বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের লোন সম্পর্কে যেসব তথ্য আপনার জানা দরকার

চালু হয়েছে বিকাশ থেকে লোন নেওয়ার সুযোগ। যোগ্য ব্যবহারকারীগণ খুব সহজে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সিটি ব্যাংকের বিকাশ লোন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের এই ক্ষুদ্র ঝণ ব্যবস্থা দ্বারা ডিজিটাল লোনের যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।

চলুন জেনে নেওয়া যাক বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের লোন সম্পর্কে বিস্তারিত। এই পোস্টে জানবেনঃ

  • কে দিচ্ছে এই লোন?
  • লোনের পরিমাণ কত?
  • বিকাশ লোন এর সুবিধাসমূহ
  • লোনের সুদের হার কত?
  • লোন কতদিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে?
  • নির্ধারিত সময়ের আগে কিস্তি পরিশোধ করা যাবে কি?
  • নির্ধারিত সময়ের আগে লোন পরিশোধ করলে লাভ
  • বিকাশ লোন পাবেন যেসব ব্যবহারকারী
  • দীর্ঘদিন বিকাশ ব্যবহার করেও বিকাশ লোন কেন পাচ্ছেন না
  • বিকাশ থেকে লোন পেতে কি করতে হবে?

কে দিচ্ছে এই লোন?

সিটি ব্যাংক ও বিকাশ একজোট হয়ে প্রদান করছে এই লোন। মূলত সিটি ব্যাংকের সহায়তায় এই ডিজিটাল ক্ষুদ্র ঝণ ব্যবস্থা চালু করেছে বিকাশ। জামানত ছাড়াই লোনের জন্য অর্থ সরবরাহ করছে সিটি ব্যাংক। আর এই লোন দেওয়া হচ্ছে বিকাশের মাধ্যমে। শুধুমাত্র বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে, কোনো ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া বেশ সহজে লোন নিতে পারবেন উপযুক্ত বিকাশ ব্যবহারকারীগণ। ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে শুরুর পর ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুবিধাটি চালু করা হয়

সিটি ব্যাংকের এই বিকাশ লোনের পরিমাণ কত?

বিকাশ থেকে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে লিমিটেশন রয়েছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ লোন হিসেবে নেওয়া যাবে। একজন ব্যবহারকারী সর্বনিম্ন ৫০০টাকা হতে সর্বোচ্চ ২০,০০০টাকা পর্যন্ত এই ডিজিটাল ন্যানো লোন নিতে পারবেন। লোন হিসেবে নেওয়া এই অর্থ বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্সে যুক্ত হবে।

একজন গ্রাহক চাইলে এই টাকা সেন্ড মানি বা ক্যাশ আউট করতে পারবেন। অর্থাৎ বিকাশের মাধ্যমে প্রাপ্ত এই লোনের অর্থ সাধারণ বিকাশ ব্যালেন্সের মত ব্যবহারের সম্পূর্ণ সুযোগ পাবেন একজন বিকাশ লোন গ্রহণকারী। উল্লেখ্য যে, একজন গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ একটি লোনই নিতে পারবেন।

বিকাশ লোন কেনো নিবেন?

বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে ডিজিটাল ন্যানো লোন পাওয়া যাবে তাৎক্ষণিক। কোনো আলাদা কাগজপত্র বা ব্যাংকিং ফি এর দরকার হচ্ছেনা এই লোন পেতে। সিটি ব্যাংকের এই লোন পেতে লাগবেনা কোনো ব্যাংক একাউন্ট বা জামানত। ডিজিটাল ক্ষুদ্রঝণের পথে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে গেলো বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের এই সেবা দ্বারা।

আবার গ্রামেগঞ্জে লোন নিতে প্রয়োজন হচ্ছেনা নমিনি ও জমিদারের। সরাসরি বিকাশ অ্যাপ থেকে লোন নিতে পারছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের উপযুক্ত বিকাশ ব্যবহারকারীগণ। এছাড়াও চড়া সুদের হার না থাকায় বিকাশ লোন পরিশোধে সুবিধা হবে গ্রাহকদের।

লোনের সুদের হার কত?

বিকাশ প্রদত্ত লোন সিটি ব্যাংক প্রদান করে, এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক নির্দেশিত নিয়ম মেনে বাৎসরিক ৯% সুদের হার প্রযোজ্য হবে এই ডিজিটাল লোনের ক্ষেত্রে। এই সুদের হার দৈনিক ভিত্তিতে প্রযোজ্য হবে। বিকাশ অ্যাপের মধ্যে ঋণের কিস্তি ও সুদের হিসাব দেখতে পাবেন। তাই এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

লোন কতদিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে?

