বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রযুক্তি কোম্পানি স্পেসএক্সের স্টারলিংক। এবার তারা বাজারে নিয়ে এসেছে একটি নতুন, শক্তিশালী এবং টেকসই ইন্টারনেট ডিভাইস — স্টারলিংক পারফরম্যান্স ডিশ, যা বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে প্রতিকূল এবং চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের জন্য। এটি শুরুতেই ৪০০+ mbps ডাউনলোড স্পিডের ইন্টারনেট সংযোগ দিতে পারবে। পরে এই স্পিড গিগাবিটে উন্নীত হবে বলেই জানাচ্ছে স্টারলিংক।
নতুন এই পারফরম্যান্স কিট ডিভাইসটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে স্টারলিংকের অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে। এই পারফর্মেন্স ডিশ এমন জায়গায় কাজ করার জন্য প্রস্তুত, যেখানে সাধারণ প্রযুক্তি কাজ নাও করতে পারে। এর দাম ২০০০ ডলার হলেও এতে রয়েছে এমন কিছু সুবিধা, যা এটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তোলে।
পারফরম্যান্স ডিশটির মূল কাঠামো অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি, যা এটিকে প্রচলিত স্টারলিংক ডিশের তুলনায় অনেক বেশি টেকসই করে তুলেছে। এর স্থায়ীত্ব এবং পারফরম্যান্স এমন যে, এটি অনায়াসে তুষারাবৃত পর্বত, রুক্ষ মরুভূমি বা অতিমাত্রায় আর্দ্র বৃষ্টিঘন বনেও কার্যক্ষম থাকতে পারে।
ডিভাইসটি -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে +৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় কাজ করতে পারে। এটি ২৭০+ kph গতির বায়ুপ্রবাহেও টিকে থাকতে পারবে। ৫.২ কেজি ওজনের ডিভাইসটি IP69K রেটিংযুক্ত, অর্থাৎ এটি ধুলাবালি এবং পানি থেকে যথেষ্ট সুরক্ষিত। এটি ১০ বছর পর্যন্ত সচল থাকতে পারবে।
কর্মক্ষমতাঃ উচ্চ গতির সংযোগ, আরও উন্নত প্রযুক্তি
নতুন ডিশটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর উন্নত অ্যান্টেনা প্রযুক্তি, যা কম লেটেন্সি ও উচ্চ ব্যান্ডউইথ নিশ্চিত করে। স্টারলিংক দাবি করেছে, এই ডিশ ব্যবহারকারীরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত ডেটা স্থানান্তরের অভিজ্ঞতা পাবেন, এমনকি অত্যন্ত রিমোট লোকেশন থেকেও।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
এটি বিশেষভাবে কাজে আসবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা বাহিনী, অভিযানকারী এবং সেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য যারা জনমানবহীন অঞ্চলে অবস্থিত।
পারফরম্যান্স ডিশটির আরেকটি বড় সুবিধা হলো— এটি AC ও DC উভয় ধরনের পাওয়ার সাপোর্ট করে। অর্থাৎ আপনি চাইলে এটি সরাসরি গ্রিড থেকে চালাতে পারেন কিংবা সোলার প্যানেল বা ব্যাটারিচালিত পাওয়ার সিস্টেমেও ব্যবহার করতে পারেন।
বিশেষ করে অফ-গ্রিড এলাকায় যারা সৌরশক্তি বা জেনারেটর ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটি একটি কার্যকর সমাধান হতে যাচ্ছে।
মূল্য ও সাবস্ক্রিপশনঃ প্রিমিয়াম দামে প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা
ডিভাইসটির দাম ধরা হয়েছে ২০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় আড়াই লাখ টাকা), যা স্টারলিংকের স্ট্যান্ডার্ড রেসিডেনশিয়াল ডিশের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। স্ট্যান্ডার্ড কিটের দাম বর্তমানে ৪৭ হাজার টাকা। তবে মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি একই থাকছে। যারা শুধু ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়া চালাতে চান, তাদের জন্য এটি প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে যারা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আরও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ চান, তাদের কাছে এটি বেশ দরকারি বলেই মনে হবে।
👉 স্টারলিংক ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম – বাংলাদেশ
স্টারলিংক পারফরম্যান্স ডিশ মূলত যেসব ক্ষেত্রে উপযোগী হবে
- যারা চূড়ান্তরকম টেকসই স্টারলিংক ডিশ চাচ্ছেন এবং বেশি খরচ করতে রাজী আছেন
- পর্বত বা উচ্চতর দুর্গম এলাকা, যেখানে মোবাইল বা ফাইবার সংযোগ নেই
- মরুভূমি বা খোলা রুক্ষ অঞ্চল, যেখানে অতিরিক্ত তাপ ও ধুলাবালি বিদ্যমান
- চলমান যানবাহন, যেমন RV বা ট্রাক
- সমুদ্রগামী নৌযান বা অফশোর কার্যক্রম, যেমন গবেষণা জাহাজ বা তেল রিগ
- বনাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকা, যেখানে সোলার পাওয়ার নির্ভর অফ-গ্রিড জীবনযাপন হয়
- সামরিক, উদ্ধারকারী বা জরুরি সেবাদানকারী ইউনিট, যাদের নেট সংযোগ প্রয়োজন
- অভিযাত্রী, গবেষক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতারা, যারা রুক্ষ বা বিপদসঙ্কুল অঞ্চলে কাজ করেন
- দূরবর্তী নির্মাণ সাইট, খনি, বা প্রকল্প এলাকা যেখানে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বসানো কঠিন বা ব্যয়বহুল
👉 স্টারলিংক দিচ্ছে বিনামূল্যে হার্ডওয়্যার (তবে সবার জন্য নয়!)
স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী সাশ্রয়ী মূল্যের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্টারলিংক চালু করেছিলেন। ইতোমধ্যে এটি ১৩০টিরও বেশি দেশে/অঞ্চলে চালু হয়েছে এবং এদের ৭০০০-এর বেশি স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে। বাংলাদেশেও স্টারলিংক সেবা চালু রয়েছে।
এই নতুন পারফরম্যান্স ডিশ স্টারলিংকের সেই লক্ষ্য পূরণে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। শুধু শহর নয়, বরং দূর্গম অঞ্চল, সামুদ্রিক রুট বা সীমানার বাহিরে থাকা গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়াই এর মূল উদ্দেশ্য।
বর্তমান যুগে ইন্টারনেট শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়— এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা এবং জরুরি সেবা চালানোর একটি অপরিহার্য উপাদান। স্টারলিংকের নতুন পারফরম্যান্স ডিশ এমন সব মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী, যারা চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে কাজ করেও অনলাইনে থাকতে চান। এই ডিভাইসটি হয়তো সকলের জন্য নয়, তবে যারা সত্যিই নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই সংযোগের সন্ধানে রয়েছেন— তাদের জন্য এটি হতে পারে দারুণ এক সমাধান।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।