ওটিপি কোড কী? আপনার নিরাপত্তায় এর গুরুত্ব জানুন

ওটিপি বা ওয়ান টাইম পিন বর্তমানে ডিজিটাল যুগে এসে খুব প্রচলিত একটি শব্দ। যারা প্রযুক্তির দুনিয়ায় নতুন কিংবা প্রযুক্তি নিয়ে খুব বেশি জ্ঞান রাখেন না তাদের জন্য এই শব্দটির মানে অস্পষ্ট মনে হতে পারে। ওটিপি সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকার কারণেই আজকাল অনেকেই মোবাইল ওয়ালেট যেমন: বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি ব্যবহারে সহজেই প্রতারণার শিকার হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল সময়ে ওটিপি সম্পর্কে সকলেরই পূর্ণ ও স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। কেননা ওটিপি আপনার সকল ডিজিটাল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা রক্ষা করে। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা ওটিপি নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবো।

ওটিপি কী?

OTP বা ওটিপির পূর্ণ রূপ ওয়ান টাইম পিন। আমরা সকলেই জানি পিন কী। পিন বলতে সাধারণত ৪ বা এর বেশি নাম্বারের একটি নিজস্ব কোডকে বোঝানো হয় যার মাধ্যমে আপনি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অ্যাপ ও অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারেন। বিকাশ, নগদ বা এরকম মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহারে আপনাকে প্রথমেই একটি পিন সেট করে নিতে হয়। তবে এই পিনটি হয় এমন কিছু যা আপনার মনে থাকে এবং যা সাধারণত পরিবর্তন হয় না। তবে পিন জিনিসটি সবসময়েই গোপনীয়। আপনার স্মার্টফোনের পিন অন্য কেউ জেনে গেলে সহজেই আপনার ফোনে প্রবেশ করতে পারবে। তাই অন্য কাউকে পিন জানানো হয় না। 

তবে যেসব অ্যাপ ও অ্যাকাউন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর সেখানে আপনার নিরাপত্তা বাড়াতে পিন বা পাসওয়ার্ড ছাড়াও বাড়তি নিরাপত্তা প্রদান করতে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (বা টুএফএ) ব্যবহার করা হয় প্রতিবার লগইন করবার সময়। টুএফএ বলতে বোঝানো হয় টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

আপনার মূল পিন বা পাসওয়ার্ড ছাড়াও আরেকটি মাধ্যমে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করার নামই টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা টু ফ্যাক্টর ভেরিফিকেশন। এটার ক্ষেত্রে সবচেয়ে দ্রুত, সহজ এবং সাশ্রয়ী উপায় হচ্ছে ওটিপি। বিভিন্ন লেনদেনের মাধ্যম ও সামাজিক অ্যাকাউন্ট এই উপায় ব্যবহার করে আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাতে করে সহজে আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক না হয় বা আপনি প্রতারণার শিকার না হন।

ওটিপি কীভাবে কাজ করে?

আপনার মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করার মাধ্যমে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখেন। আপনার ব্যাংকের অ্যাপ বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা আপনার নাম্বার সম্পর্কে প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নেয় অ্যাকাউন্ট খুলবার সময়েই। এরপর যখন আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে চাইবেন তখন আপনার পিন বা পাসওয়ার্ড ছাড়াও একটি ওটিপি চাওয়া হয় টুএফএ চালু থাকলে। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ ও অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে এটি এমনি চালু থাকে।

ওটিপি পিনটি আপনার মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এটি ৪ ডিজিট বা তার বেশি নম্বরের হয়ে থাকে। ওটিপি পাঠানোর পর অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে সে কোডটি বসানোর স্থান থাকে। ওটিপি কোড সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে।

  • এইচওটিপি: হ্যাশ ওটিপি বলা হয় একে। এতে কোনো সময়সীমা থাকে না। প্রতিবার অ্যাকাউন্টে প্রবেশের সময় একটি কোড তৈরি হয় যা শুধুমাত্র একবার লগইন করতে প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ আবার একটি কোড তৈরী করবার আগে পর্যন্ত এই কোড দিয়ে আপনি অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবেন। এ ধরণের কোড সাধারণত যখন আপনি কোনো অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন তখন আপনার নাম্বার নিশ্চিত হতে পাঠানো হয়।
  • টিওটিপি: টাইম বেজড ওটিপি। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি কোড তৈরি হয় এই ধরণের ওটিপিতে। সাধারণত ৩ মিনিটের মতো এই কোড কার্যকর থাকে। ব্যাংকিং বা এধরণের স্পর্শকাতর অ্যাপগুলোতে লগিনের সময় বা প্রতিবার লেনদেনের সময় আপনার পরিচয় নিশ্চিত হতে এই ধরণের ওটিপি ব্যবহার হয়। নির্দিষ্ট সময় পরে নতুন ওটিপি পাঠাতে হয়।

ওটিপি কেন গোপন রাখা জরুরী?

ওটিপি পাসওয়ার্ড বা পিন হতেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। কেননা আপনার পিন বা পাসওয়ার্ড সহজেই কেউ জেনে ফেলতে পারে বা অনুমান করে নিতে পারে। তবে ওটিপি অনুমান করা বা জানা সম্ভব নয় যদি আপনি নিজে থেকে না জানান। আমাদের দেশে বর্তমানে বিকাশ বা নগদে প্রতারণা বেড়ে গিয়েছে। মূলত ওটিপি কোড জানিয়ে দেবার কারণে এই প্রতারণা ঘটছে।

বিকাশ বা যে কোনো প্রতিষ্ঠান ওটিপি কখনও মৌখিকভাবে জানতে চায় না। প্রতারকরা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এই ওটিপি কোড জেনে নেয়। অনেকে না বুঝেই কোডটি বলে দেন এই ভেবে যে আমার পিন বা পাসওয়ার্ড জানবে না। তবে পিন খুব সহজেই অন্য কোনো মাধ্যমে জেনে যাওয়া সম্ভব। আর এখানেই মূলত আমরা ভুল করে থাকি। ওটিপি সাধারণ পিন বা পাসওয়ার্ড হতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার সর্বশেষ স্তর। এটি শুধুমাত্র আপনাকেই জানানো হয়। কোনো অবস্থাতেই এটি অন্য কাউকে জানানো ঠিক নয়।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

👉 ফেসবুক টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করার নিয়ম

ওটিপি কোডের ব্যাপারে সতর্ক থাকলে আপনি যে কোনো প্রতারণা থেকে সহজেই বাঁচতে পারবেন। ওটিপি কোড শুধুমাত্র নির্ধারিত ওয়েবসাইটে নির্ধারিত বক্সেই বসাবেন। এটি কাউকে বলবেন না বা এসএমএস দেখাবেন না। এভাবে সহজেই আপনি নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারেন।

ওটিপির সঠিক ব্যবহার

ওটিপি কোড বিভিন্ন সময় আপনার দরকার হতে পারে বলে সবসময় নিজের ব্যবহার করা প্রাথমিক সিমের নম্বরটি এরকম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রদান করুন। এতে করে আপনি সহজেই ওটিপি পেয়ে যাবেন। ওটিপি রিসিভ করতে অবশ্যই ভালো মোবাইল নেটওয়ার্কযুক্ত এলাকায় অবস্থান করুন। বর্তমানে শুধু এসএমএস নয়, ভয়েস কলের মাধ্যমেও ওটিপি প্রদান করা হয়। সুতরাং ওটিপির অনুরোধ করলে কল এলে সেটি থেকে ওটিপি শুনে নোট করে রাখতে পারেন।

ওটিপি দ্রুত ব্যবহার করে ফেলুন। কিছু ওটিপির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় থাকে। সাধারণত ওটিপি এসএমএসের সঙ্গেই জানিয়ে দেয়া হয় সে ওটিপি কতটুকু সময়ের জন্য কার্যকর থাকবে। তাই সে নির্দেশনা মেনে ব্যবহার করুন। ফেক বা নকল ওটিপি মেসেজ হতে সাবধান থাকুন। কোন নম্বর থেকে ওটিপি বা তথ্য আসছে তা সম্পর্কে সবসময় নিশ্চিত হয়ে নিন। ওটিপির সঠিক ব্যবহার আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা কয়েক গুন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ওটিপি সম্পর্কে সাবধান থাকুন সবসময়।

👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন। এখানে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন কনফার্ম করুন!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *