সঠিক নিয়মে ফটো এডিট করার কিছু কার্যকরী টিপস

আমাদের জীবনের সুন্দরতম মুহূর্তগুলোকে ফ্রেমবন্দী করে ধরে রাখার জন্য ফটোগ্রাফির চর্চা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখা এসব ছবিকে আরও আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন করা যায় ফটো এডিটিং এর মাধ্যমে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এডিটিং এর আদ্যোপান্ত যেমন ফটো এডিট কেন করতে হবে, কিভাবে ফটো এডিট করতে হয় কিংবা ছবি এডিট করার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ফটো এডিট কেন করবেন?

ফটো এডিটিং এর মাধ্যমে নিষ্প্রাণ একটি ছবিতেও প্রাণের সঞ্চার ঘটানো সম্ভব। একবিংশ শতাব্দীর এ সময়ে একটি ছবিকে প্রাণবন্ত করতে ফটো এডিটিং এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিচে ফটো এডিট করার বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো-

ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ 

একটি ছবি তোলার পরে অনেক সময় দেখা যায় যে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড আমরা যেমন আশা করছিলাম ঠিক তেমন পাইনি। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো ছবি এডিটিং সফটওয়্যারের ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভাল টুল। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্বলিত বিভিন্ন ট্যুল ব্যবহার করে আপনি নিখুঁত ভাবে যেকোনো ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে বিভিন্ন অবজেক্ট রিমুভ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ব্যাকগ্রাউন্ডটিই রিমুভ করতে পারবেন।

ফটো ক্রপিং এবং রিসাইজিং

অনেক সময় ছবি তোলার পরে আমরা যেই জিনিসের উপর দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই সেটির পরিবর্তে আশে পাশের বিভিন্ন বস্তু দর্শকের মনোযোগ কেড়ে নেয়। তাই যেকোনো ছবির ফ্রেমে কতটুকু দেখানো হবে সে বিষয়ে নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আকারের ছবি ভালো পারফর্ম করে থাকে। তাই ছবিকে সঠিক শেইপে আনার জন্যেও ক্রপিং ও রিসাইজিং গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে এডিটিং সফটওয়্যারের ক্রপিং ও রিসাইজিং ট্যুল অনেক অপরিহার্য একটি উপাদান।

ফটো রিটাচিং

আমরা সাধারণত বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে যে সকল ছবি দেখি সেগুলো খুবই চকচকে হয়। এর মূল কারন হলো এসব ছবিকে রিটাচিং করা হয়েছে। ফটো রিটাচিং এর মাধ্যমে বিভিন রকম দাগ, অপ্রত্যাশিত ছায়া ইত্যাদি মুছে ফেলে সাধারণ একটি ছবিকে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করা যায়। ফটো রিটাচিং এর মাধ্যমে আকর্ষণীয় একটি ছবি তৈরি করে সহজেই গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা সম্ভব। তাই যারা নতুন ফটোগ্রাফি শিখছেন তাদের জন্য এই পয়েন্টটিতে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

কালার ঠিক করা 

চমৎকার একটি ছবি তোলার ক্ষেত্রে সঠিক কালার বা রঙ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি ছবি ফ্রেমবন্দী করার পর এমন হতেই পারে যে ছবিটিতে আলোকসজ্জা ঠিক নেই বা সহজ কথায় ছবিটি বেশি সাদা কিংবা বেশি অন্ধকার দেখাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ফটো এডিটিং সফটওয়্যারের কালার ঠিক করার টুল ব্যবহার করে আপনি ছবিটিতে একটি চমৎকার আলোকসজ্জা ফুটিয়ে তুলতে পারেন।

অপ্রত্যাশিত অবজেক্ট মুছে ফেলা 

কোনো একটি ছবিতে অপ্রত্যাশিত অবজেক্ট থাকলে ছবিটিতে প্রধান লক্ষ্যবস্তুর উপরে মনোযোগ সম্পূর্ণরূপে থাকবে না। কিন্তু অপ্রত্যাশিত অবজেক্ট মুছে দিলে প্রধান লক্ষ্যবস্তুর উপরেই সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকবে। তাই দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে এই উপায় অনেক বেশি সহায়তা করে।

সেরা কিছু ফটো এডিটিং টিপস 

ফটো এডিটিং করার জন্য কিছু ছোট খাটো টিপস মনে রাখতে পারলে আপনি অল্প সময়েই যেকোনো ছবিকে প্রাণবন্ত করে দিতে পারবেন। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখলে কার্যকরীভাবে ফটো এডিট করা সম্ভব-

