বিশ্বজুড়ে উচ্চগতির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। তাদের স্টারলিংক সেবা ইতোমধ্যেই বহু দেশে চালু হয়েছে এবং বিভিন্ন প্ল্যানের মাধ্যমে গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশেও আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে স্টারলিংক পরিষেবা। তবে সম্প্রতি অনলাইনে দেখা গেছে একটি নতুন পরিকল্পনার সম্ভাব্য ইঙ্গিত, যার নাম “স্টারলিংক কমিউনিটি”।
এই প্ল্যানটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত না হলেও, স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে একটি সাপোর্ট পেইজে এর কিছু উল্লেখ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে ধারণা করা যায়—স্পেসএক্স হয়তো শীঘ্রই একটি শেয়ার্ড ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করতে যাচ্ছে।
স্টারলিংক কমিউনিটি প্ল্যান – সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্য
এই প্ল্যানের মূল ধারণা হলো একটি মাত্র স্টারলিংক ডিশ ব্যবহার করে একাধিক ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। প্রত্যেক ব্যবহারকারীর থাকবে নিজস্ব স্টারলিংক অ্যাকাউন্ট। কিন্তু সবাই একটি শেয়ার করা রিসিভার থেকে ইন্টারনেট সংযোগ নেবেন। উক্ত প্ল্যানে কমবেশি ১০ জন ব্যবহারকারী সংযুক্ত হতে পারবেন বলেই বিভিন্ন প্রতিবেদনে ধারণা করা হচ্ছে।
কত টাকা লাগবে?
স্টারলিংক কমিউনিটি প্ল্যানের জন্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিছু প্রযুক্তি গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কমিউনিটি প্ল্যানে প্রতি ব্যবহারকারীর মাসিক খরচ হতে পারে প্রায় ৬০ মার্কিন ডলার। কিছু ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, নির্দিষ্ট অঞ্চলে এই খরচ ২০ ডলার পর্যন্ত নেমে আসতে পারে। তবে এই তথ্যগুলো এখনো ১০০ শতাংশ নিশ্চিত নয়।
তুলনামূলকভাবে, স্টারলিংকের রেসিডেন্সিয়াল লাইট প্ল্যানের দাম প্রায় ৮০ ডলার এবং স্ট্যান্ডার্ড রেসিডেন্সিয়াল প্ল্যানের দাম ১২০ ডলার। সেই তুলনায় এটি অনেক সাশ্রয়ী একটি বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
কারা উপকৃত হবেন?
স্টারলিংক কমিউনিটি প্যাকেজ চালু হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেনঃ
- গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ
- কমিউনিটি স্কুল বা লাইব্রেরি
- অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে বসবাসকারী পরিবার
- উন্নয়নশীল দেশের সীমিত আয়ের জনগণ
বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে এখনো অনেক গ্রামে ব্রডব্যান্ড পৌঁছায়নি, সেখানে এই ধরনের শেয়ার্ড সেবা ডিজিটাল বৈষম্য হ্রাসে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রযুক্তিগতভাবে স্টারলিংক কমিউনিটি প্যাকেজ কীভাবে সম্ভব?
স্টারলিংকের স্যাটেলাইট গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে একটি বিশেষ ধরনের অ্যান্টেনা, যাকে বলা হয় ফেজড-অ্যারে অ্যান্টেনা। এই অ্যান্টেনা এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে একাধিক ব্যবহারকারী একই সময়ে সংযোগ নিতে পারেন এবং প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট ব্যান্ডউইথ পান। এছাড়া স্টারলিংক স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন ইতোমধ্যেই হাজার হাজার স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত। এতে ইন্টারনেট সংযোগ আরও স্থিতিশীল এবং দ্রুত হয়।
👉 স্টারলিংক ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম
কমিউনিটি প্যাকেজ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চালু না হলেও, স্টারলিংকের একটি সাপোর্ট পেজে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও পেজটি অনেক সময় উপলব্ধ নাও হতে পারে। এই কমিউনিটি প্ল্যানের মূল উদ্দেশ্য হলো একাধিক ব্যবহারকারীকে একটি শেয়ার করা স্টারলিংক ডিসের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া, যাতে খরচ কমে এবং দূরবর্তী এলাকাগুলোর জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়।
সাধারণভাবে, স্টারলিংক পরিষেবায় একজন গ্রাহকের জন্য একটি আলাদা ডিস সেটআপ করা হয়। সেই গ্রাহক তার নিজস্ব বাসার মধ্যে Wi-Fi রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট শেয়ার করে থাকেন। পুরো সিস্টেমটি একক গ্রাহকের জন্যই নকশা করা।
নতুন ‘কমিউনিটি’ প্ল্যানে কী থাকবে?
এই নতুন কমিউনিটি প্ল্যানটি একক ব্যবহারকারীর বদলে একাধিক ব্যবহারকারীকে লক্ষ্য করে তৈরি। এখানে একটি স্টারলিংক ডিস ইনস্টল করা হবে যা থেকে একটি নেটওয়ার্ক সুইচের মাধ্যমে অনেক ব্যবহারকারী তাদের নিজস্ব Wi-Fi রাউটার ব্যবহার করে সংযুক্ত হতে পারবেন।
এই পদ্ধতিটি মূলত অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, মফস্বল এলাকা বা কোনো কমিউনিটি যেখানে হাই-স্পিড ব্রডব্যান্ড সহজলভ্য নয়, এমন জায়গার জন্য বিশেষভাবে কার্যকর হবে।
সহায়তা পেজে যা বলা হয়েছে
স্টারলিংকের সাপোর্ট পেজে কমিউনিটি সাইট চালুর প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে:
“স্টারলিংক কিট ও নেটওয়ার্ক সুইচ ইনস্টল করার পর, হোস্ট সাবস্ক্রাইবারদের সংযুক্ত করা শুরু করতে পারবেন। প্রতিটি সাবস্ক্রাইবারকে অবশ্যই নিজেদের Wi-Fi রাউটার থাকতে হবে।”
অর্থাৎ, হোস্ট মূল Starlink ডিস ও সুইচের মাধ্যমে সংযোগ চালু করবেন, এবং তারপরে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহারকারী তাদের নিজস্ব Wi-Fi রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। শেয়ার করা গ্রাহকদেরও স্টারলিংক একাউন্ট থাকতে হবে।
👉 স্টারলিংকের নতুন চমকঃ এলো দুর্দান্ত টেকসই স্যাটেলাইট ডিশ
এটি কি চালু হয়েছে?
যদিও স্টারলিংক ওয়েবসাইটে “কমিউনিটি প্ল্যান” শব্দটি দেখা গেছে, তবে স্পেসএক্স এখনো এই সেবা সম্পর্কে কোনো প্রেস রিলিজ বা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।
এটি হতে পারে একটি পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা, যেটি এখনো অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে আছে, অথবা এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি রূপরেখা মাত্র। তবে টেক দুনিয়ার বিশ্লেষকদের ধারণা, স্পেসএক্স যেহেতু এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে, সেহেতু ২০২৫ সালের মধ্যেই হয়তো এটি নির্দিষ্ট কিছু দেশে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে পারে।
কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়
এই প্ল্যানটি বাস্তবে কেমন হবে, তা বোঝার আগে কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি—
- এক ডিশ শেয়ার করলে ইন্টারনেটের গতি কতটা কমে যাবে?
- সবাই আলাদা অ্যাকাউন্ট রাখলেও নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা কতটা নিশ্চিত থাকবে?
- সার্ভিস কনজেশন বা ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কীভাবে হবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনো অজানা, কারণ স্পেসএক্স এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
বর্তমানে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বাজারে স্টারলিংকের প্রতিযোগী হিসেবে আছে অ্যামাজনের “প্রজেক্ট কুইপার”, এবং ইউরোপের “ওয়ানওয়েব”।
তবে শেয়ারড সাবস্ক্রিপশন মডেল চালু করলে স্টারলিংক এই প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে থাকতে পারে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।
👉 স্টারলিংকের সবচেয়ে কম দামের প্যাকেজ সম্পর্কে আপনার যা জানা দরকার
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সেবার গুরুত্ব
বাংলাদেশে এখনো বহু অঞ্চল আছে যেখানে মোবাইল ইন্টারনেট ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। অনেকে আবার ফাইবার সংযোগ নিতে পারেন না শুধুমাত্র লোকেশন বা অবকাঠামোর কারণে।
এই অবস্থায় যদি স্টারলিংক বাংলাদেশে এই কমিউনিটি মডেল চালু করে এবং সরকার প্রয়োজনীয় অনুমতি দেয়, তাহলে গ্রামের স্কুল, হাট-বাজার এমনকি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোর জন্য এটি একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।
“স্টারলিংক কমিউনিটি” নামের এই নতুন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্ল্যান এখনো চালু হয়নি, তবে ওয়েবসাইটের তথ্য দেখে এটা স্পষ্ট যে স্পেসএক্স এ নিয়ে কাজ করছে।
একটি মাত্র সংযোগকে বহু মানুষের মাঝে ভাগ করে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা ডিজিটাল পৃথিবীতে বড় এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। তবে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে স্পেসএক্সের অফিসিয়াল ঘোষণার জন্য। সেই পর্যন্ত, এই সম্ভাবনাময় উদ্যোগটিকে নজরে রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।