ফেসবুক মেটাভার্স এর নতুন ফিচারগুলো জেনে নিন

সম্প্রতি নিজেদের কোম্পানির কর্পোরেট নাম পরিবর্তন করে “মেটা” রেখেছে ফেসবুক। তারই ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তি বিশ্বে “মেটাভার্স” শব্দটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফেসবুকের এই রিব্র‍্যান্ডিংয়ের পেছনে মূল কারণ হলো সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সাইটটিকে ভবিষ্যতের উপযোগী করে তোলা।

ফেসবুক সিইও মার্ক জাকারবার্গ অক্টোবরের ২৮ তারিখ একটি অনলাইন ইভেন্টে জানান, এখন থেকে মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড এর অধীনে চলে আসবে ফেসবুক এর সকল প্রোডাক্ট। সংক্ষেপে মেটা (Meta) নামে ডাকা হবে এই প্যারেন্ট কোম্পানিকে। নিল স্টিফেনসন তার উপন্যাস, “Snow Crash” এ ১৯৯২সালে প্রথম “মেটাভার্স” শব্দটি ব্যবহার করেন।

জাকারবার্গ ও তার টিম মিলে একাধিক ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে একত্র করে কিভাবে মেটাভার্স প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার চেষ্টায় আছেন। তবে ব্যক্তিগত ডাটার সুরক্ষা নিয়ে চিন্তায় আছেন অনেকেই। চলুন জানার চেষ্টা করি ফেসবুক মেটাভার্স কি, মেটাভার্স দ্বারা কি করা হবে, ফেসবুক কি সম্পূর্ণভাবে মেটাভার্স এর অংশ হয়ে যাবে, মেটাভার্স এর ভবিষ্যত কি – ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর।

ফেসবুক মেটাভার্স কি?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে ইন্টারনেট এর ৩ডি ভার্সনকে বলা হচ্ছে মেটাভার্স। মার্ক জাকারবার্গ এর ভাষ্যমতে স্ক্রিনে দেখার পরিবর্তে ভার্চুয়াল পরিবেশে সরাসরি প্রবেশের সুযোগ প্রদান করবে এই মেটাভার্স।

অসংখ্য আন্তঃসম্পর্কিত ভার্চুয়াল কমিনিউটির সংমিশ্রণ হবে মেটাভার্স, যেখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, অগুমেন্টড রিয়েলিটি গ্লাস, স্মার্টফোন অ্যাপ বা অন্য ডিভাইস ব্যবহার করে দেখা করা, কাজ করা বা খেলাধুলা করা যাবে। এছাড়াও অনলাইন শপিং বা সোশ্যাল মিডিয়ার মত ইন্টারনেটের জনপ্রিয় অংশসমূহ মেটাভার্সে যুক্ত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে বলে জানান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ভিক্টোরিয়া পেটরক।

তিনি বলেন, “এটি (মেটাভার্স) হলো যোগাযোগের একটি নতুন মাধ্যম যা ব্যবহার করে একাধিক ইউনিভার্স একইসাথে কানেক্টেড থাকবে, যার ফলে বাস্তব জীবন ও ভার্চুয়াল লাইফের মধ্যে কোনো তফাৎ থাকবেনা।”

কেমন হবে মেটাভার্স?

কেমন হবে মেটাভার্স?

মেটাভার্স একটি নতুন ধরনের প্রযুক্তি যা বাস্তব জীবন ও ভার্চুয়াল জীবনকে এক করে দিবে, এটা তো বুঝা গেলো। কিন্তু আসলে মেটাভার্স প্রয়োগ ও কার্যকারিতা কতটুকু, চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ভার্চুয়াল কনসার্টে যাওয়া, অনলাইনে ভ্রমণ করা, আর্টওয়ার্ক দেখা বা তৈরী করা, কিংবা ডিজিটাল ক্লোথিং কেনা বা পড়ে দেখার ক্ষেত্রে মেটাভার্স এর ব্যবহার সম্ভব। এছাড়াও করোনা ভাইরাসের কারণে চলমান মহামারীরতে ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম এর ক্ষেত্রে বেশ কাজে আসবে মেটাভার্স। ভিডিও কলের পরিবর্তে কো-ওয়ার্কারদের সংগে ভার্চুয়াল অফিসে জয়েন করতে পারবেন কর্মচারীগণ।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

বেশ কিছুদিন আগে কোম্পানির জন্য অকুলাস ভিআর চালিত মিটিং সফটওয়্যার, হরাইজন ওয়ার্করুমস লঞ্চ করে ফেসবুক। এই ভিআর হেডসেট ব্যবহার করে নিজের এভাটার ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ওয়ার্কপ্লেসে প্রবেশ করা যাবে।

তবে এখনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো কিভাবে একে অপরে সাথে যুক্ত হবে, টেক কোম্পানিগুলোর সেই সমাধান বের করতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে এই নতুন রিয়েলিটি নিয়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও ফেসবুক বা মেটাকে সফলের তালিকায় যুক্ত করা যায়।

কোম্পানির নতুন নাম ঘোষণার একই লাইভ-স্ট্রিম ইভেন্টে মেটাভার্সে থাকা নিজের একটি এভেটার এর সাথে কথা বলেন মার্ক জাকারবার্গ। এভেটার এর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে নিজেদের ডিজিটাল সংস্করণ বিভিন্ন স্থান ও সময়ে যেতে পারবে খুব সহজে। তবে মেটাভার্স এর নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি নিয়ে বেশ সাবধানে থাকতে হবে বলে ঐ লাইভ ইভেন্টে জানান জাকারবার্গ।

ফেসবুক ও মেটাভার্স

সমালোচকগণ ধারণা করছেন নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে চলমান বিভিন্ন দ্বন্দ্বকে ধামাচাপা দিতে প্রতিষ্ঠান এর নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। কিছুদিন আগে এক প্রাক্তন কর্মী বেশ কিছু সেনসিটিভ ডকুমেন্ট লিক করে দিলে সম্প্রতি ফেসবুক এর বিরুদ্ধে এন্টি-ট্রাস্ট অভিযোগ আনা হয়।

👉 ফেসবুক কোম্পানির নাম পরিবর্তন – আসছে নতুন অনেক কিছু

ফেসবুক এর পাশাপাশি মেটাভার্স নিয়ে কাজ করছে মাইক্রোসফট ও চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, এনভিডিয়া। এনভিডিয়া’র অমনিভার্স প্ল্যাটফর্ম এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, রিচার্ড কেরিস বলেন, “ইন্টারনেট এর মত অনেক কোম্পানি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ও পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে। ইন্টারনেটে যেমন এক সাইট থেকে আরেক সাইটে সংযোগ থাকে ঠিক তেমনি একটি মুক্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে এক কোম্পানির তৈরী ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করতে পারবেন অন্য কোম্পানির ওয়ার্ল্ডে থাকা ব্যবহারকারীগণ।”

পিছিয়ে নেই ভিডিও গেম কোম্পানিসমূহও। জনপ্রিয় গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, এপিক গেমস ইতিমধ্যে তাদের মেটাভার্স তৈরীর প্রতিশ্রুতিতে ১বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও জনপ্রিয় ভিডিও গেম, রোবোলক্স এ যেকেউ শেখা, খেলা, তৈরী বা যোগাযোগ এর ৩ডি এক্সপেরিয়েন্স পেতে পারেন।

মেটাভার্সে প্রবেশ করতে আগ্রহী কনজ্যুমার ব্র‍্যান্ডসমুহ। ইতালিয়ান ফ্যাশন হাউস গুচি জুন মাসে রোবোলক্স এর সাথে কোলাবোরেশনের মাধ্যমে গেমে ডিজিটাল একসেসরিজ বিক্রি করে। মেটাভার্সে প্রবেশের পদক্ষেপ হিসেবে ডিজিটাল টোকেন বিক্রি করেছে কোকা-কোলা ও কসমেটিকস কোম্পানি “ক্লিনিক”।

👉 ফেসবুক থেকে আয় করার উপায়

অর্থাৎ শুধুমাত্র ফেসবুক নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরী বিভিন্ন ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ও পরিবেশ হতে যাচ্ছে মেটাভার্স এর অংশ। তবে এক প্রতিষ্ঠানের মেটাভার্স অন্য প্রতিষ্ঠানের মেটাভার্স এর সাথে সংযুক্ত হওয়ার ব্যাপারটি সম্পর্কে এখনো অনেক অগ্রগতি বাকি রয়েছে।

ফেসবুক মেটাভার্স এর ফিচারসমুহ

ফেসবুক এর পরিকল্পিত মেটাভার্স এর মাধ্যমে একাধিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মেটাভার্স এর মাধ্যম কি কি করা সম্ভব হবে।

হরাইজন হোম

হরাইজন হোম

হরাইজন হোম হলো একটি ভার্চুয়াল ঘরের মত, যেখানে মেটাভার্স এর অন্যান্য ব্যবহারকারীগণ বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন, একসাথে আড্ডা দিতে পারবেন, ভিডিও দেখতে পারবেন ও একই সাথে গেম খেলতে পারবেন।

ফিটনেস

ইতিমধ্যে অনেকেই ভিআর ব্যবহার করে এক্সারসাইজ করে থাকেন। আগামী বছর নতুন একসেসরিজ আনবে ফেসবুক এর প্যারেন্ট কোম্পানি, মেটা, যার মাধ্যমে ভার্চুয়ালি ফিটনেস বজায় রাখা আরো সহজ হবে।

ভার্চুয়াল ওয়ার্কপ্লেস

ভিআর ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ওয়ার্কপ্লেসের কথা আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। মেটাভার্স ওয়ার্কপ্লেসে ফেসবুক একাউন্ট ছাড়াই আলাদা প্রফেশনাল একাউন্ট দিয়ে লগিন করা যাবে। যারা বাসা থেকে কাজ করেন তারা তাদের মেটাভার্স ওয়ার্কপ্লেসে ভার্চুয়ালি উপস্থিত হয়ে কাজ করতে পারবেন।

👉 ফেসবুক মেটাভার্স নিয়ে ৫টি জনপ্রিয় প্রশ্নের উত্তর জানুন

গেমিং

মেটাভার্স এর বিশাল একটি অংশ হতে যাচ্ছে গেমিং। কানেক্ট কিনোট এর সময় ফেসবুক এর গেমিং প্ল্যাটফর্ম, কুয়েস্ট এ বিট সেবার গেমটি ১০০মিলিয়ন ডলার আয়ের কথা জানান জাকারবার্গ। এছাড়াও কুয়েস্ট এর আপকামিং ভার্সনে রকস্টার গেমস এর জনপ্রিয় গেম, জিটিএ স্যানএন্ড্রিয়েস আসতে যাচ্ছে।

ভিআর মেসেঞ্জার কল

মেসেঞ্জার অ্যাপে বেশকিছুদিন আগেই ভিআর সাপোর্ট এর ঘোষণা দেয় ফেসবুক। হেডসেট ব্যবহার করে বন্ধুদের কুইক মেসেজ পাঠানো যাবে। এছাড়াও ভিআর এর মাধ্যমে মেসেঞ্জার অডিও কল আসতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। সাপোর্টেড প্ল্যাটফর্মগুলোতে একই সাথে ভিআর হেডসেট ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারবেন ব্যবহারকারীগণ।

এই মেটাভার্স ধারণা নিয়ে বেশ আশাবাদি ফেসবুক এর প্যারেন্ট কোম্পানি, মেটা। এখন দেখার বিষয় হয়েছে নিজেদের লক্ষ্যে তারা সফল হয়ে পারে কি না। আপনি মেটা নিয়ে কী ভাবছেন? মন্তব্যের ঘরে জানান সবাইকে!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

1 Comment

  1. Nazmun nahar Reply

    Bachader jonno kotota safety hobe ..Karen ekhon porasuna sob online e …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *