ফেসবুক এর ফিচার তালিকায় সবসময়ই নতুন কিছু না কিছু যুক্ত হচ্ছে। তবে ফেসবুক গ্রুপ ফিচারটি ফেসবুকের প্রধান ফিচার হিসেবে রয়েছে অনেক আগে থেকেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফেসবুক গ্রুপ খোলার নিয়ম, ফেসবুক গ্রুপ এর ধরন, ফেসবুক গ্রুপ এর সুবিধা প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত।
ফেসবুক গ্রুপ কি?
ফেসবুক গ্রুপ হলো ফেসবুক এর মূল ফিচারগুলোর মধ্যে একটি। ফেসবুক গ্রুপগুলো মূলত একই বিষয়ে আগ্রহ রাখেন এমন সব ব্যবহারকারীর একত্রিত হওয়ার একটি স্থান। যেকোনো বিষয়কে কেন্দ্র করেই ফেসবুক গ্রুপ তৈরী করা যায়। লাইব্রেরি থেকে শুরু করে একই স্কুলে পড়ুয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলাসহ সকল বিষয়েই ফেসবুক গ্রুপ অনেক কাজে আসতে পারে।
ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপ এর পার্থক্য
অনেকেই ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপ – এই দুইটির মধ্যে গুলিয়ে ফেলেন। আসলে দুইটি ফিচারের কাজ সম্পূর্ণ আলাদা।
ফেসবুক পেজ হচ্ছে কোনো পাবলিক ফিগার, প্রতিষ্ঠান বা নির্দিষ্ট কারণে তৈরী ফেসবুক ফিচার। যে-কেউ ফেসবুক পেজ দেখতে পারে, লাইক করতে পারে ও পেজের পোস্টে কমেন্ট করতে পারে। ফেসবুক পেজগুলোতে শুধুমাত্র পেজের এডমিন বা অথরাইজড এডিটররাই সকলের উদ্দেশ্যে পোস্ট করতে পারে।
অন্যদিকে ফেসবুক গ্রুপের ধারণাটি হচ্ছে সকলকে একই ছায়ার নিচে আনা ও যার যার ইচ্ছামত এনগেজমেন্ট এর সুবিধা করে দেওয়া। ফেসবুক গ্রুপসমুহে জয়েন করার পর যেকেউ পোস্ট করতে পারে, পোস্টে কমেন্ট করতে পারে। আবার অনেক গ্রুপেই পোস্ট পাবলিক হওয়ার আগে এডমিন এপ্রুভাল পেতে হয়।
ফেসবুক গ্রুপ প্রাইভেসি
প্রাইভেসির উপর ভিত্তি করে ফেসবুক গ্রুপসমুহকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। ফেসবুক গ্রুপ এর এই দুইটি প্রাইভেসি অপশন হলোঃ
- পাবলিকঃ যেকেউ গ্রুপে কারা আছে ও কি পোস্ট হচ্ছে তা দেখতে পারে।
- প্রাইভেটঃ শুধুমাত্র মেম্বারগণ গ্রুপের মেম্বার ও পোস্ট দেখতে পারে (এগুলো আবার ভিজিবল এবং হিডেন এই দুই ভাগে বিভক্ত। ভিজিবল গ্রুপগুলো মানুষজন সার্চ করে বের করতে পারবে, তবে জয়েন না করলে গ্রুপের কনটেন্ট দেখতে পারবেনা। হিডেন গ্রুপগুলো সার্চ করেও পাওয়া যায়না। ইনভাইট করতে হয়।)
কোনো গ্রুপের প্রাইভেসি গ্রুপে প্রবেশ করলে গ্রুপের নামের নিচে প্রদর্শিত হয়। গ্রুপে ইনভাইট পাওয়া মেম্বারগণ প্রিভিউ মোডে গ্রুপের পোস্টগুলো দেখতে পারে। এছাড়াও কোনো পেজ যদি গ্রুপে জয়েন করে, সেক্ষেত্রে ওই পেজের সকল এডমিন গ্রুপের সকল ফিচার ব্যবহারের ক্ষমতা রাখে।
ফেসবুক গ্রুপ টাইপ
কি ধরনের আলাপ আলোচনা গ্রুপে বেশি প্রাধান্য পায়, তার উপর ভিত্তি করে ফেসবুক গ্রুপকে ৭টি টাইপে ভাগ করা হয়। প্রতিটি গ্রুপ টাইপের সাথে কিছু আলাদা ফিচার ও পাওয়া যায়। ফেসবুক গ্রুপ টাইপসমুহ হলোঃ
- জেনারেলঃ এটি ফেসবুক এর ডিফল্ট গ্রুপ টাইপ। এই ধরনের গ্রুপে সাধারণ সব ফিচার দেওয়া থাকে।
- বাই এন্ড সেলঃ সেলস লিস্টিং যদি কোনো গ্রুপের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়, সেক্ষেত্রে বাই এন্ড সেল গ্রুপ টাইপটি দারুণ কাজে আসে। এই গ্রুপ টাইপ সেট করলে একটি নির্দিষ্ট কারেন্সি সেট করা যায়। এছাড়াও গ্রুপে করা সেল পোস্টসমুহ ফেসবুক মার্কেটপ্লেসেও দেখানো হয়।
- গেমিংঃ যেকোনো নির্দিষ্ট গেম বা গেমিং ইভেন্টকে কেন্দ্র করে তৈরী গ্রুপের জন্য ক্যাটাগরি।
- সোশ্যাল লার্নিংঃ এই ধরনের গ্রুপ টাইপ ফেসবুক গ্রুপকে একটি শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত করে৷ এই গ্রুপ টাইপের ক্ষেত্রে কুইজ, লেসন ইত্যাদি পোস্টের পাশাপাশি মেম্বারদের প্রগেস ও রেকর্ড করা যায়।
- জবসঃ ওপেন জব পোস্টিং এর জন্য এই ধরনের গ্রুপ টাইপ ব্যবহৃত হয়। জব সেলারি, লোকেশন, ঘন্টা, ইত্যাদি সম্বলিত পোস্ট টেমপ্লেট এই টাইপের গ্রুপে দেওয়া থাকে।
- ওয়ার্কঃ একই কর্মস্থলে কাজ করা মানুষদের এক জায়গায় করে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য এই গ্রুপ টাইপ ব্যবহার হয়।
- প্যারেন্টিংঃ প্যারেন্টিংকে মাথায় দেখে তৈরী এই গ্রুপ টাইপে তিনটি ইউনিক ফিচার পাওয়া যায়। এছাড়াও মেম্বারদের প্রগেসের উপর ভিত্তি করে ব্যাজ দেওয়ার সুবিধাও রয়েছে।
ফেসবুক গ্রুপ ক্যাটাগরি
আপনি একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলতে চান, কিন্তু কি নিয়ে গ্রুপ হতে পারে তা নিয়ে যদি সংশয়ে থাকেন, তবে চলুন জেনে নেয়া যাক কিছু জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ ক্যাটাগরি সম্পর্কে। যেসব বিষয়কে কেন্দ্র করে ফেসবুক গ্রুপ খুলতে পারেন, সেগুলো হলোঃ
- হোম ও গার্ডেন
- বন্ধুবান্ধব
- স্থানীয়
- ফানি
- বেচা-কেনা
- ফটোগ্রাফি
- অনুপ্রেরণামূলক
- খবর ও রাজনীতি
- খাবার
- কার ও মোটরসাইকেল
- শিল্প ও সাহিত্য
- স্বাস্থ্য ও ফিটনেস
- ভ্রমণ ও স্থান
- ফ্যাশন ও স্টাইল
- খেলাধুলা
- পোষা প্রানী
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- প্যারেন্টিং
- আউটডোর অ্যাক্টিভিটি
- গেমস
- শখ ও অবসর
- বিদ্যালয় ও শিক্ষা
- ব্যবসা
- প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং, ইত্যাদি।
আরো জানুনঃ ফেসবুক থেকে আয় করার উপায়
ফেসবুক গ্রুপ খোলার নিয়ম
ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করা বা ফেসবুক গ্রুপ খোলা অনেক সহজ। কম্পিউটারে ফেসবুক গ্রুপ খুলতেঃ
- আপনার ফেসবুক একাউন্টে লগিন করুন।
- এরপর বামপাশের মেন্যু থেকে গ্রুপস এ ক্লিক করুন।
- এরপর সেখানে Create New Group বাটন আসবে।
- সেখান থেকে Create New Group বাটনে ক্লিক করুন।
- পরের পেজে গ্রুপ এর নাম লিখুন।
- গ্রুপের প্রাইভেসি অপসন সিলেক্ট করুন।
- গ্রুপে কয়েকজন মেম্বার এড করুন।
- Create এ ক্লিক করুন।
উপরে উল্লিখিত উপায়ে এক মিনিটের ও কম সময়ে কম্পিউটারে ফেসবুক গ্রুপ খুলতে পারবেন। এবার জানি চলুন, মোবাইল দিয়ে কিভাবে ফেসবুক গ্রুপ খুলতে হয়। মোবাইল ফেসবুক গ্রুপ খুলতেঃ
- ফেসবুক অ্যাপে লগিন করুন।
- এন্ড্রয়েডে ফোনে ফেসবুক টপ বারে (উপরের দিকে), অথবা আইফোনে ফেসবুক বটম বারে (নিচের দিকে) থাকা হ্যামবার্গার আইকনে (সমান্তরাল তিনটি রেখা) ক্লিক করুন।
- Groups সিলেক্ট করুন। যদি Groups অপশনটি না দেখেন, সেক্ষেত্রে See More চেপে খুঁজে নিন।
- স্ক্রিনের উপরের দিকে একটি প্লাস (+) আইকন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করুন। “ক্রিয়েট এ গ্রুপ” সিলেক্ট করুন। গ্রুপ এর নাম লিখুন।
- গ্রুপের প্রাইভেসি অপসগন সিলেক্ট করুন।
- গ্রুপে কয়েকজন মেম্বার এড করুন।
- Create এ ক্লিক করুন।
ফেসবুক এ গ্রুপ তৈরী করার পর খুব সহজেই সাধারণভাবেই পোস্ট করা যাবে। এছাড়া গ্রুপ এর কভার ও সেট করা যায়। ফেসবুক গ্রুপ এর অ্যানাউন্সমেন্ট ফিচারটি ব্যবহার করে মেম্বারদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পিন করার সুযোগ রয়েছে।
আরো জানুনঃ ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করার উপায়
ফেসবুক গ্রুপ এর সুবিধা
একই বিষয় ইন্টারেস্ট রাখেন, এমন সব ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এক ছাদের নিছে আনার জন্য ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করা হয়। এর ফলে একই মন-মানসিকতার অন্য ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সাথে নতুন সম্পর্ক স্থাপন সহজ হয়। বিশেষ করে আপনি যদি কোনো ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন, সেক্ষেগ্রে ফেসবুক গ্রুপ আপনার অনেক কাজে আসতে পারে।
প্রথমত আপনার কাস্টমারদের আপনার সেবা বা ব্যবসার ফেসবুক গ্রুপে ইনভাইট করে এক জায়গায় একত্র করে খুব সহজেই কাস্টমার সাপোর্ট দিতে পারেন। জরিপে থেকে জানা গেছে, ৯৬% মানুষই কোনো পণ্য ক্রয়ের সময় কাস্টমার সাপোর্টকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ফেসবুক গ্রুপ এর মাধ্যমে খুব সহজেই কাস্টমার এর সমস্যা জানতে পারা যাবে ও তা সমাধানে কাজ করা যাবে।
আরো জানুনঃ ফেসবুক পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে করণীয়
আপনার ব্র্যান্ডের পরিচিতি যদি ভালো হয়, তবে আপনার ব্র্যান্ডের কাস্টমার ও ফ্যানদের এক জায়গায় একত্র করার ফলে অন্য ফেসবুক ব্যবহারকারীরা আপনার ব্র্যান্ডের দিকে উদ্ধুদ্ধ হবে। অনেক সময় দেখা যায়, কাস্টমার সাপোর্ট গ্রুপে কাস্টমারগণই একে অপরের সমস্যার সমাধান জানাচ্ছে। এর ফলে আপনার ব্র্যান্ডের ফ্যানদের এনগেজ রেখে ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানো সম্ভব।
বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিতে এখানে ক্লিক করুন
এসব কিছুর পাশাপাশি আপনার প্রোডাক্ট প্রমোট করতে ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহারের সুবিধা তো রয়েছেই। এসবের পাশাপাশি বেটা টেস্টার, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর কিংবা অ্যাফিলিয়েট খুঁজে বের করতেও ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফেসবুক গ্রুপ টিপস ও ট্রিকস
ফেসবুক গ্রুপ খোলা সহজ হলেও অধিকাংশ গ্রুপই খোলার কিছুদিনের মধ্যেই ইনএক্টিভ হয়ে যায়। একটি ফেসবুক গ্রুপ সফলভাবে পরিচালনা করতে গেলে ফেসবুক গ্রুপ চালনার কার্যকরী নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক, ফেসবুক গ্রুপ পরিচালনার কিছু অসাধারণ টিপস ও ট্রিকস।
প্রথমত আপনার ফেসবুক গ্রুপ খোলার কারণ ও গ্রুপ থেকে আপনার প্রত্যাশা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। এরপর গ্রুপ তৈরীর পর অবশ্যই গ্রুপ রুলস (নিয়ম) সেট করুন ও গ্রুপের সকল মেম্বার যাতে রুলস মেনে চলে, তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।
গ্রুপে নিয়মিত পোস্ট করার চেষ্টা করুন। এর ফলে গ্রুপের মেম্বারদের মধ্যে এনগেজমেন্ট বজায় থাকবে ও অন্যান্য মেম্বাররাও পোস্ট করতে উৎসাহিত হবে৷ তবে সকল টাইপের গ্রুপের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি প্রযোজ্য নয়। গ্রুপের নতুন মেম্বারদের ওয়েলকাম পোস্ট এর মাধ্যমে গ্রুপে স্বাগত জানানোর ফিচারও ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যদি গ্রুপ তৈরী করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার প্রোডাক্ট প্রমোট এর খাতিরে যত্রতত্র প্রোডাক্ট লিংক না দিয়ে টেকনিক্যালি আগানোর দিকে গুরুত্ব দিন। আপনার গ্রুপের মেম্বাররা যদি আপনার করা বিরক্তিকর সেল পোস্ট দেখে গ্রুপ আনফলো করে দেয়, সেক্ষেত্রে গ্রুপের পোস্ট আর তাদের টাইমলাইনে পৌছাবে না। তাই এই ব্যাপারটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখুন।
ফেসবুক গ্রুপ সম্পর্কে আপনার মতামত কি? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।