আপনার চারপাশে এমন মানুষও পাবেন, যারা ইন্টারনেট বলতে শুধুমাত্র ফেসবুকই বোঝেন। অনেকেই রাতে ঘুমানোর আগে ফেসবুক নোটিফিকেশন ও মেসেজ চেক করে নেন, আবার ঘুম থেকে উঠেও ফেসবুকের আপডেট চেক করেন। অনেকে এতো পরিমাণ ফেসবুকে মগ্ন, যে দেখলে মনে হবে তাদের পেশাই ফেসবুক চালানো! যে ফেসবুকের একটিও নোটিফিকেশন মিস করতে চান না কেউ কেউ, সেই ফেসবুক ছেড়ে ১ বছর থাকা কি সম্ভব? আমার পরিচিত একজন আছেন, যিনি এই আপাতদৃষ্টিতে অনেকের কাছে দুঃসাধ্য এই কাজটিই করে দেখিয়েছেন। এই দীর্ঘ ১ বছর ফেসবুকের বাইরে থেকে তাঁর অনুভূতি কী? আজ আপনাদের সেই গল্প শোনাবো।
এই ভদ্রলোকের নাম রিসাত রাজিন। তাঁর অনুমতি নিয়ে এবং তাঁর সাথে আলোচনা করে আমি জেনে নিয়েছি ১ বছর ফেসবুক একাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভ রেখে রিসাত রাজিন কেমন অনুভব করছেন। তিনি সম্প্রতি ফেসবুক একাউন্ট আবার চালু করেছেন। তিনি কী অভিজ্ঞতা লাভ করলেন এতে? রিসাত রাজিন এ ব্যাপারে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।
আমার প্রশ্ন ছিল, একটানা ফেসবুকের বাইরে থাকলে ডিজিটাল আশীর্বাদপুষ্ট এই জীবন কেমন মনে হয়? রিসাত রাজিনের পয়েন্টগুলো নিম্নরূপ।
১। ‘নিশ্চিন্ত থাকা যায়’
রাজিন বলেন, ফেসবুকে লগইন না করলে দেশ-বিদেশের কোনো সমস্যার খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়না। ফেসবুকে আমরা যতটা ঘন ঘন লগইন করি, ততটা ফ্রিকোয়েন্টলি সংবাদপত্র পড়িনা, ফলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলো অতটা চোখে পড়েনা। পত্রিকায় কেমন যেনো দুশ্চিন্তার খবর বেশি পাওয়া যায়। ফেসবুকের বাইরে থাকলে এই টেনশনটা থাকেনা।
২। ‘ফেইক নিউজ পাওয়া যায়না’
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ছে অহরহ। অসংখ্য বেনামী অনলাইন পোর্টাল মিথ্যে তথ্য ছড়াচ্ছে রাতদিন। ফেসবুকে লগইন না করলে এই ফেইক নিউজ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলেই মনে করেন রাজিন।
৩। ‘ফ্রি কাজের রিকোয়েস্ট আসেনা’
রিসাত রাজিন পেশায় একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতা জুমশেপারের ডিজাইন বিভাগের প্রধান তিনি। যেহেতু কমিউনিটিতে তিনি একজন সুপরিচিত ডিজাইনার, তাই অনেকেই তাঁকে সময়-অসময়ে বিভিন্ন ডিজাইন করে দেয়ার অনুরোধ করে থাকেন। অফিসের কাজ শেষে পরিবারকে সময় দিতে পছন্দ করেন রাজিন। এই সময়ে এভাবে অতিরিক্ত কাজের অনুরোধ রক্ষা করা কষ্টসাধ্য। প্রফেশনালরা ফ্রি কাজের বেশিরভাগ অফার পান ফেসবুক থেকে। এটা বিব্রতকর। ফেসবুক বন্ধ থাকলে এতো ফ্রি কাজের অফার আসেনা।
৪। ‘সময় নষ্ট হয়না’
রিসাত রাজিন বলেন, ফেসবুকে প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। ফেসবুকে বসলে কোথা থেকে সময় চলে যায়, টের পাওয়া যায়না। সুতরাং ফেসবুকের বাইরে থেকে তাঁর সময় বেঁচেছে অনেক।
৫। ‘বিবাহিতদের জন্য সুবিধা’
বিবাহিত পুরুষরা অন্য মেয়েদের ছবিতে লাইক দিলে বা কমেন্ট করলে সেটা নিয়ে স্ত্রীর কাছে জবাবদিহির মত ঘটনাও ঘটে। যদিও এটা যে সবার ক্ষেত্রে হয় তা না। তবে এরকম ঘটনা তিনি দেখেছেন। তাই ফেসবুক বন্ধ রাখার ফলে তিনি এ ধরনের ঝুঁকির বাইরে ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন রাজিন।
৬। ‘বন্ধুবান্ধবের সাথে সম্পর্কের অবনতি’
এক বছর ফেসবুকের বাইরে থেকে রিসাত রাজিন কমিউনিটি থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশে থাকা আত্নীয় ও বন্ধুবান্ধবের সাথে কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়েছে ফেসবুকে না থাকার কারণে। ফেসবুক চালু থাকলে কমিউনিটি, আত্নীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে এই দূরত্ব সৃষ্টি হতনা বলে মন্তব্য করেন রাজিন।
৭। ‘গুরুত্বপূর্ণ খবর পাওয়া যায়না’
ফেসবুকের বাইরে থাকলে অনেক সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খবর জানা যায়না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু সম্পর্কে অন্ধকারে থাকতে হয়।
৮। ক্রিয়েটিভিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা
ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন সাইটের শেয়ারকৃত লিংক থেকে ডিজাইন ট্রেন্ড সম্পর্কে মূল্যবান ধারণা লাভ করা যায়। কিন্তু ফেসবুকের বাইরে থেকে এটা খুব কঠিন। সুতরাং ফেসবুকের বাইরে লম্বা সময় কাটানো একজন সৃজনশীল পেশাদার মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হিসেবেই দেখছেন রিসাত রাজিন।
আর এসব কথা বিবেচনা করে রিসাত রাজিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফেসবুক-বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বেড়ানো আর নয়! বরং এটা ফেইস করবেন তিনি!
আপনি একটানা কতদিন ফেসবুকের বাইরে থাকতে পারবেন?
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।