অতিরিক্ত সিমের নিবন্ধন বাতিল করতে বললো বিটিআরসি (সময় সীমিত)

বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহার শুধু যোগাযোগের জন্যই নয়। ইন্টারনেট ব্রাউজিং, মোবাইল ব্যাংকিং, সামাজিক যোগাযোগ, অফিসিয়াল কাজ, এমনকি শিক্ষা ক্ষেত্রেও এটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। আর মোবাইল ব্যবহারের মূল উপাদান হলো সিম কার্ড। কিন্তু অনেকেই না জেনে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের নামে অনেকগুলো সিম নিবন্ধন করে ফেলেছেন। কারো নামে ১০, ১৫টি সিমও চালু আছে, যার বেশিরভাগ হয়তো ব্যবহারই হয় না। 

তাছাড়া অনেকে জানেনই না যে তাদের নামে কতগুলো সিম নিবন্ধন করা আছে। এগুলো হতে পারে ঝুঁকির উৎস। অন্যদিকে অব্যবহৃত কিন্তু নিবন্ধিত সিমের কারণে প্রকৃত মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যাও সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন।

এই বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এবং ওয়েবসাইটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তির নামে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি সিম থাকলে অতিরিক্ত সিমগুলো ৩০ অক্টোবর ২০২৫ সালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে ডি-রেজিস্টার করতে হবে। অর্থাৎ অতিরিক্ত সিম থাকলে গ্রাহকের নিজেরই সেগুলোর নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।

কেন এমন সিদ্ধান্ত?

মূলত একজন ব্যক্তির নামে মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যক সিম থাকলে তা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, প্রতারণা, সাইবার অপরাধ এমনকি ব্যক্তিগত সমস্যারও কারণ হতে পারে। বহু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয় ভুয়া বা অন্যের নামে নিবন্ধিত সিম। অনেক সময় নিরীহ মানুষ বুঝতেই পারেন না যে তার নামে এমন সব সিম চালু রয়েছে, যা সে নিজেই কখনও ব্যবহার করেনি। অনেক সময় খুচরা সিম বিক্রেতারা অন্যের নামে সিম নিবন্ধন করে ফেলে কোনো কিছু না জানিয়েই, এমন অভিযোগও শোনা গেছে।

এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে ২০১৫ সাল থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশন চালু করা হয়। এরপর থেকে প্রত্যেক নাগরিকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, ও আঙুলের ছাপ মিলিয়ে সিম নিবন্ধন নিশ্চিত করা হয়।

sim card

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

২০২২ সালে বিটিআরসি এক নোটিশে জানায়, একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম থাকতে পারবে। কিন্তু এর পরেও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কিছু কিছু নিবন্ধন গ্রাহকের অগোচরে হয়ে যায় বলে অভিযোগ আছে। তাছাড়া এতে অপারেটরদের মাঝে প্রতিযোগিতা ঠিকভাবে হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ শোনা যায়। এই অবস্থার উন্নয়ন এবং সিম ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত করতে আরেকটি নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে BTRC। তারা এখন একজনের নামে সর্বোচ্চ কতটি সিম থাকতে পারবে সেই সীমা আরও কমিয়ে দিয়েছে।

নতুন নিয়মে একজনের নামে সর্বোচ্চ ১০ সিম থাকতে পারবে

২০২৫ সালে দেওয়া BTRC-এর নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে একজন ব্যবহারকারীর নামে সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিবন্ধিত থাকতে পারবে। এর বেশি সিম থাকলে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডি-রেজিস্টার করতে হবে। এর আগে অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে বা অজান্তে একাধিক সিম সংগ্রহ করেছিলেন। অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের সিমও নিজের নামে নিবন্ধন করিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখন এই সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে সিম ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসে এবং অপব্যবহার কমে। এই সীমা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রযোজ্য। তবে কর্পোরেট বা অফিসিয়াল গ্রাহকদের জন্য আলাদা বিধি থাকতে পারে। 

যারা বিকাশ/নগদ এজেন্ট, মোবাইল রিচার্জ ব্যবসায়ী কিংবা রিসেলার হিসেবে কাজ করেন, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেখিয়ে আলাদা করে সিম অনুমোদনের সুযোগ থাকতে পারে। তবে সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে সিমের সর্বোচ্চ সীমা ১০টি। অতএব, এখনই জেনে নিন আপনার নামে কতটি সিম আছে এবং যদি সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে সময় থাকতে সেগুলো ডি-রেজিস্টার করে ফেলুন। না হলে পরবর্তীতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে কিংবা নতুন সিম নেওয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দিতে পারে।

কীভাবে জানবেন আপনার নামে কয়টি সিম?

এটি জানার জন্য আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। খুব সহজেই আপনি জানতে পারবেন আপনার এনআইডির বিপরীতে মোট কয়টি সিম চালু রয়েছে এবং কোন কোন অপারেটরে সেগুলো চলছে।

এজন্য মোবাইল থেকে ডায়াল করুন:
*১৬০০১#

তারপর রিপ্লাই অপশনে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের শেষ চারটি সংখ্যা দিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে কোন মোবাইল অপারেটরে কয়টি সিম আপনার নামে নিবন্ধিত আছে।

এই পদ্ধতিটি বিনামূল্যে এবং যেকোনো সময় ব্যবহারযোগ্য। এটি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনার নামে কোনো সিম অন্য কেউ ব্যবহার করলে তার দায়ভার আপনার ওপরও আসতে পারে।

👉 এক NID দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা সকল সিম যাচাই করার উপায়

আপনার নামে ১০টির বেশি সিম থাকলে কী করবেন?

যদি দেখেন আপনার নামে মোট ১০টির বেশি সিম চালু রয়েছে, তাহলে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেসব সিম ব্যবহার করেন না কিংবা যেগুলো আপনি জানেনই না কবে বা কীভাবে চালু হয়েছে — সেগুলো ৩০ অক্টোবর ২০২৫ সালের মধ্যেই ডি-রেজিস্টার করতে হবে।

এজন্য সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের নিকটস্থ কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে গিয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে হবে। সাথে নিয়ে যেতে হবে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এবং প্রয়োজনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভেরিফিকেশন দেওয়া লাগতে পারে।

যদি আপনি নির্দিষ্ট অপারেটরের নাম না জানেন, তাহলে আগে *১৬০০১# ডায়াল করে তা জেনে নিন।

১০টির বেশি থাকা অতিরিক্ত সিম ডি-রেজিস্টার না করলে কী হবে?

আমাদের পোস্টের রেফারেন্সে দেয়া সর্বশেষ ঐ নোটিশে এখন পর্যন্ত BTRC নির্দিষ্ট করে কোনো ব্যবস্থার কথা বলেনি। তবে ৩০ অক্টোবর ২০২৫-এর পর যেসব ব্যক্তি অতিরিক্ত সিম ডি-রেজিস্টার না করবেন, তাদের সেই অতিরিক্ত সিমসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে নতুন সিম রেজিস্ট্রেশনেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়াও, যদি আপনি জানেন না এমন সিম আপনার নামে নিবন্ধিত থেকে যায় এবং তা কোনো অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হয় তাহলে আপনি নিজেও জটিলতায় পড়তে পারেন।

যেসব ব্যবহারকারীর জন্য এই নিয়ম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

এই নতুন নিয়ম মূলত লক্ষ্য করেছে যাদের নামে একাধিক সিম চালু আছে। যেমনঃ

  • বিকাশ/নগদ/রকেট এজেন্ট
  • রিসেলার ও মোবাইল ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী
  • পরিবারের অন্যান্য সদস্যের জন্য নিজের নামেই সিম চালু করা ব্যক্তি
  • যেকোনো ব্যবহারকারী যাদের নামে একাধিক সংযোগ রয়েছে

যদি আপনি এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হন, তাহলে এখনই সময় হয়েছে আপনার মোবাইল নম্বরগুলো যাচাই করে দেখার।

বিটিআরসির নোটিশ
ছবিঃ বিটিআরসির নোটিশ

করণীয় – এক নজরে

যদি আপনি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চান, নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

১. আপনার ফোন থেকে *১৬০০১# ডায়াল করুন
২. NID নম্বরের শেষ চার সংখ্যা দিন
৩. এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারবেন, আপনার নামে কতটি সিম চালু
৪. যদি ১০টির বেশি হয়, তবে ব্যবহারবিহীন অতিরিক্ত সিমগুলো সনাক্ত করুন
৫. সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে ডি-রেজিস্টার করুন
৬. জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন, ফিঙ্গারপ্রিন্টও ভেরিফাই করতে হতে পারে

আপনার নামে কতটি সিম চলছে তা জানা ও ব্যবস্থাপনা এখন সচেতনতার ব্যাপার। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, সাইবার অপরাধও তত জটিল হচ্ছে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত নিজের পরিচয়ে চালু থাকা প্রতিটি সিম সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা এবং অপ্রয়োজনীয় সিম বন্ধ করে দেওয়া। এতে শুধু নিজের নিরাপত্তাই নয়, দেশীয় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও আরও নিরাপদ ও দক্ষ হয়ে উঠবে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,493 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *