আপওয়ার্কে ভুয়া ক্লায়েন্ট চেনার উপায়

আপওয়ার্ক একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম। অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করেন, পাশাপাশি অসংখ্য কাস্টমার এই ওয়েবসাইট থেকে ফ্রিল্যান্সারদের দেওয়া সেবা গ্রহণ করে থাকেন। তবে এই জনস্রোতে ফ্রিল্যান্সারদের ধোঁকা দিতে রয়েছে ফেক ক্লায়েন্ট বা ভুয়া ক্লায়েন্ট। এসব ক্লায়েন্ট কাজ করিয়ে নিয়ে অর্থ প্রদান করেনা, অর্থাৎ প্রতারণা করে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত। নিচে কিছু “রেড ফ্ল্যাগ” দেওয়া আছে যা দেখলে বুঝে নিতে হবে যে উক্ত ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করে প্রতারণার শিকার হতে পারেন।

পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড নয়

আপওয়ার্কে কোনো কাজের জন্য এপ্লাই করার আগে চেক করুন যে ক্লায়েন্টের পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড কিনা। পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড না হলে সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা শ্রেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতারক ক্লায়েন্ট তাদের পেমেন্ট মেথড ভেরিফাই করেনা, যাতে প্রতারণা করতে সুবিধা হয়। 

আপনি যদি আপওয়ার্কে নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জয়েন করে থাকেন ও কিভাবে ভেরিফাইড পেমেন্ট মেথড চিনতে হয় তা না জানেন, তবে নিম্নোক্ত উপায়ে ভেরিফাইড পেমেন্ট মেথড চিনতে পারবেনঃ

  • জব পোস্টে ক্লিক করুন
  • জব পেজ প্রদর্শিত হওয়ার পর হাতের ডানদিকে ক্লায়েন্ট সম্পর্কিত কিছু তথ্য দেখতে পাবেন
  • ভেরিফাইড পেমেন্ট মেথড আছে এমন ক্লায়েন্টের বায়ো এর টপে সবুজ রংয়ের লেখায় “payment method verified” লেখা দেখতে পাবেন
  • কোনো ক্লায়েন্টের পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড না হলে কালো রংয়ের লেখায় payment unverified সংক্রান্ত নোটিশ দেখতে পাবেন 

তবে পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড না হলেই ক্লায়েন্ট প্রতারক হবে, এমন কোনো কথা নেই। হতে পারে উক্ত ক্লায়েন্ট আপওয়ার্কে সম্প্রতি মাত্র জয়েন করেছেন। ভালো ব্যাপার হচ্ছে নতুন ক্লায়েন্ট চেনার সুযোগ রেখেছে আপওয়ার্ক। “payment method not verified” যেখানে লেখা থাকে, একই স্থান থেকেই জানতে পারবেন কোনো ক্লায়েন্ট আপওয়ার্কে নতুন কিনা।

এছাড়াও জব ফিড থেকেও ক্লায়েন্টের পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড কিনা তা দেখার সুযোগ রয়েছে। কোনো ক্লায়েন্টের পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড হলে সেক্ষেত্রে জব পোস্টে থাকা ডলার সাইন ($) সবুজ দেখাবে। যারা আপওয়ার্কে সম্প্রতি জয়েন করেছেন, তাদের জব পোস্টের নিচে ‘NEW” লেখা দেখতে পাবেন।

অহেতুক কোম্পানির প্রচার

ফেক ক্লায়েন্ট চেনার আরেকটি কার্যকরী উপায় হলো অধিকাংশ ফেক ক্লায়েন্ট তাদের কোম্পানির নাম করে অহেতুক বাড়তি প্রচারণা করে। একজন প্রতারক ক্লায়েন্ট বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশ গ্রহণ করতে পারে। যেমনঃ আপনাকে বলা হবে উক্ত ক্লায়েন্ট বড় কোনো এক কোম্পানির প্রতিনিধি ও আপওয়ার্কে তারা  শুধুমাত্র পরীক্ষা চালাতে এসেছে ট্যালেন্টের খোঁজে, এমন অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা।

একজন ক্লায়েন্টের কাজ হচ্ছে আপনাকে কাজের ব্যাপারে ঠিকমত বুঝিয়ে দেওয়া ও আপনার কাজ থেকে ঠিকমত কাজ আদায় করে নেওয়া। কোনো ক্লায়েন্ট দরকার ছাডাই তার কোম্পানি সম্পর্কে আপনাকে জানাচ্ছে মানে হতে পারে ওই কোম্পানির নাম ব্যবহার করে আপনাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই এমন ক্লায়েন্ট সম্পর্কে সাবধান থাকুন।

আবার অনেক প্রতারক ক্লায়েন্ট তাদের পেমেন্ট মেথডও ভেরিফাই করে রাখে। কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে কাজ করিয়ে নেওয়ার পর রিফান্ড রিকুয়েস্ট এর মত সমস্যায় ফেলে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে এই ধরনের ক্লায়েন্ট।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইন্টারভিউ গ্রহণ

