যাসিভ ইনকাম এর ধারণা অনেকটা এই ধরনের। প্রতি মাসে যদি সাধারণ আয়ের পাশাপাশি একটি স্বয়ংক্রিয় আয়ের মাধ্যম চান, তাহলে আপনার প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কে জানা উচিত।
চলুন জেনে নেওয়া যাক প্যাসিভ ইনকাম কি ও প্যাসিভ ইনকামের সেরা উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
প্যাসিভ ইনকাম কি?
খুব বেশি বাড়তি এফোর্ট না দিয়ে বা সবসময় সরাসরি কাজ না করে আয়ের যে পথ তাকে বলা হয় প্যাসিভ ইনকাম। অনেকটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা আয়ের সাথে তুলনা করা যায় প্যাসিভ ইনকামকে। মূলত যে আয়ের জন্য শুধুমাত্র একবার প্রধানতম শ্রম বা অর্থ প্রদান হয় ও এরপর অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয় হতে থাকে, সেই ধরণের আয় হলো প্যাসিভ ইনকাম।
তবে প্যাসিভ ইনকাম নিয়ে অনেকের একটি সাধারণ ভূল ধারণা রয়েছে। অনেকে মনে করেন খুব কম সময়ের মধ্যে প্যাসিভ ইনকামের উৎস তৈরী করা সম্ভব ও একবার ক্ষেত্র তৈরী হয়ে গেলে নিয়মিত অর্থ আয় হতেই থাকবে। তবে এই ধারণা মোটেও সঠিক নয়।
বাস্তবিক পক্ষে একটি প্যাসিভ ইনকামের ক্ষেত্র তৈরি করতে অনেকটা পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও নিয়মিত প্যাসিভ ইনকাম এর সোর্স মেইন্টেইন করতে হয়। প্যাসিভ ইনকামের ক্ষেত্রসমূহ অনেকটা গাড়ি বা বাড়ীর মত, ঠিকমত যত্ন না নিলে মূল্য হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
তবে সময় ও শ্রম সঠিকভাবে প্রদান করে প্যাসিভ ইনকাম এর পথ সুগম করা সম্ভব। অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি নিরাপত্তা ও স্ট্যাবিলিটি অর্জনে সাহায্য করে প্যাসিভ ইনকাম।
প্যাসিভ ইনকাম এর উপায়সমূহ
আমরা খুঁজে বের করেছি প্যাসিভ ইনকাম এর কিছু যুগোপযোগী উপায়, যা অনুসরণ করে যেকেউ প্যাসিভ ইনকাম এর ক্ষেত্র তৈরী করতে পারে।
ইনভেস্টিং
প্যাসিভ ইনকাম এর সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হলো লাভজনক কোনো মাধ্যমে ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ করা। তবে অর্থ ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ করার আগে প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণ সতর্কতার। কোনো প্রতিষ্ঠানে অর্থ ইনভেস্ট এর আগে অবশ্যই উক্ত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখার পাশাপাশি লাভ ও ক্ষতির মানদন্ড বিবেচনা করতে হবে। এছাড়াও কোনো ইনভেস্টমেন্ট এক্সপার্ট এর সাহায্য নিতে পারেন।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
ইনভেস্ট করে আয় এর একাধিক মাধ্যম রয়েছে। ইনভেস্ট করতে পারেন বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের ব্যবসাতে। এছাড়াও ইনভেস্ট করার অসংখ্য অনলাইন মাধ্যম রয়েছে। আপনি যথেষ্ট উৎসুক হলে শেয়ার বাজারেও ইনভেস্ট করতে পারেন। ইনভেস্ট এর ক্ষেত্র যা ই হোক না কেনো, আগে থেকে রিসার্চ করে তবেই ইনভেস্ট করা উত্তম।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
প্যাসিভ ইনকাম এর কথা হচ্ছে, আর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর নাম আসবেনা তা কি করে হয়! বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন প্যাসিভ ইনকামের উৎস হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। কমিশনের বদলে অন্যের প্রোডাক্ট প্রোমোট করে সেল করাকে বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিত জানতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বাংলাটেক এর একাধিক গাইড রয়েছে, সেগুলো ঘুরে আসতে পারেন।
👉 অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করার উপায়
👉 দারাজ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করুন
👉 ১০ মিনিট স্কুল এফিলিয়েট প্রোগ্রাম থেকে আয়ের উপায়
👉 অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? এর মাধ্যমে কিভাবে আয় করা যায়?
ক্যাশ-ব্যাক রিওয়ার্ড
শুনতে অবাক লাগলেও ক্যাশ-ব্যাক রিওয়ার্ড হতে পারে একটি প্যাসিভ ইনকাম এর উপায়। খরচ যেহেতু করবেন, কিছু ক্যাশ-ব্যাক পেলে তো আর মন্দ হয়না, তাইনা? পরেরবার থেকে যেকোনো পেমেন্টের ক্ষেত্রে ক্যাশ-ব্যাক অফার আছে কিনা তা জেনে নিতে পারেন।
অনলাইন বা অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই প্রচুর ক্যাশ-ব্যাক অফার এর দেখা মিলবে। মোবাইল ব্যাংকিং ও ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে তো ক্যাশ-ব্যাক একটি সাধারণ বিষয়। ক্যাশ-ব্যাক রিওয়ার্ড পয়েন্টের ক্ষেত্রে যে অর্থ ক্যাশ-ব্যাক হিসেবে পাওয়া যায়, সেটিকে আয় করা অর্থের সাথে তুলনা করা চলে। কোনো বাড়তি পরিশ্রম না করেই ক্যাশ-ব্যাক এর অর্থ এভাবে সেভ করতে পারেন।
ফটো বা ভিডিও বিক্রি
স্টক ফটো বা ভিডিও এর আকাশছোঁয়া ডিমান্ড এর কথা কারোই অজানা নয়। ইউটিউব ভিডিও ও ব্লগ পোস্টের সাথে অ্যাসেট হিসেবে ফটো বা ভিডিও ব্যবহার করে থাকেন কনটেন্ট ক্রিয়েটরগণ। স্টক ফটো ও ভিডিও বিক্রি করা প্যাসিভ ইনকাম এর একটি অন্যতম উপায় হতে পারে। আপনি যদি মিউজিকও তৈরী করে থাকেন, সেক্ষেত্রে স্টক মিউজিক সেল করতে পারেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে।
স্টক ফটো, ভিডিও বা অডিও এর ক্ষেত্রে সুবিধাজনক বিষয় হচ্ছে একজন ক্রিয়েটর হিসেবে আপনার কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র অ্যাসেট তৈরী করে ওয়েবসাইটে আপলোড করা। এরপর যখনই কেউ আপনার আপলোড করা ফটো, ভিডিও বা মিউজিক কিনবেন, তার থেকে রেভিনিউ আসবে।
কোথায় বিক্রি করবেন আপনার ফটো, ভিডিও বা মিউজিক? এসব মিডিয়া অ্যাসেট বিক্রি অনেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। আনস্প্ল্যাশ, শাটারস্টক, এডোবি স্টক, আর্টলিস্ট, ইত্যাদি কিছু জনপ্রিয় অ্যাসেট স্টোর যারা অ্যাসেট বিক্রি করে ও তার রেভিনিউ আর্টিস্টদের সাথে শেয়ার করে।
👉 ফটোগ্রাফি করে আয় করার ৯টি মাধ্যম
মেম্বারশিপ
প্যাট্রিওন এর নাম হয়তো অনেকে শুনে থাকবেন। এই ওয়েবসাইটে আর্টিস্ট তাদের কমিউনিটি থেকে একটি নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে বাড়তি সুবিধা দিয়ে থাকেন। যেমনঃ কোনো ইউটিউবার যিনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখান, তিন প্যাট্রিওনে সাবস্ক্রাইবারদের জন্য ফিডব্যাক বা কলাব লাইভস্ট্রিম করতে পারেন। এভাবে অডিয়েন্সের উপকার করার পাশাপাশি বাড়তি কিছু সময় দিয়ে ভালো অংকের আয় করা যেতে পারে।
বই লেখা
রাতারাতি বই লেখা হয়তো সম্ভব না, কিন্তু কোনো বই লেখা সম্পন্ন করার পর একাধিক মাধ্যমে বিক্রি সম্ভব। ই-বুক এর জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে যেকোনো বই বিক্রি বর্তমানে বেশ সহজ হয়ে গিয়েছে। প্যাসিভ ইনকাম এর একটি উত্তম মাধ্যম হতে পারে বই লেখা ও প্রকাশ করা।
রিয়েল এস্টেট
বাসা বা ফ্ল্যাট বাড়ির চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। শহর এলাকায় বাসা বা ফ্ল্যাট এর খোঁজে থাকেন অনেকে। ফ্ল্যাট বাড়ির খোঁজ খবর নিয়ে অনুমতি সাপেক্ষে একটি এজেন্সি খুলতে পারেন। এতে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখতে হবে। যখন কেউ বাসা বা ফ্ল্যাট খুঁজবে, এজেন্সিতে যোগাযোগ করলে বাসা বা ফ্ল্যাট ভাড়ায় মধ্যস্থতা করে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।
ইউটিউব
ইউটিউব হতে পারে একাধিক প্যাসিভ ইনকাম এর উৎস। ইউটিউবে ভিডিও কনটেন্ট যেহেতু একবার তৈরী করলে, তার থেকে রেভিনিউ আসতে থাকে তাই এটিকে প্যাসিভ ইনকাম বলা চলে। যেকোনো নির্দিষ্ট নিশ বা টপিক এর উপর ভিত্তি করে চ্যানেল গড়ে তুলুন।
প্রশ্ন আসতে পারে ইউটিউব থেকে ইনকাম এর পথ কি? প্রথমত ইউটিউব এড রেভিনিউ থেকে আয় করা সম্ভব। এছাড়াও স্পন্সরশিপ, পেইড রিভিউ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ইত্যাদি করেও আরো প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট সম্ভব। ইউটিউব থেকে আয়ের আরো উপায় জানতে বাংলাটেক এর নিম্নোক্ত পোস্ট ঘুরে আসতে পারেন।
👉 ইউটিউব শর্টস থেকে আয় করার উপায়
ব্লগিং
ঠিক শুনেছেন, ব্লগিং করেও প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করা সম্ভব। এই কাজেও যেহেতু সরাসরি অনবরত শ্রম প্রদান করতে হয়না, তাই ব্লগিং থেকে আয়কেও প্যাসিভ ইনকাম বলা চলে। ব্লগিং করে একাধিক উপায়ে আয় করা যেতে পারে। প্রথমত এড রেভিনিউ থেকে ভালো অংকের আয় সম্ভব, যদি যথেষ্ট পরিমাণ ট্রাফিক থাকে। এছাড়াও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংসহ আয় বৃদ্ধির বিভিন্ন উৎস তো রয়েছেই।
👉 ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করার সেরা ৮ প্ল্যাটফর্ম
অনলাইন কোর্স
সম্প্রতি অনলাইন কোর্সসমূহ তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আমাদের দেশেও মানুষ অর্থের বিনিময়ে কিনে নিচ্ছে বিভিন্ন কোর্স। যেকোনো একটি ডিমান্ডিং বিষয় নির্বাচন করুন, যা আপনি খুব ভালো বুঝেন। উক্ত বিষয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ কোর্স তৈরী করুন ও তা বিক্রি করুন যথাযথ অডিয়েন্সের কাছে। কোর্স ম্যাটেরিয়াল শুধুমাত্র একবার তৈরী করতে হয়, আর ভালো কোর্স তৈরী করতে পারলে সারাজীবন এই কোর্স থেকে প্যাসিভ ইনকাম আসতেই থাকবে। তবে হ্যাঁ এই কোর্সগুলো সময়ের সাথে আপডেট করতে হতে পারে।
👉 অনলাইনে পড়াশোনা করার সেরা ১০ ওয়েবসাইট
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।