অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেটসমূহ আবারো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করছে। আমাদের দেশে সম্প্রতি অফিসিয়ালি মুক্তি পেয়েছে রিয়েলমি প্যাড ও শাওমি প্যাড ৫ প্যাড, এই দুইটি ট্যাব। চলুন জেনে নেওয়া যাক রিয়েলমি প্যাড নাকি শাওমি প্যাড ৫ – দুইটির মধ্যে সেরা ট্যাব কোনটি।
ডিজাইন
ডিজাইন এর কথা বলতে গেলে রিয়েলমি প্যাড এর চেয়ে শাওমি প্যাড ৫ অবশ্যই বেশি পছন্দ হবে অধিকাংশ মানুষের। স্ক্রিন-টু-বড়ি রেশিওর কথা হিসাব করলে শাওমির ট্যাব এইদিক দিয়ে এগিয়ে থাকবে। রিয়েলমি প্যাড এর বেজেল অপেক্ষাকৃত কিছুটা বেশি, যেখানে শাওমি প্যাড ৫ এর ডিসপ্লে প্রায় অনেকটা ফ্রন্ট প্যানেল কভার করে।
মি প্যাড ৫ এর ব্যাক ডিজাইন অনেকের কাছে মি ১১ লাইট ফোনটির মত মনে হতে পারে। রিয়েলমি প্যাড ও দেখতে রিয়েলমি ফোনগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হতে পারে।
বহনযোগ্যতার প্রশ্ন এলে অবশ্যই রিয়েলমি প্যাড এগিয়ে থাকবে। ওজনে কম হওয়ায় যারা বহনযোগ্য ডিভাইস অধিক পছন্দ করেন, তাদের জন্য রিয়েলমি প্যাড বেশ সুবিধার হবে। উভয় প্যাডের থিকনেস ৬.৯মিমি হওয়ার পরও সাওমি প্যাড ৫ এর ওজন অপেক্ষাকৃত বেশি।
উভয় ট্যাব এর ব্যাক প্যানেল ও ফ্রেম প্যানেলে এলুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে শাওমি প্যাড ৫ এ রয়েছে কম্পিউটারের মত সুবিধা। শাওমি প্যাড ৫ এ কিবোর্ড সাপোর্ট রয়েছে। এছাড়াও স্টাইলাস সাপোর্ট থাকায় হ্যান্ডরাইটিং বা ড্রয়িং এর ক্ষেত্রে আলাদা সুবিধা পাওয়া যাবে সাওমি প্যাড ৫ এর ক্ষেত্রে।
ডিসপ্লে
রিয়েলমি প্যাড ও শাওমি প্যাড ৫ – দুইটি ট্যাবে আইপিএস ডিসপ্লে ব্যবহার করা হলেও সাওমি প্যাড ৫ এর ডিসপ্লে অধিক ভালো। এছাড়াও অপেক্ষাকৃত বড় স্ক্রিন রয়েছে সাওমি প্যাড ৫ এ। তবে আসল পার্থক্য রয়েছে ট্যাব দুইটির ডিসপ্লের ফিচারস এর ক্ষেত্রে।
মি প্যাড ৫ এর ১১ইঞ্চির ডিসপ্লে ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড। এছাড়াও এই ডিসপ্লে এইচডিআর ১০ ও ইমেজ কোয়ালিটি ইম্প্রুভ করতে ডলবি ভিশন সাপোর্ট করে। শাওমি প্যাড ৫ এর ডিসপ্লে রেজ্যুলিউশন ২কে, যা ওলেড ডিসপ্লের কাছাকাছি প্রায়। অন্যদিকে রিয়েলমি প্যাড এর ১০.৪ইঞ্চি ডিসপ্লের রেজ্যুলিউশন হলো ফুল এইচডি।
শাওমি প্যাড ৫ এর আরেকটি অসাধারণ সুবিধা হলো এটি স্টাইলাস সাপোর্ট করে, যার ফলে এই ট্যাব ব্যবহারের অভিজ্ঞতা হবে অসাধারণ। উভয় ট্যাবেই থাকছে ডলবি এটমোস সাপোর্টেড স্টিরিও স্পিকার।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
প্রসেসর
প্রসেসর এর ক্ষেত্রেও বেশ পার্থক্য রয়েছে দুইটি প্যাডের ক্ষেত্রে। রিয়েলমি প্যাডে ব্যবহার করা হয়েছে মিডিয়াটেক এর প্রসেসর, যেখানে Xiaomi Pad 5 এ থাকছে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর।
মিডিয়াটেক এর জি৮০ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে রিয়েলমি প্যাডে। ১৫হাজার টাকা বাজেট রেঞ্জের ফোনে এই প্রসেসরটি বেশ সুপরিচিত। বাজেট গেমারদের জন্য দারুণ একটি চিপসেট হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে এই চিপসেটটি। যারা সাধারণ ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের ট্যাবে মাঝেমধ্যে গেম খেলতে চান, তাদের জন্য রিয়েলমি প্যাড ২০হাজার টাকার মধ্যে দারুণ একটি ডিল হতে পারে।
অন্যদিকে শাওমি প্যাড ৫ এ রয়েছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৬০ প্রসেসর। পোকো এক্স৩ প্রো ফোনটিতেও দেখা মিলবে এই প্রসেসরের। মজার ব্যাপার হলো, দামে প্রায়ই একই হলেও ফোন ও ট্যাবে একই প্রসেসর ব্যবহার করেছে শাওমি। ফলে যার যে ধরনের ডিভাইস প্রয়োজন, তা পছন্দমত নেওয়ার সুযোগ থাকছে। স্ন্যাপড্রাগন ৮৬০ প্রসেসরটি সাধারণ ব্যবহার থেকে শুরু করে ভারী গেমিংয়ের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। যারা বড় স্ক্রিনে গেমিং করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য Xiaomi Pad 5 একটি আদর্শ পছন্দ।
র্যাম ও স্টোরেজ
দামে বেশি হওয়ার সুবিধার্থে বেশি র্যাম ও স্টোরেজ রয়েছে Xiaomi Pad 5 এ। তবে থাকছেনা মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা। ৬জিবি র্যাম ও ১২৮জিবি কিংবা ২৫৬জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্ট থেকে নিজের প্রয়োজনের ভ্যারিয়েন্টটি বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকছে মি প্যাড ৫ এর ক্ষেত্রে।
অন্যদিকে রিয়েলমি প্যাড ৫ এ থাকছে ৩/৪জিবি র্যাম ও ৩২/৬৪জিবি স্টোরেজ। তবে সুবিধার ব্যাপার হলো মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করে ১টেরাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে রিয়েলমি প্যাডের ক্ষেত্রে।
ক্যামেরা
ক্যামেরা ডিপার্টমেন্টে প্রায় একই ধরনের স্পেসিফিকেশন এর দেখা মিলবে দুইটি প্যাডে। তবে Xiaomi Pad 5 এ ১৩মেগাপিক্সেলের ব্যাক ক্যামেরা রয়েছে, যেখানে রিয়েলমি প্যাডে ৮মেগাপিক্সেলের ব্যাক ক্যামেরা রয়েছে। উভয় প্যাডের ফ্রন্ট ক্যামেরা হিসাবে ৮মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা রয়েছে। সাওমি প্যাড ৫ দ্বারা ৪কে ভিডিও রেকর্ড করা সম্ভব, যা রিয়েলমি প্যাডে সম্ভব নয়।
অন্যান্য হার্ডওয়্যার
রিয়েলমি প্যাড ও শাওমি প্যাড ৫ এর অধিকাংশ হার্ডওয়্যার ফিচার একই হলেও বিশাল পার্থক্য রয়েছে ডিভাইস দুইটির কানেকটিভিটি ফিচারের ক্ষেত্রে। রিয়েলমি প্যাডে ৪জি সিম ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও শাওমি প্যাড ৫ এ সেই সুবিধা থাকছেনা। সাওমি প্যাড ৫ এ ইন্টারনেট ব্যবহার করার একমাত্র মাধ্যম হলো ওয়াইফাই।
দুইটি ডিভাইসেই ডলবি এটমোস কোয়াড স্পিকার ও হাই-রেজ অডিও সার্টিফিকেশন রয়েছে। তবে রিয়েলমি প্যাডের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা এই যে এটিতে ৩.৫মি.মি. অডিও জ্যাক পোর্ট রয়েছে, যার Xiaomi Pad 5 এ নেই।
ব্যাটারি
দুইটি প্যাড এর মধ্যে Xiaomi Pad 5 এর ব্যাটারি অধিক বড়। মি প্যাড ৫ এ রয়েছে ৮৭২০মিলিএম্প ও ৩৩ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টেড ব্যাটারি। অন্যদিকে রিয়েলমি প্যাড এ রয়েছে ৭১০০মিলিএম্প এর ব্যাটারি, যা বক্সে দেওয়া ১৮ওয়াটের চার্জার দিয়ে চার্জ করতে বেশ সময় লাগবে। ব্যাটারি বড় ও চার্জিং দ্রুত হওয়ায় রিয়েলমি প্যাড এর চেয়ে ব্যাটারির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে মি প্যাড ৫।
দাম
রিয়েলমি প্যাড ও শাওমি প্যাড ৫ – ডিভাইস দুইটির মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য এদের দামে। রিয়েলমি প্যাড এর চেয়ে শাওমি প্যাড ৫ এর দাম প্রায় দেড়গুণ। তবে শাওমি প্যাড ৫ এর ফিচারের কথা বিবেচনা করলে দাম বেশি হওয়া স্বত্বেও পিছিয়ে থাকবে রিয়েলমি প্যাড।
৩জিবি র্যাম ও ৩২জিবি স্টোরেজ এর রিয়েলমি প্যাড এর দাম ২০,৯৯০টাকা। ৪-৬৪ ভ্যারিয়েন্টের রিয়েলমি প্যাডের দাম ২২,৯৯০ টাকা। অন্যদিকে শাওমি প্যাড ৫ পাওয়া যাবে দুইটি কালার ও হার্ডওয়্যার ভ্যারিয়েন্টে। শাওমি প্যাড এর ৬জিবি র্যাম ও ১২৮জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে ৩০,৯৯৯টাকায়। Xiaomi Pad 5 এর ৬জিবি র্যাম ও ২৫৬জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে ৩৩,৯৯৯টাকায়।
👉 বিভিন্ন মডেলের রিয়েলমি ফোনের দাম জেনে নিন
সুবিধা-অসুবিধা
রিয়েলমি প্যাড ও শাওমি প্যাড ৫ এর সকল স্পেসিফিকেশন তো জানা গেলো। এবার একনজরে জানি চলুন রিয়েলমি প্যাড ও শাওমি প্যাড এর উল্লেখযোগ্য সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে।
রিয়েলমি প্যাড
সুবিধা
- দামে কম
- অধিকতর কমপ্যাক্ট সাইজ
- বাড়তি এলটিই সুবিধা
- ট্যাবলেট এর জন্য অপটিমাইজড ইউআই
অসুবিধা
- অপেক্ষাকৃত দুর্বল হার্ডওয়্যার
শাওমি প্যাড ৫
সুবিধা
- বড় ব্যাটারি
- অপেক্ষাকৃত ভালো হার্ডওয়্যার
- অসাধারণ ডিসপ্লে
- অপেক্ষাকৃত ভালো ক্যামেরা
- কিবোর্ড ও স্টাইলাস সাপোর্ট
অসুবিধা
- দামে বেশি
- সেলুলার কানেকটভিটি অনুপস্থিত
আরো জানুনঃ
একনজরে রিয়েলমি প্যাড ও শাওমি প্যাড ৫
স্পেসিফিকেশন | রিয়েলমি প্যাড | শাওমি প্যাড ৫ |
ডিসপ্লে | ১০.৪ইঞ্চি | ১১ইঞ্চি |
প্রসেসর | হেলিও জি৮০ | স্ন্যাপড্রাগন ৮৬০ |
র্যাম | ৩/৪জিবি | ৬জিবি |
স্টোরেজ | ৩২/৬৪জিবি | ১২৮/২৫৬জিবি |
ব্যাক ক্যামেরা | ৮মেগাপিক্সেল | ১৩মেগাপিক্সেল |
ফ্রন্ট ক্যামেরা | ৮মেগাপিক্সেল | ৮মেগাপিক্সেল |
সফটওয়্যার | রিয়েলমি ইউআই ফর প্যাড | মিইউআই ১২.৫ |
ওজন | ৪৪০গ্রাম | ৫১১গ্রাম |
ব্যাটারি | ৭১০০মিলিএম্প | ৮৭২০মিলিএম্প |
দামের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে রিয়েলমি প্যাড ও শাওমি প্যাড ৫ – ডিভাইস দুইটিকে দুই প্রাইস ক্যাটাগরির ডিভাইস বলা চলে। যাদের মোটামুটি সাধারণ কাজের জন্য একটি ট্যাব প্রয়োজন তাদের জন্য রিয়েলমি প্যাড বাজেটের মধ্যে ভালো একটি ট্যাব। আবার যারা দেখতে সুন্দর ও ভালো স্পেসিফিকেশনের ট্যাব খুজঁছেন, তাদের জন্য রয়েছে শাওমি প্যাড ৫।
উল্লেখিত আলোচনার আংগিকে আপনার মতে রিয়েলমি প্যাড নাকি শাওমি প্যাড ৫ – কোনটি সেরা? আপনার মতামত আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।