ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে ভিসা, মাস্টার কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস ও ডিসকভার – এই চারটি নাম মার্কেট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিশ্বের অধিকাংশ কার্ড পেমেন্ট এসব প্রতিষ্ঠানের অধীনেই হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট মিডিয়া হিসেবে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যাপক জনপ্রিয়। তবে এই দুইটি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট মাধ্যম নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান। ভিসা ও মাস্টার কার্ড – উভয়েই পেমেন্ট নেটওয়ার্ক হওয়া সত্ত্বেও এদের মধ্যে মিল অমিল রয়েছে। দুইটি প্রতিষ্ঠানই মূলত ব্যবহারকারী, ব্যাংক ও বিক্রেতার মধ্যকার তৃতীয় ব্যক্তির ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নেয়া যাক, ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডের পার্থক্য।
ভিসা কার্ড কি?
ভিসা কার্ড হলো ভিসা কতৃক ব্র্যান্ডেড ও ভিসা নেটওয়ার্ক দ্বারা চালিত পেমেন্ট কার্ড। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে ডেবিট, ক্রেডিট, এমনকি গিফট কার্ড সার্ভিস ও প্রদান করে ভিসা কার্ড। মজার ব্যাপার হলো ভিসা ব্র্যান্ডেড হলেও ভিসা কার্ডগুলো ভিসা নয়, বরং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইস্যু করে থাকে।
ভিসা একটি স্বীকৃত পেমেন্ট প্রসেসিং নেটওয়ার্ক। বিশ্বের ২০০ দেশের অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভিসার মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করে থাকে। ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক – উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহারের জন্য ভিসা কার্ড নেওয়া যায়। 👉 ভিসা কার্ড কি? Visa কার্ডের সুবিধা কি? কিভাবে পাবো?
মাস্টার কার্ড কি?
পেমেন্ট নেটওয়ার্ক হিসেবে ভিসা’র পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মাস্টারকার্ড। মাস্টার কার্ড ব্র্যান্ডেড পেমেন্ট কার্ডগুলি সরবরাহের ক্ষেত্রে মাস্টার কার্ড তাদের অংশীদার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে একজোট হয়ে কাজ করে।
নিজেদের মালিকানাধীন গ্লোবাল পেমেন্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মাস্টারকার্ড পেমেন্ট লেনদেন সহজতর করে। এই পেমেন্ট প্রসেস ব্যবহারকারী, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে চালিত হয়। ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রিপেইড কার্ড ইস্যু করে থাকে মাস্টার কার্ড।
ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডের পার্থক্য
ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা তো পাওয়া গেলো। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক, ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডের পার্থক্য সম্পর্কে।
ব্যবহার
ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কার্ড পেমেন্ট নেয় বিশ্বের প্রায় যেকোনো অনলাইন বা ফিজিক্যাল মার্কেটে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করা যায়। কোনো বিক্রেতা যদি উল্লিখিত যেকোনো একটি কার্ড গ্রহণ করে থাকে, তবে অন্যটিও সম্ভবত গ্রহণ করবে।
সুতরাং ব্যবহার বা গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ দেশেই দুই ধরনের কার্ডই ব্যবহার করা যায়।
অনলাইন নিরাপত্তা
অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ভিসা কার্ড ও মাস্টারকার্ড এর ক্ষেত্রে আলাদা ধরনের অনলাইন প্রটেকশন এর দেখা মিলবে। মাস্টার কার্ড সিকিউরড কোড স্কিম নামে একধরনের সুরক্ষা প্রকল্প ব্যবহার করে। অন্যদিকে ভিসা ও একই ধরনের ‘ভেরিফাইড বাই ভিসা স্কিম’ নামের একটি সিস্টেম ব্যবহার করে।
সুবিধাসমুহ
শুধুমাত্র ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ড হোল্ডারদের সার্ভিস অফার করে থাকে ভিসা ও মাস্টার কার্ড। বেসিক থেকে শুরু করে প্রিমিয়ার পর্যন্ত মোট ৩ লেভেলের সুবিধা দিয়ে থাকে দুইটি পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মই।
বেসিক
ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড এর বেসিক প্যাকেজের সুবিধাসমুহ নিম্নরুপঃ
- জরুরী সহায়তা
- জরুরী কার্ড রিপ্লেসমেন্ট
- বর্ধিত ক্রয় ওয়্যারেন্টি
- ভাড়া গাড়ী সংঘর্ষ সুরক্ষা
ভিসার অননুমোদিত ক্রয়ের ক্ষেত্রেও কভারেজ প্রদান করে। অন্যদিকে মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে আপনি জালিয়াতির দায়বদ্ধতা সুরক্ষা পাবেন। মাস্টারকার্ড পাশাপাশি স্পোর্টিং এবং ভ্রমণের টিকিটে ছাড় দিয়ে থাকে।
মিড-রেঞ্জ
ভিসা কার্ড এর মিড-রেঞ্জ প্যাকেজের নাম সিগনেচার। বেসিক প্যাকেজের পাশাপাসি সিগনেচার এর সাথে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়ঃ
- অনলাইন পোর্টালে ডিসকাউন্ট
- বিনোদন, ডাইনিং, ভ্রমণ এবং ক্রীড়া ইভেন্টে ডিল
- ২৪x৭ আঞ্চলিক সেবা
মাস্টার কার্ড এর মিড-রেঞ্জ প্যাকেজের নাম ওয়ার্ল্ড। মাস্টার কার্ড এর ওয়ার্ল্ড প্যাকেজের সুবিধাসমুহ হলোঃ
- ১২০ দিনের মূল্য সুরক্ষা
- ডেডিকেটেড ব্যক্তিগত ভ্রমণ পরামর্শদাতা
- নির্দিষ্ট হোটেলে রুম আপগ্রেড, দেরিতে চেকআউট ইত্যাদি সুবিধা
প্রিমিয়াম
বেসিক ও সিগনেচার প্যাকেজসহ আরো বাড়তি সুবিধা নিয়ে ভিসা কার্ড এর প্রিমিয়াম প্যাকেজের নাম ভিসা ইনফিনিট প্যাকেজ। এটি মূলত উচ্চবিত্তদের কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম সুবিধা প্রদান করে থাকে।
অন্যদিকে মাস্টার কার্ড এর ওয়ার্ল্ড এলিট প্যাকেজ বেসিক ও ওয়ার্ল্ড প্যাকেজের সুবিধার পাশাপাশি পাওয়া যাবে বাড়তি সুবিধা। যেমনঃ
- গাড়ি ভাড়াতে ছাড়
- কম বিমানভাড়া
- বিমানবন্দর লঞ্জগুলিতে অ্যাকসেস
- সমস্ত ব্যয় সুরক্ষা
আরো জানুনঃ ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড এর মধ্যে পার্থক্য কী?
ভিসা কার্ড বা মাস্টার কার্ড কিভাবে পাবো?
আপনি যদি ভিসা বা মাস্টার কার্ড পেতে চান, তবে আপনার একাউন্ট আছে, এমন যেকোনো ব্যাংকে ভিসা কার্ড বা মাস্টার কার্ড এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। সাধারণ ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড এর মতোই এসব কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে। অবশ্য আজকাল বাণিজ্যিক ব্যাংকে একাউন্ট খুললেই ভিসা অথবা মাস্টারকার্ড ডেবিট কার্ড দেয়া হয়।
আরো জানুনঃ ক্রেডিট কার্ড কি ও কিভাবে পাবেন
ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড – আপনার কোনটা নেওয়া উচিত?
কার্যক্রমের দিক দিয়ে ভিসা ও মাস্টার কার্ড দুইটিই একই বলা যায়। লেনদেনের ক্ষেত্রে দুইটি কার্ডই খুবই নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য। আপনি এর যেকোনো একটি নিতে পারেন।
ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের বেশিরভাগ এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা যায়।
পাশাপাশি আপনার ভিসা বা মাস্টার কার্ড যদি ডুয়েল কারেন্সি সাপোর্ট করে থাকে, তাহলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকেই এটিএম এর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
তাই বলা চলে, ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড এর মধ্যে যেকোনো একটি, আশা করা যায় যে, আপনার চাহিদা পূরণে সক্ষম। তবে আপনি চাইলে উভয়টিই নিতে পারেন।
আপনি কি ভিসা বা মাস্টারকার্ড ব্যবহার করেন? কোনটি আপনার বেশি পছন্দের?
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।
Very fantastic
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। অনুগ্রহ করে আমাদের এই সাইটটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ও ইমেইলে ফলো করে আমাদের সাথেই থাকুন!
good
Thanks!