ক্রপিং এবং ক্লিনিং আপ ইমেজ

যেকোনো ছবি থেকে অপ্রাসঙ্গিক অবজেক্টগুলোকে সরিয়ে ফেললে মূল বিষয়বস্তুকে আরও কার্যকরী উপায়ে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। যেহেতু আমাদের ক্যানভাসের সাইজ সীমাবদ্ধ, তাই প্রতি ইঞ্চি জায়গায় সঠিক বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করার মাধ্যমে যেকোনো ছবির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। ছবিকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে আরেকটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে অপ্রত্যাশিত দাগ মুছে ফেলা। বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ফটো এডিটিং সফটওয়্যারে ক্লোন স্ট্যাম্পিং/স্পট হিলিং নামে দাগ মুছে ফেলার টুল রয়েছে। 👉 ফটো ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করার অ্যাপ

হোয়াইট ব্যালেন্সের ভারসাম্য ঠিক রাখা

যদি কোনো ছবির কালার আপনার কাছে মনে হয় যে ছবিটির সাথে মানানসই নয় তাহলে আপনি হোয়াইট ব্যালেন্স কমিয়ে কিংবা বাড়িয়ে এটি ঠিক করতে পারেন। JPG কিংবা JPEG ফাইল যেহেতু র ফাইলের তুলনায় কম ডিটেইলস ক্যাপচার করে, তাই JPG কিংবা JPEG ফাইলের হোয়াইট ব্যালেন্স এডজাস্ট করে তুলনামূলক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

photo edit

👉 ফটো ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করার অ্যাপ

এক্সপোজার এবং কন্ট্রাস্ট এডজাস্ট করা 

এক্সপোজার হচ্ছে মূলত ছবির আলোকসজ্জা ঠিক করার প্রক্রিয়া। এক্সপোজার বাড়িয়ে ছবিটিকে উজ্জ্বল এবং কমিয়ে ছবিটিকে তুলনামূলক অন্ধকার করা যায়। ছবির বিষয়বস্তুর সাথে মানানসই আলোকসজ্জা রাখার জন্য এক্সপোজার ব্যবহার করা হয়। কন্ট্রাস্ট হলো মূলত কোনো ছবির আলোকসজ্জার একটি রেঞ্জ। কন্ট্রাস্ট বাড়াতে থাকলে ছবি অন্ধকার হতে থাকে এবং কমাতে থাকলে উজ্জ্বল বা সাদা হতে থাকে।

স্যাচুরেশন এডজাস্ট করা 

হোয়াইট ব্যালেন্স ঠিক করার পর, ছবির রঙকে আরও পরিশুদ্ধ (বাস্তবসম্মত ও উজ্জ্বল) করা যায় স্যাচুরেশন ঠিক করার মাধ্যমে। স্যাচুরেশন বাড়ানোর মাধ্যমে রঙের গাঢ়ত্ব বাড়ানো হয়।

শার্পনেস ঠিক করা 

শার্পনেসের মাধ্যমে একটি ছবি সাধারণ ছবির তুলনায় অধিক আকর্ষণীয় ও পরিশুদ্ধ দেখায়। শার্প করার মাধ্যমে ছবির ডিটেইলস আরও বৃদ্ধি করা যায়। বেশ কিছু ফটো এডিটিং অ্যাপ্লিকেশনে ছবি শার্প করার এই টুলটি থাকে। শুরুতে শার্পনেস ৫০ সেট করে, প্রয়োজনমতো নাম্বারটি বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে যেকোনো ছবিকে পারফেক্ট একটু লুক দেওয়া যায়। 👉 ফটোগ্রাফি করে আয় করার ৯টি মাধ্যম

শেষ ছোয়া 

ছবি এডিটিং শেষ করার পর একটু বিরতি নিয়ে আবার দেখুন আপনার কাছে সবকিছু ঠিকঠাক লাগছে কি না। যদি আরও কোনো কিছু এডিট করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে প্রয়োজনমতো আবার এডিট করে ছবিটিকে এক্সপোর্ট করতে হবে। যেহেতু র ফাইলের সাইজ অনেক বড় হয়, তাই এক্সপোর্ট করার ক্ষেত্রে JPG বা PNG হিসেবে ছবিকে সেইভ করা বুদ্ধিমানের কাজ, এতে ছবিটি ইমেইল কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে শেয়ার করা সহজতর হবে।

ফটো এডিটিং আপনার নিজস্ব ব্যবহারের পাশাপাশি প্রোফেশনাল লাইফেও আপনাকে অনেক সহায়তা প্রদান করবে। আপনি চাইলে আপনার নিজের ক্যারিয়ার এটির উপর বেইজ করে বানাতে পারবেন। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে শুরু করে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসেও এর চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। আর সব কিছু যখন ডিজিটালের দিকে যাচ্ছে তখন এর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে এটাই আশা করা যায়।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,551 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *