আপনি যদি এই পোস্টটি ওপেন করে থাকেন, তাহলে আমি চোখ বন্ধ করেই ধরে নিচ্ছি যে আপনার একটি স্মার্টফোন আছে। যদি না থাকে, তাহলে আপনার পরিবারের কারও না কারও তো নিশ্চয়ই আছে! যদি তাও না থাকে, নিকট ভবিষ্যতে তো অবশ্যই হবে, তাইনা? কেননা স্মার্টফোন ছাড়া আজকাল জীবনযাপন করা বেশ কঠিন। কিন্তু এই ফোনের কিছু সেটিংস যদি আপনি চালু করে না রাখেন, তাহলে হয়ত এর জন্য আপনাকে কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে। আমি চাই আমার পাঠক/পাঠিকারা চমৎকার একটা ডিজিটাল লাইফ উপভোগ করুন। আর সেই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় আজকের এই পোস্ট। চলুন জেনে নিই আপনার নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে স্মার্টফোনে যে ফিচারগুলো আপনার এখনই চালু করে নেয়া উচিত।
১. সিম পিন কোড
অনেকে ভয়ে সিমের পিন কোড চেক ফিচার চালু রাখতে চান না। কারণ সাধারণত ৩ বার ভুল পিন কোড দিলে এরপর অন্য একটা সিক্যুরিটি কোড (পাক কোড) ছাড়া সিম কার্ড আর চালু করা যায়না। সিমের সাথে যে কাগজপত্র দেয়া হয় সেখানে এই পাক কোড লেখা থাকে। সিমের পিন কোড পরিবর্তন করে এরপর যদি পিন কোড ফিচার চালু করে দেন, তাহলে প্রতিবার ফোন চালু করার সময় পিন কোড এন্টার করতে হবে। অন্যথায় ঐ সিম চালু হবেনা। সুতরাং এ অবস্থায় আপনার ফোন যদি হারিয়ে যায়, তখন সিম কার্ড কেউ ব্যবহার করতে পারবেনা। কারণ এর পিন কোড শুধু আপনিই জানেন। পিন কোড ফিচার চালু করলে সেই সিম কোনো ফোনেই আর চালু হবেনা- যতক্ষণ পর্যন্ত সঠিক পিন এন্টার না হবে। ৩ বার ভুল পিন ও সাধারণত ১০ বার ভুল পাক কোড দিলে সেই সিম স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং এই গুরুত্বপূর্ণ ফিচারটি চালু করে নিলে মোবাইলের অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারের হাত থেকে রেহাই পাবেন।
২. স্টোরেজ এনক্রিপশন
স্মার্টফোন যদি আপনি পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করেও রাখেন, তারপরেও বিশেষ উপায়ে এটা থেকে আপনার ছবি, ভিডিও ও যাবতীয় সংরক্ষিত ডেটা উদ্ধার করা সম্ভব। অনেককেই দেখেছি ফোন হারানো/খোয়ানোর পরে ‘ব্যক্তিগত’ ডেটা ফাঁস হওয়ার ভয়ে হাহাকার করছেন। কিন্তু স্ক্রিন লকের সাথে সাথে আপনি যদি ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ এবং মেমোরি কার্ড- উভয় স্টোরেজই এনক্রিপ্ট করে রাখেন, তাহলে এনক্রিশন/ডিক্রিপশন পাসওয়ার্ড ছাড়া ঐ ফোন এবং মেমোরি কার্ডের ডেটা উদ্ধার করা সম্ভব হবেনা। প্রাইভেসির জন্য এনক্রিপশন একটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি, যা বাইপাস করে ডেটা উদ্ধার করা সাধারণ মানুষের কাজ নয়। তবে কোনো কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে এনক্রিপশন বাইপাসের কৌশল থাকতে পারে, যা আসলে কোনো কিছুর মাধ্যমেই বিরত রাখা সম্ভব নয়।
৩. জিপিএস ট্র্যাকিং
ফোনের ডেটা ও লোকেশন/জিপিএস চালু থাকলে আপনি ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ জাতীয় ফিচার ব্যবহার করে ফোন কোথায় আছে তা ম্যাপে দেখতে পারবেন। তারপর আপনি চাইলে এর মধ্যে উচ্চশব্দে রিং বাজাতে পারেন এবং/অথবা সেটটি লক করে কিংবা এর ডেটা মুছে ফেলতে পারবেন। কিন্তু চোর যদি আপনার ফোন ফ্যাক্টরি রিসেট দিয়ে দেয়, তাহলে জিপিএস ট্র্যাকিং আর কাজ করবেনা।
৪. অ্যাপ লকার
আপনার ফোন যদি মাঝেমধ্যে অন্যদের হাতেও দিতে হয়, তাহলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সুরক্ষার জন্য অ্যাপ লকার ব্যবহার করতে পারেন। শাওমি সহ কিছু কিছু ফোনের (আইফোন সহ) সেটিংসে অ্যাপ লকার ফিচার দেয়াই আছে যার মাধ্যমে ফোনের বিভিন্ন ফাংশন লক করে রাখতে পারবেন যা পাসওয়ার্ড/প্যাটার্ন/ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছাড়া ওপেন করা যাবেনা। এছাড়া থার্ড পার্টি কিছু অ্যাপও আছে যার মাধ্যমে এই সুবিধাটি চালু করা যায়। সুতরাং এর মাধ্যমে আপনি আপনার প্রাইভেসির যথাযথ সুরক্ষা করতে পারবেন।
৫. অনলাইনে কনটাক্ট সিনক্রোনাইজেশন
আপনার ফোনের কনটাক্টস, মেসেজ প্রভৃতি অনলাইনে সিনক্রোনাইজ করে রাখুন। প্রায় প্রতিটি ফোন নির্মাতা কোম্পানিই এই সেবাটি দিয়ে থাকে যার মাধ্যমে অনলাইনে ফোন নম্বর, মেসেজ, নোটস প্রভৃতি সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এছাড়া এন্ড্রয়েডের জন্য ব্যবহার করতে পারেন গুগল কনটাক্টস অ্যাপ। আর আইফোনের জন্য আইক্লাউড তো আছেই।
৬. ক্লাউড ফাইল স্টোরেজ
ফোন থেকে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, ডকুমেন্ট প্রভৃতি অনলাইনে আপলোড করে রাখতে পারেন। পরে ফোনের কোনো সমস্যা হলে আপনি আপনার সব ডেটা আবার অনলাইনে এক্সেস করতে পারবেন। এজন্য গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারেন।
👉 সিমের PIN কোড এবং PUK কোড কি ও কেন দরকার
৭. অনলাইনে ফটো ও ভিডিও আপলোড
ফোনের স্টোরেজ যতই হোক, একদিন তা ঠিকই ফুরিয়ে যাবে (অর্থাৎ পূর্ণ হবে)। তখন যাতে কিছু চিরতরে হারাতে না হয়, সেজন্য অনলাইনে ফটো এবং ভিডিও সিনক্রোনাইজ করে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে গুগল ফটোস এবং/অথবা ফ্লিকার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। গুগল ফটোসে বিনামূল্যে আনলিমিটেড ফটো ও ভিডিও আপলোড করা যায় (রিসাইজকৃত)।
ওয়াইফাই চালু করলে গ্যালারি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এগুলো অনলাইনে আপলোড হয়ে যাবে, যার প্রাইভেসির নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই থাকবে। আর ফ্লিকারে আপনার ফুল রেজ্যুলেশনের ফটোগুলো আপলোড করে রাখতে পারেন মোট ১০০০জিবি স্পেস পর্যন্ত।
অনলাইন ছাড়াও, অফলাইনে, অর্থাৎ আপনার কম্পিউটারেও এসব ডেটা ব্যাকআপ রাখতে পারেন, ফলে ফোন বেহাত হলেও আপনার দরকারী তথ্য আপনার হাতছাড়া হবেনা।
কিছু কিছু ফোন, যেমন আইফোন অত্যন্ত শক্তিশালী এক্টিভেশন লক সিস্টেম প্রদান করে, যার মাধ্যমে সঠিক আইডি-পাসওয়ার্ড দিয়ে অনলাইনে সাইন-ইন না করলে ঐ ফোন আর ব্যবহার করাই যাবেনা। আইফোনের ক্ষেত্রে এটাকে আইক্লাউড লক ও বলা হয়ে থাকে। ফাইন্ড মাই আইফোন ফিচার অন করলে তাতে আইক্লাউড লক বা এক্টিভেশন লক নিজ থেকেই চালু হয়।
এরকম অবস্থায় ফোন রিসেট দিতে গেলেও অ্যাপলে সাইন-ইন করা লাগে। সেক্ষেত্রে, যার অ্যাপল আইডি দিয়ে আইক্লাউড লক চালু করা হয়েছে, তার আইডি পাসওয়ার্ড দরকার হয়। এরকম এক্টিভেশন লক ওপেন না করতে পারলে ডিভাইসের পার্টস খুলে নেয়া ছাড়া অন্য কোনো কাজে একে ব্যবহার করা যায়না।
আশা করি এই পোস্টটি আপনার কাজে লাগবে। বাংলাটেক টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইল ইনবক্সে পেতে এখানে সাবস্ক্রাইব করে সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।
বোনাসঃ এন্ড্রয়েড ফোনে যে অ্যাপগুলো আপনার অবশ্যই দরকার
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।