আমাদের দেশের মানুষজনের মনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার নিয়ে দ্বিধার শেষ নেই। অনেক মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার এড়িয়ে চলেন। অনেকে মনে করেন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে খরচ বেড়ে যায়, সুদ দিতে হয় ইত্যাদি। কিন্তু কিছু কৌশল অবলম্বন করলে ক্রেডিট কার্ড আসলে আপনার খরচ কমিয়ে দিতে পারে; অন্তত আপনাকে অযথা বাড়তি খরচের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ড এর খরচ কমানোর কিছু কার্যকরী কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত।
অফারসমূহের সঠিক ব্যবহার
ক্রেডিট কার্ডের খরচ কমানোর সেরা উপায় হলো ক্রেডিট কার্ডের সেরা অফারসমূহের সঠিক ব্যবহার করা। শুনে মনে হতে পারে এসব অফার ব্যবহার আরো খরচ ভারি করে। কিন্তু এমন ধারণা সঠিক নয়। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন পেমেন্ট বা কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে ডিসকাউন্ট বা ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়।
অনেক ক্রেডিট কার্ড দ্বারা বছরে একটি নির্দিষ্ট এমাউন্ট/POS লেনদেন করলে বার্ষিক ফি মওকুফ হয়ে যায়, ফলে আপনার কার্ডের বার্ষিক ফি প্রদান করতে হচ্ছেনা।
আবার অনেক শপে ক্রেডিট কার্ডের জন্য বিশেষ ডিসকাউন্ট থাকে। বিভিন্ন গ্রোসারি এবং রেগুলার শপে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাওয়া যায় যা দিয়ে আপনি বিভিন্ন ডিসকাউন্ট নিতে পারবেন। এমনকি কার্ডের বার্ষিক ফি দিতে এই পয়েন্ট রিডিম করা যায়।
বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড ০% সুদে ইএমআই অফার দেয়। আপনি সেসব কার্ডের অফার ব্যবহার করলে এককালীন অনেক বড় অংকের খরচ থেকে রক্ষা পাবেন, আবার ধীরে ধীরে কিস্তি পেমেন্ট করে নিজের লাইফস্টাইল মেইনটেইন করতে পারবেন।
অটোডেবিট ফিচার চালু রাখা
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো জরিমানা বা সুদ এড়াতে অটোডেবিট ফিচার চালু রাখুন। ক্রেডিট কার্ডের বিল দেওয়ার জন্য ব্যাংক একাউন্টের সাথে কার্ডের অটোডেবিট ফিচার চালু করে রাখতে পারেন। ফলে মাস শেষে আপনার কার্ডের বিল নিজে নিজেই ব্যাংক একাউন্ট থেকে কেটে নিবে।
এতে করে আপনার কার্ডের বিল দেওয়া ভুলে যাবেন না এবং জরিমানা ও সুদ এড়াতে পারবেন। অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে কিংবা মনে না থাকার কারণে সঠিক সময়ে ক্রেডিট কার্ডের বিল প্রদান করা হয়না, যার ফলে জরিমানা গুণতে হয়। আবার অনেক সময় ঠিক সময়ে ইএমআই (কিস্তি) পরিশোধ না করার জন্য বাড়তি সুদ প্রদান করতে হয়।
এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত বাড়তি সুদ বা জরিমানা এড়াতে ব্যাংক একাউন্টের সাথে ক্রেডিট কার্ডের অটোডেবিট ফিচারটি চালু রাখা অত্যন্ত সুবিধাজনক একটি বিষয়। এভাবে আপনি অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
সাপ্লিমেন্টারি কার্ড না নেয়া
অনেক ক্রেডিট কার্ড সেবাদাতা ব্যাংক আপনাকে সাপ্লিমেন্টারী কার্ড দিতে চাইবে। অর্থাৎ, আপনার আত্নীয় বা প্রিয়জনের জন্য একটি কার্ড তারা দিতে চাইবে যার বিল আপনাকেই দিতে হবে। এই সাপ্লিমেন্টারী কার্ড আপনার ক্রেডিট কার্ডে এক্সটা চার্জ যোগ করে। এসব সাপ্লিমেন্টারি কার্ড গ্রহণ এড়িয়ে চললে অযথা কার্ড ফি এবং এসএমএস ফি প্রভৃতি থেকে রক্ষা পাবেন।
আপনার আত্মীয় বা প্রিয়জনের ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজন হলে তাদের নিজের নামে আলাদা কার্ড নেওয়াই শ্রেয়। আর বিল যদি আপনারই দিতে হয় তাহলে তো আপনার কার্ড তাদেরকে ব্যবহার করতে দিলেই হয়! অযথা সাপ্লিমেন্টারি কার্ড নিয়ে ক্রেডিট কার্ড বাবদ নিজের খরচ বাড়ানোর দরকার কী! তবে হ্যাঁ, আপনি যদি এই খরচটা বেশি মনে না করেন তাহলে আপনি সাপ্লিমেন্টারি কার্ড নিতেই পারেন।
👉 ক্রেডিট কার্ড কি ও কিভাবে পাবেন
কার্ডের বাড়তি ফিচার বন্ধ করা
আপনি চাইলে কার্ডের বাড়তি ফিচার বন্ধ রেখে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের খরচ কমাতে পারেন। যেমনঃ ইনস্যুরেন্স বন্ধ করে রাখলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের খরচ অনেকাংশে কমে যায়। যেহেতু কিছু কিছু ক্রেডিট কার্ডের ইনস্যুরেন্স প্রতি মাসে আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিলের উপর একটা পার্সেন্টিজ চার্জ করে।
আপনি ইনস্যুরেন্স না নিতে চাইলে বা না দরকার হলে বন্ধ করে দিন, তাতে ইনস্যুরেন্স কিস্তির টাকা বাঁচবে। এভাবে ছোট একটি ফিচারের সঠিক ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের খরচ কমানো সম্ভব।
রিওয়ার্ড এর পেছনে না দৌড়ানো
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে রিওয়ার্ড পয়েন্টের পেছনে দৌড়ানোর কারণে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের খরচ বেড়ে যায়। বাড়তি খরচের জন্য লোভ দেখানো এই রিওয়ার্ড পয়েন্টের ফাঁদে না পড়াই উত্তম। দিনশেষে দেখা যায় রিওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে পাওয়া লাভের চেয়ে খরচের পরিমাণ বেশি পড়ে যায়।
👉 ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড এর মধ্যে পার্থক্য কী?
যত বোনাস দেওয়া হোক না কেনো, সম্ভব হলে একাধিক ক্রেডিট কার্ড এর জন্য সাইন-আপ করা এড়িয়ে চলুন। এছাড়াও ক্রেডিট কার্ড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান না থাকলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে লাভ থেকে ক্ষতি বেশি হবে। তাই গিফট বা রিওয়ার্ড এর নামে বাড়তি খরচ থেকে দূরে থাকুন।
সঞ্চয় আলাদা রাখা
শুনতে অবাক লাগলেও সঞ্চয়ের টাকা আলাদা রাখার মাধ্যমে আপনার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আপনার সকল সঞ্চয় যদি ক্রেডিট কার্ডের সাথে যুক্ত একাউন্টে থাকে, সেক্ষেত্রে খরচের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। এটা একটা মানসিক ব্যাপার। যার ফলে অযথা খরচ বাড়তে পারে। তাই সঞ্চয়ের টাকা আলাদা একাউন্টে বা স্কিমে সুরক্ষিত রাখাই শ্রেয়। এতে ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়, আবার অযথা খরচ করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা যায়।
👉 নতুন ক্রেডিট কার্ড নেয়ার পর যে কাজগুলো অবশ্যই করবেন
ক্যাশ টাকা ব্যবহার
ক্রেডিট কার্ডে থাকা অর্থ কিন্তু এক ধরনের ভার্চুয়াল কারেন্সি, তাই এটি ব্যবহারে বাস্তব অর্থ খরচের ব্যাপারটি উপলব্ধি করা যায়না। তাই সরাসরি ক্যাশ টাকা ব্যবহার করে কেনাকাটা করে ব্যায়ের ধারণা অর্জন করার পাশাপাশি বাড়তি খরচ থেকে দূরে থাকা যায়।
ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে যেহেতু সরাসরি টাকা খরচ করা হয়না, তাই খরচের ধারণাটি বোঝা একটু কঠিন। এটা মানসিক একটা ব্যাপার। অন্যদিকে ক্যাশ টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে টাকা খরচের ব্যাপারিটি মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই ক্রেডিট কার্ডের খরচ কমাতে ক্যাশ টাকা ব্যবহার করে কেনাকাটা করা যেতে পারে। এতে অতিরিক্ত ব্যয় থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি ব্যয় সম্পর্কে সহজে ধারণা রাখা সম্ভব হয়। আরো জানুন 👉 ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডের পার্থক্য কী?
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।