এই টিপস অনুসরণ করে প্রতারক ক্লায়েন্ট স্পট করতে কিছুটা দূরদর্শিতার প্রয়োজন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দক্ষতার খোঁজে কোনো ক্লায়েন্ট বাড়তি সময় নিতেই পারে। তবে ধরুন কোনো সহজ কাজের জন্য পোস্ট করা হয়েছে ১সপ্তাহ আগে, কিন্তু উক্ত ক্লায়েন্ট এখনো কোনো ফ্রিল্যান্সার হায়ার করেনি, এক্ষেত্রে আপনার সময় বাচাঁতে ও নিরাপদ থাকতে অন্য পথে হাঁটাই শ্রেয়।

তৎক্ষণাৎ স্কাইপ বা হ্যাংআউট কল

শুনতে অবাক মনে হলেও কোনো ক্লায়েন্ট যদি হ্যাংআউট বা স্কাইপে মিটিং শিডিউল করে তবে এটি একটি রেড ফ্ল্যাগ হতে পারে। আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, এমন বলার কারণ কি।

এই বিষয়ে সাবধান হতে বলার কারণ হলো আপওয়ার্ক এর ইন-বিল্ট মেসেজ পেজ। আপওয়ার্ক মেসেজ পেজে অডিও কল, ভিডিও কল, মেসেজিংসহ সকল ধরনের যোগাযোগের সুবিধা রয়েছে।

কোনো ক্লায়েন্ট আপওয়ার্ক মেসেজ পেজের এতোসব সুবিধা বাদ দিয়ে আলাদা সার্ভিসে যোগাযোগ করতে চাওয়ার ব্যাপারটি অদ্ভুত নয় কি? আপওয়ার্ক মেসেজে হওয়া যোগাযোগের প্রমাণস্বরুপ কাজে আসতে পারে ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে। তাই ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে একমাত্র আপওয়ার্ক মেসেজ ব্যবহার করুন।

👉 আপওয়ার্কে বেশি বেশি ফ্রিল্যান্সিং কাজ পেতে করণীয়

কোনো জব পোস্টে এপ্লাই করার সময় ইমেইল, হ্যাংআউট আইডি বা স্কাইপ আইডি চেয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সরাসরি আপওয়ার্ক মেসেজে কথাবার্তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। আপওয়ার্ক মেসেজের বাইরে স্কাইপ বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে জব সম্পর্কিত আলাপ করে যদি প্রতারণার শিকার হন, তবে আপওয়ার্ক পরবর্তীতে কোনো ধরনের সাহায্য করবে না।

আনভেরিফাইড পেমেন্ট মেথড, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কাজের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা

প্রতারক ক্লায়েন্ট এর পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড না হওয়া স্বত্বেও আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী কাজ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোভ দেখাবে। এসব প্রতারণা কয়েকটি ধাপে ঘটে থাকে।

প্রথমত যোগাযোগের মাধ্যমে আপওয়ার্ক থেকে স্কাইপ বা অন্য কোনো মাধ্যমে পরিবর্তন করবে। এরপর আপনাকে অনেক কাজের বাহানা দেখিয়ে প্রচুর কাজ দেওয়া হবে। ধরুন, আপনি একজন ফ্রিল্যান্স কনটেন্ট রাইটার। এক্ষেত্রে আপনাকে ১০টি কনটেন্ট লিখতে দেওয়া হবে ও কাজ শেষে একেবারে পেমেন্টের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে।

👉 ফাইভার নাকি আপওয়ার্ক? কোনটি বেশি সুবিধাজনক?

কাজ শেষে যখন আপনি ক্লায়েন্টকে কাজ সাবমিট করবেন, এরপর দেখতে পাবেন উক্ত ক্লায়েন্ট আপনার সাথে যোগাযোগের সকল উপায় বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে। বেশিরভাগ প্রতারণার ক্ষেত্রে এই ধরনের বিষয় ঘটে থাকে। এই ধরনের প্রতারক ক্লায়েন্ট কোনো এক ফ্রিল্যান্সারের সাথে প্রতারণার পর আপওয়ার্কে ফেরত গিয়ে নতুন শিকার খোঁজে।

ফ্রি স্যাম্পল চাওয়া

আপওয়ার্কে নতুন ফ্রিল্যান্সারগণ অর্থের খোঁজে ঘুরতে গিয়ে ব্যাপক হারে প্রতারিত হন। কোনো ক্লায়েন্ট যদি আপনাকে কাজ প্রদান করার ক্ষেত্রে উক্ত কাজের ফ্রি স্যাম্পল খুঁজে, তাহলে বুঝতে হবে উক্ত ক্লায়েন্ট প্রতারণার প্রথম ধাপে আপনাকে জালে ফাঁসাচ্ছে।

যেহেতু কোনো কাজে এপ্লাই করার আগে আপনি ইতিমধ্যে আপনার কাজের উদাহরণ সাবমিট করেছেন, কেনোই বা কোনো ক্লায়েন্ট আবার আপনার কাছ থেকে কাজের ফ্রি সেম্পল চাইবে? এই ধরনের ক্লায়েন্ট অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফ্রিল্যান্সারদের সাথে প্রতারণা করে থাকে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,550 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *