সিমের PIN কোড এবং PUK কোড কি ও কেন দরকার (বিস্তারিত)

পিন কোড, পাক কোড, ইত্যাদি শব্দ আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। তবে এসব বিষয় আসলে কী কাজে ব্যবহৃত হয়, সেসব ব্যাপারে অনেক মোবাইল ব্যবহারকারীর কোনো ধারণা নেই। তবে পিন কোড ও পাক কোড মোবাইলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফিচার, যা সম্পর্কে সবার জানা উচিত।

চলুন জেনে নেওয়া যাক পিন কোড ও পাক কোড কিভাবে কাজ করে, আপনার কি কাজে আসতে পারে এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত।

সিম পিন কোড – SIM PIN Code

পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার, সংক্ষেপে পিন (PIN) নামে পরিচিত, এটি একটি ৪ ডিজিটের কোড (বেশিও হতে পারে)। সিম কার্ড কেনার সময় সিমের সাথে দুটি পিন কোড দেওয়া থাকে। প্রাথমিক ভাবে পিন কোড ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকেনা। আপনি যদি এই পিন ব্যবহারের ফিচারটি চালু করে দেন তাহলে ফোনে সিম প্রবেশ করানোর পর প্রতিবার ফোন চালু করলে সিম অপারেটরের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হলে সিম এর পিন প্রয়োজন হবে।

সিম পিন সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে হলে আগে সিম কার্ড সম্পর্কে জানা জরুরি। সিম কার্ড মূলত একটি ছোট চিপ যা প্লাস্টিকের সাপোর্টের সাহায্যে ফোনে ব্যবহার করা হয়। এই চিপ ব্যবহার করে মোবাইল অপারেটর ফোন নাম্বার আইডেন্টিফাই করে এবং ভয়েস ও ডাটা প্ল্যান প্রদান করে। সিমে থাকা তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করে সিম কার্ড এর এই পিন নাম্বার।

মোবাইলে থাকা সিম কার্ড এর পাসওয়ার্ড হিসেবে কাজ করে পিন কোড। অথোরাইজেশন ছাড়া সিম নেটওয়ার্কযুক্ত ডিভাইসের অ্যাকসেস যাতে অন্য কোনো ব্যক্তি না পায় তা এই পিন কোড নিশ্চিত করে। পিন কোড হলো একটি সাধারণ সংখ্যার ৪ ডিজিটের কোড, যা ফোন প্রতিবার চালু হওয়ার সময় প্রদান করতে হয়। তবে বেশিরভাগ ফোনে ডিফল্টভাবে এই ফিচারটি বন্ধ করা থাকে।

জিএসএম ফোনসমূহে পিন কোড ফোনের সাথে নয়, বরং সিম কার্ডের সাথে যুক্ত থাকে। সিম পিন ফিচার চালু করলে প্রতিবার ফোন চালু করার পর পিন কোড প্রদান করতে হয়। আর ভুল পিন কোড পরপর তিনবার প্রদান করলে সিম কার্ড লক হয়ে যায়। এই লক হওয়া মোবাইল খোলা যায় পাক কোড ব্যবহার করে।

সিমে সাধারণত দুটি পিন কোড থাকেঃ PIN 1 এবং PIN 2 , যেখানে পিন ১ সিম এক্সেস করতে সবচেয়ে বেশি দরকার হয়। অপরদিকে ফোনের ফিক্সড ডায়াল, কন্টাক্ট লিস্ট বিষয়ক হাতেগোনা কিছু ফিচারের জন্য পিন ২ ব্যবহৃত হয়। সিমের পিন কোড চার থেকে আট ডিজিটের হতে পারে।

পিন (PIN) কোড ও পাক (PUK) কোড, উভয়ই সিম অপারেটর কতৃক প্রদত্ত। একজন ব্যবহারকারী সিম এর পিন কোড পরিবর্তন করতে পারেন, তবে পাক কোড পরিবর্তন সম্ভব নয়।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

সিম এর পিন কোড ব্যবহার করা কি আবশ্যক?

প্রতিটি সিম কার্ডে পিন কোড রয়েছে, তবে পিন কোড ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক নয়। অর্থাৎ ব্যবহারকারী চাইলে পিন কোড ব্যবহার করতে পারে, আবার না ও করতে পারে। ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি গেলে সেক্ষেত্রে সিমে থাকা ব্যাক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে পিন কোড। তাই সম্ভব হলে সিম এর পিন কোড ব্যবহার করা ভালো।

অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন এর পিন কোড এর মধ্যে পার্থক্য আছে কি?

যেসব ডিভাইসে সিম কার্ড সাপোর্ট করে, তার প্রত্যেকটিতেই পিন কোড ফিচারটি কাজ করে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনও তার ব্যতিক্রম নয়। আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড, উভয় স্মার্টফোনের পিন কোড ফিচারে কোনো পার্থক্য নেই। তথা সিম এর পিন কোড ফিচারটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনে একই ভাবে কাজ করে।

পিন কোড ফোনের সুরক্ষার বাড়তি একটি পদক্ষেপ, এই ব্যাপারে তো নিশ্চিত হওয়া গেলো। এবার জানি চলুন পাক কোড কি ও এটি আসলে কী ক্ষেত্রে কাজে আসে।

সিমের PIN কোড এবং PUK কোড কি ও কেন (বিস্তারিত)

সিম পাক কোড – SIM PUK Code

পারসোনাল আনব্লকিং কি (PUK) ফোনের পিন কোড ভুলে গেলে বা হারিয়ে ফেললে পিন কোড রিসেট করতে ব্যবহৃত হয়। সিম কার্ড এর পিন কোড ভুলে গেলে বা হারিয়ে ফেললে সেক্ষেত্রে পাক কোড ব্যবহার করে সিম কার্ডের পিন কোড রিসেট করা যায়।

প্রতিটি মোবাইল ফোনেই পিন প্রটেকশন ফিচারটি বিদ্যমান। পিন সিকিউরিটি ফিচারটি চালু থাকলে ফোন চালু করার পর ৪ (অথবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশিও হতে পারে) ডিজিটের পিন কোড প্রদান করে ফোন আনলক করতে হয়, যা ছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্কে ফোন সংযুক্ত হয়না। পরপর তিনবার ভুল পিন কোড প্রদান করলে সিম কার্ড লক হয়ে যায়।

👉 ফোন অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা পেতে করণীয়

ভুল পিন কোড প্রদানের কারণে কিংবা ভুলে গেলে সেক্ষেত্রে পিন কোড রিসেট করতে পাক কোড ব্যবহার করা যায়। মূলত সিম কার্ডের প্যাকেজিংয়েই পাক কোড খুঁজে পাবেন। হারিয়ে ফেললে বা ভুলে গেলে পিন কোড রিসেট করা যাবে পাক কোড ব্যবহার করে।

অর্থাৎ পিন কোড পরপর তিনবার ভুল প্রদান করলে সিম লক হয়ে যায়। এরপর এই লক খুলতে ও নতুন পিন কোড সেট করতে পাক কোড ব্যবহার হয়। আবার পাক কোড যদি একটানা ১০বার ভুল প্রদান করা হয়, তবে সিম কার্ডটি স্থায়ীভাবে ব্লক হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় সিম রিপ্লেস করা ছাড়া উক্ত সিমের নাম্বার ব্যবহার করার আর কোনো উপায় থাকেনা।

পাক কোড হলো পিন কোড ভুলে গেলে সে সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায়। অর্থাৎ পিন কোড ভুলে গেলে তা পাক কোড ব্যবহার করে রিসেট করা গেলেও পাক কোড ভুলে গেলে বিশাল সমস্যা পড়তে পারেন। তাই সম্ভব হলে গোপন কোনো স্থানে পাক কোড সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।

👉 এন্ড্রয়েড অ্যাপ ক্লোন করে ডুপ্লিকেট অ্যাপ চালানোর কৌশল

পাক কোড হলো সিম লক হওয়া অবস্থা থেকে উদ্ধার করার অস্ত্র। ভুল পিন পরপর তিনবার প্রদানে সিম লক হয়ে গেলে পাক কোড ব্যবহার করে সিম এর লক খোলা যাবে ও পিন রিসেট করা যাবে। প্রতিটি সিম কার্ডে এই ফিচারসমূহ রয়েছে, যা সিম কার্ডের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। সাধারণত পাক কোড ৪ থেকে ৮ ডিজিটের সংখ্যা হতে পারে, যা শুধুমাত্র ভুল পিন প্রদানে ফোন লক হয়ে গেলে তবেই ব্যবহার করা যাবে পাক কোড।

PUK1 ও PUK2 কোড এর পার্থক্য

সিমে দুইটি পাক কোড পাওয়া যায়, একটি হল PUK1, অন্যটি হল PUK2 কোড। এই দুইটি পাক কোড এর কাজ হলো আলাদা দুইটি পিন কোড আনলক করা। এখানে PIN1 আনলক করতে PUK1 ও PIN2 আনলক করতে PUK2 ব্যবহার করতে হয়।

👉 সিমের পিন কোড চালু এবং পরিবর্তন করার নিয়ম (ও এর সুবিধা)

PIN1 প্রদানে ব্যার্থ হলে সিম কার্ডের সকল কার্যক্রম ব্যহত হবে। অন্যদিকে PIN1 এর অ্যাকসেস ম্যানেজের পাশাপাশি ফোন নাম্বার এর মত বিভিন্ন ফিচার ব্লক হয়ে যাবে PIN2 ভুল প্রদান করলে। ভুলে গেলে কিংবা হারিয়ে ফেললে  PIN1 ও PIN2 রিসেট করতে যথাক্রমে PUK1 ও PUK2 কোড ব্যবহার করতে হয়।

আপনি কি সিমের পিন কোড ও পাক কোড ব্যবহার করেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্টে জানান!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *