এই ছেলেটিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল কারণ তার বানানো ঘড়িটি দেখতে “বোমার মত”

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে আহমেদ মোহাম্মদ নামের ১৪ বছর বয়সী এক স্কুল ছাত্র বাড়িতে একটি ডিজিটাল ঘড়ি বানিয়েছিল। রোবটিক্স ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতি গভীর আগ্রহ থাকায় আহমেদ গত রবিবার রাতে বাসায় বসে একটি ডিজিটাল ঘড়ি তৈরি করে। এ কাজে সে ব্যবহার করেছিল সার্কিট বোর্ড, পাওয়ার সাপ্লাই এবং সেগুলোর সাথে তারের সাহায্যে একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে সংযুক্ত করেছিল এই বালক। ইংরেজি পত্রিকা দ্যা ডালাস মর্নিং নিউজ এই খবর জানিয়েছে।

সবশেষে ঘড়িটির আভ্যন্তরীণ যান্ত্রিক অংশগুলো একটি ধাতব পেন্সিল বক্সের ভেতর পুরে তার উপর ডিসপ্লেটি রেখে একে সচরাচর ব্যবহারযোগ্য একটি ডিজিটাল ঘড়িতে রূপ দেয় আহমেদ।

পরের দিন সে ঘড়িটি তার স্কুলে নিয়ে যায় ও ডিভাইসটিকে তার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের শিক্ষককে দেখায়। কিন্তু সেই টিচার আহমেদকে ঘড়িটি কাউকে না দেখানোর পরামর্শ দেন। এরপর ছেলেটি তার বানানো ঘড়িটি নিজের স্কুল ব্যাগে রেখে দেয়।

কিন্তু ইংলিশ ক্লাস চলাকালে ব্যাগের মধ্যে ঘড়িটিতে বিপ (অনেকটা অ্যালার্মের মত শব্দ) বেজে ওঠে। এরপর ঘড়িটি তার ইংলিশ শিক্ষক দেখেন এবং তিনি বলেন যে এটি দেখতে বোমার মত। ঐ শিক্ষক ঘড়িটি নিয়ে যান (বাজেয়াপ্ত করেন) এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ আহমেদকে পুলিশে ধরিয়ে দেন।

ডালাস মর্নিং জানাচ্ছে, ভুয়া বোমা বানানোর অপরাধে আহমেদের সাজা হতে পারে। আহমেদকে তার স্কুল থেকে তিন দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়ার পূর্বে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেখে দিয়েছে।

হাতকড়া পরা অবস্থায় ১৪ বছর বয়সী আহমেদের একটি ছবি তোলা হয়েছিল যেটি টুইটারে প্রকাশ পেয়েছে। বিজ্ঞানের প্রতি কৌতূহলী এই কিশোরটির পরনে নাসা’র (NASA) লোগো সম্বলিত একটি টিশার্ট দেখা যায়। তার চোখেমুখে ভীতির ছাপ স্পষ্ট ছিল।

https://twitter.com/OfficalPrajwol/status/644011809351962625/photo/1

এই খবরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকি আহমেদের পক্ষে টুইটারে একটি হ্যাশট্যাগ #IStandWithAhmed (আই স্ট্যান্ড উইথ আহমেদ অর্থাৎ আমি আহমেদের পাশে আছি বা তাকে সমর্থন করছি) এখন সবচেয়ে শীর্ষস্থানে ‘ট্রেন্ডিং’ হিসেবে উঠে এসেছে।

আপডেটঃ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামাও টুইটারে আহমেদ ও তার আবিষ্কারসুলভ মনোভাবের প্রশংসা করেছেন। তিনি ঘড়িটি নিয়ে আহমেদকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

হিলারি ক্লিনটনও টুইটারের মাধ্যমে আহমেদকে উৎসাহ দিয়েছেন।

মার্ক জাকারবার্গও আহমেদকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন এবং তাকে ফেসবুক অফিসে আমন্ত্রণ জানান।

গুগলের পক্ষ থেকে এক টুইট বার্তায় আহমেদকে তাদের বিজ্ঞান মেলায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে

https://twitter.com/googlescifair/status/644219471469629440

মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার আহমেদকে টুইটারে ইন্টার্নশিপের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে

আহমেদের স্কুলের এক সহপাঠীর একটি টুইট…

আহমেদ ডালাস মর্নিংকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছে সে একটি ঘড়ি বানিয়েছে। কিন্ত তার সাথে যেরকম আচরণ করা হয়েছে তাতে নিজেকে তার মানুষ মনে হয়নি বরং ‘ক্রিমিনাল’ মনে হয়েছে (“made me feel like I wasn’t human — it made me feel like a criminal.”)। এখানে তার সাক্ষাৎকারের ভিডিও এমবেড করে দেয়া হল। প্লে করে দেখে নিতে পারেন।

আহমেদ বলেছে “They searched me, they took the fingerprint and mugshots of me, and they searched me until my parents came and then I got to leave and go to the station,”…. “And I went home and talked to my parents about it because I couldn’t call my parents during the interrogation.”

আহমেদের পরিবার বলছে, তারা মুসলিম হওয়ায় তাদের সাথে এমন আচরণ করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন। আহমেদের পরিবার সুদান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছে।

twitter ahmad hashtag 2

আপডেটঃ ঘড়িটি বানানোর জন্য আহমেদের এখন আর কোনো সাজা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে হোয়াইট হাউসে বারাক ওবামার সাথে দেখা করবে এবং স্কুল পরিবর্তন করবে।

তথ্য ও ছবিঃ ডালাস মর্নিং নিউজ, বিজনেস ইনসাইডার, টুইটার, দি ভার্জ , ম্যাশেবল

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,550 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *