বহুদিন ধরেই অনেকেই মঙ্গলগ্রহে চলে যেতে চান। বিষয়টি মোটেই সহজ নয়। এর বেশ কিছু মারাত্নক ঝুঁকিও রয়েছে। আপনি যদি মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করেন তবে যে ১৩ টি বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা এই পোস্টে দেখে নিন।
১। খরচ
প্রথমেই আসে সেখানে যাওয়ার খরচের ব্যপার যা এখনকার হিসাবে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। (১ বিলিয়ন = ১০০ কোটি; আর ১ ডলার = বর্তমানে প্রায় ৭৮ টাকা)। মঙ্গলের সোসাইটি প্রেসিডেন্ট রবার্ট জুব্রিন মনে করে এ খরচ কমানো সম্ভব কিন্তু খরচ কমালেও তা ৫ থেকে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে থাকবে।
২। যাত্রাপথে জীবনের ঝুঁকি
মহাকাশ যাত্রা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। যদি সবকিছু ঠিকও থাকে এর পরেও স্পেসশিপের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম যেকোনো সময় অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। পৃথিবী থেকে মঙ্গলে পৌঁছাতে প্রায় নয় মাস সময় লাগে আর এর মধ্যে লাইফ সাপোর্ট ফেইল করা অসম্ভব কিছু নয়। এর পর আছে গ্রাভিটি, রেডিয়েশন ইত্যাদির প্রভাব যার কথা নাইবা বললাম।
৩। অবতরণের ঝুঁকি
আচ্ছা ধরে নিলাম, টাকা কোন সমস্যা নয় এবং যাত্রা পথেও কোন সমস্যা হচ্ছেনা। এরপরেও সমস্যা আছে। তা হল মঙ্গলে অবতরণ বা ‘ল্যান্ড’ করা। এখনো পর্যন্ত এমন কোনও প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি যা মানুষকে নিরাপদে মঙ্গলে অবতরণ করাতে পারে। আমরা এ পর্যন্ত সব থেকে বড় যে জিনিসটি আবতরণ করাতে পেরেছি তা কোন রকমে একটি গাড়ির আকৃতির চেয়ে বড় নয়।
৪। তাপমাত্রা
এরপর আসা যাক আবতরণ-পরবর্তি ঝামেলায়। আর তা হল তাপমাত্রা। আপনি হয়ত জানেন, মঙ্গলে গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৮১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। গ্রীষ্মকালে যা হয় ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং শীত কালে হয় মাইনাস ২০০ ডিগ্রি পর্যন্ত। কেমন অনুভব হল?
৫। অক্সিজেন স্বল্পতা
মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে মাত্র ০.১৫% অক্সিজেন আছে যেখানে পৃথিবীতে পাচ্ছেন ২১ শতাংশ। মঙ্গলগ্রহের বায়ুমন্ডলের বেশিরভাগই (৯৬%) কার্বন ডাই-অক্সাইড।
৬। প্রতিকূল বায়ুমণ্ডল
মঙ্গলের হালকা-পাতলা বায়ুমণ্ডল আপনাকে সূর্যের বিভিন্ন ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে পারবেনা। অতিবেগুনী রশ্মি সহ আরও কিছু মহাজাগতিক রশ্মি আছে যা জীব এবং উদ্ভিদের কোষ নষ্ট করে দেয়।
৭। অনুর্বর মাটি
মঙ্গলে কৃষি কাজ করা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বেশ কঠিন থেকে অসম্ভব হতে পারে কেননা আমরা জানি যে ক্ষেতে ফসল ফলাতে হলে মাটিতে ব্যাক্টেরিয়া এবং ক্যামিকেলের সঠিক অনুপাত দরকার কিন্তু মঙ্গলে তো এখনও পর্যন্ত কোনো জীবনের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি! ব্যক্টেরিয়া দূরের কথা।
৮। সূর্যের আলোর অভাব
মঙ্গলে পৃথিবীর তুলনায় এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক পরিমাণ সূর্যের আলো পৌঁছায়। এর মানে হলো, সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে সেখানে বেশি সময় লাগবে।
৯। পানির অভাব
এখানে পানি পাওয়া কঠিন। যদিও মঙ্গলে এক সময় পানির সমুদ্র ছিল বলে জানা যায়, কিন্তু তা এখন ঠাণ্ডায় জমে গেছে।
১০। প্রাকৃতিক দুর্যোগ
মঙ্গলে সপ্তাহব্যাপি ধূলিঝড় হয়ে থাকে যার গতি ঘন্টায় ৩৩ থেকে ৬৬ মাইল। মাঝে মাঝে পুরো গ্রহই কয়েক সপ্তাহের জন্য ধূলিঝড়ে আচ্ছাদিত থাকে।
১১। একাকিত্ব
এতকিছুর পরেও মানুষের আরও বড় এক সমস্যা হবে সেখানে। আর তা হলো, মানুষ মঙ্গল গ্রহে এতটাই একাকিত্ব অনুভব করবে যা অন্য কোথাও দেখা যায় না।
১২। দূরত্ব
আপনি যদি পৃথিবীর কারও সাথে কথা বলতে চান তাহলে প্রতিটি কথা পৃথিবীতে পৌঁছাতে ২৫ মিনিট সময় অপেক্ষা করতে হবে। কেননা মঙ্গল আমাদের পৃথিবী থেকে ১২.৫ লাইট মিনিট দূরে অবস্থিত। আর কোনো কারণে কোনো সমস্যা হলে তো আর কথাই নেই।
১৩। শারীরিক সমস্যা
মানসিক সমস্যার পাশাপাশি আপনাকে শারীরিক সমস্যারও সম্মুখীন হতে হবে। মঙ্গলে আপনার শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ভাগের এক ভাগ হয়ে যাবে।
এতকিছুর পরেও বিজ্ঞান তো আর থেমে থাকবে না! নতুন নতুন আবিষ্কারের দিকে এগিয়ে যাবে। ভয়কে জয় করতে হবে! তো, যাবেন নাকি মঙ্গল গ্রহে?
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।