সিটি ব্যাংক ও বিকাশের এই লোন ব্যবস্থাতে প্রাপ্ত লোন পরিশোধ করতে হবে লোন পাওয়ার ৩ মাসের মধ্যে। বিকাশ একাউন্ট ব্যালেন্স থেকে অটো-কিস্তিতে লোন পরিশোধের সুবিধা রয়েছে। অর্থাৎ, আপনার বিকাশ একাউন্টে ব্যালেন্স থাকলে নিজ থেকেই লোনের কিস্তি কেটে নেবে বিকাশ।

আমি কি নির্ধারিত সময়ের আগে কিস্তি পরিশোধ করতে পারব?

হ্যাঁ, আপনি চাইলে কিস্তির টাকা নির্ধারিত দিনের আগেই দিতে পারবেন।

নির্ধারিত সময়ের আগে লোন পরিশোধ করলে আমার কি কোনো লাভ হবে?

লোন নেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের আগে লোন পরিশোধ করা যাবে। আর নির্দিষ্ট সময়ের আগে লোন পরিশোধ করলে সুদের পরিমাণ কম আসার সুবিধা পাবেন ব্যবহারকারীগণ। অর্থাৎ লোনের কিস্তির অর্থ নির্ধারিত সময়ের আগে পরিশোধ করলে ইন্টারেস্ট এমাউন্ট কম হবে, ফলে অপেক্ষাকৃত কম সুদ প্রদান করতে হবে।

👉 বিকাশ পিন ভুলে গেলে রিসেট করার নিয়ম

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লোন পরিশোধ না করলে কী হবে?

যেকোনো লোন নিলে সময়মত পরিশোধ করা অত্যাবশ্যক। কারণ আপনার এনআইডি কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে যেকোনো ব্যাংক থেকে লোন নিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে সেই তথ্য জমা থাকবে। এর ফলে আপনার ক্রেডিট রেটিং তৈরি হয়। আপনার ক্রেডিট রেটিং ভালো না হলে পরে লোন পেতে সমস্যা হবে। এমনকি আপনার যদি ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলেও ক্রেডিট কার্ডের বিল যথা সময়ে নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধ না করলে আপনার ক্রেডিট রেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সুতরাং আপনি যদি সিটি ব্যাংকের এই লোন নিয়ে তা সময়মত পরিশোধে ব্যর্থ হন তাহলে আপনার ক্রেডিট রেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে লোন পেতে সমস্যা হতে পারে। আর সেই সাথে বিকাশ ও সিটি ব্যাংককে বিলম্ব মাশুল দিতে হবে। 

নির্দিষ্ট তারিখে আপনার বিকাশ একাউন্টে লোনের কিস্তি দেওয়ার জন্য যথাযথ পরিমাণ অর্থ না থাকলে, অথবা ঐ নির্দিষ্ট দিনের আগেই কিস্তির অর্থ আপনি পরিশোধ না করলে বিলম্ব ফি প্রযোজ্য হবে। এই বিলম্ব ফি এর হার লোনের পরিমাণের উপর বার্ষিক ২% হারে প্রযোজ্য হবে।

👉 বিকাশ একাউন্টের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য করণীয়

কারা পাবে এই ডিজিটাল লোন?

সিটি ব্যাংক কতৃক প্রদত্ত বিকাশের মাধ্যমে দেওয়া এই লোনের সুবিধা পাবেন নির্দিষ্ট গ্রাহকগণ। বিকাশ অ্যাপের লোন সেকশনে প্রবেশ করে কোনো ব্যবহারকারী লোন পাবেন কিনা তা জানতে পারবেন। 

লোন সার্ভিসটি বর্তমানে নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহকের জন্য চালু করা হয়েছে। আপনার বিকাশ একাউন্টে লোন পাবার সম্ভাবনা বাড়াতে একাউন্ট সচল রাখুন এবং একাউন্ট দিয়ে নিয়মিত লেনদেন করুন। তবে একাউন্টের অধিক ব্যবহার সবসময় লোন পাবার নিশ্চয়তা দেয়না। অর্থাৎ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক বিকাশ থেকে লোন পাবেন। 

বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের লোন সম্পর্কে যেসব তথ্য আপনার জানা দরকার

আমি বিকাশ অ্যাপ অনেক দিন থেকে ব্যবহার করছি, আমাকে লোন দিচ্ছেনা কেন?

অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন যে তাদের বিকাশ অ্যাপে দেখাচ্ছে যে তারা এই লোন পাবেন না। প্রথম কথা হচ্ছে, কোনো একজন বিকাশ গ্রাহক এই ডিজিটাল লোন পাবেন কিনা তা সিদ্ধান্ত নেবে সিটি ব্যাংক এবং বিকাশ কর্তৃপক্ষ। এখানে গ্রাহকদের আসলে কিছু বলার নেই।

অপরদিকে, প্রথম আলো পত্রিকার একটি রিপোর্ট বলছে, বিকাশ কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে “যাঁরা বিকাশ অ্যাপস ব্যবহার করছেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের লেনদেন করেন, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু তাঁরাই অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। ফলে যাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে গ্রাহক হয়েছেন, তাঁরা এখনই ঋণ পাওয়ার নয়। পাশাপাশি যাঁরা অ্যাপস ব্যবহার করছেন না, তাঁরাও ঋণ পাবেন না।”

পত্রিকাটির ঐ রিপোর্ট থেকে আরও জানা গেছে, বিকাশ অ্যাপ দিয়ে যারা একাউন্ট খুলেছেন তারাই আপাতত লোনের জন্য অগ্রাধিকার পাবেন। নিচে প্রথম আলোর সেই রিপোর্টের কিছু অংশের স্ক্রিনশট দেওয়া হল।

প্রথম আলোর রিপোর্ট থেকে আংশিক স্ক্রিনশট

কিন্তু অ্যাপ দিয়ে একাউন্ট খোলা মানেই যে আপনি লোন পাবেন তাও অনিশ্চিত। তবে বিকাশ লোন পেতে হলে অবশ্যই একজন ব্যবহারকারীকে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।

ঘরে বসে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে বেশ সহজে বিকাশ একাউন্ট খোলা যায়। সেক্ষেত্রে ন্যাশনাল আইডি কার্ড (এনআইডি) তে থাকা তথ্য প্রদান করা হয়। বেশি বেশি বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করলে বিকাশ রিওয়ার্ড পাওয়া যায়।

প্রথম আলো আরও জানিয়েছে, যারা বর্তমানে বিকাশ থেকে সিটি ব্যাংকের এই ডিজিটাল লোন পাচ্ছেন না তাদের মধ্যে উপযুক্ত গ্রাহকদের লোনের আওতায় আনার জন্য কাজ করবে বিকাশ ও সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। নিচে প্রথম আলোর সেই রিপোর্টের কিছু অংশের স্ক্রিনশট দেওয়া হল।

প্রথম আলোর রিপোর্ট থেকে আংশিক স্ক্রিনশট

অর্থাৎ, আপনার বিকাশ একাউন্ট যদি পুরাতন পদ্ধতিতে এজেন্টের কাছে গিয়ে খোলা হয়ে থাকে, তাহলে এখনই ডিজিটাল লোন হয়ত পাবেন না। তবে ভবিষ্যতে আপনার মত ম্যানুয়াল রেজিস্ট্রেশন করা উপযুক্ত গ্রাহকদেরকেও এই লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বিকাশ ও সিটি ব্যাংক। এজন্য তারা কাজ করছে, অন্তত প্রথম আলোর ঐ প্রতিবেদন এটাই বলছে। আরো জানতে বিকাশ হেল্পলাইন এ কথা বলতে পারেন অথবা লাইভ চ্যাট করতে পারেন।

বিকাশ থেকে লোন পেতে কি করতে হবে?

উপরের আলোচনা থেকে ইতিমধ্যে কারা বিকাশ লোন পাবেন সেই সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা অর্জন করেছি আমরা। এই ডিজিটাল লোন পাবেন শুধুমাত্র বিকাশ ও সিটি ব্যাংক কতৃক বাছাই করা বিকাশ গ্রাহকগণ। তবে ই-কেওয়াইসি ব্যবহার করে বিকাশ একাউন্ট ওপেন/আপডেট করলে উপযুক্ত গ্রাহকের সংখ্যা বাড়তে পারে। এছাড়া বিকাশ লোন পেতে হলে অবশ্যই একাউন্টে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার নিয়মিত লেনদেন থাকতে হবে। তবে সেই সম্পর্কে অফিসিয়ালি কিছু জানায়নি বিকাশ।

👉 বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে ডিজিটাল ন্যানো লোন নেয়ার পদ্ধতি জানতে এখানে ক্লিক করুন

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

3 comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *