গেম খেলে টাকা আয় করার উপায়

গেম খেলে টাকা আয় করার উপায়

গেম খেলে টাকা আয়? শুনতে অবাক লাগলেও বর্তমানে গেম খেলে টাকা আয় করা সম্ভব। যেকেউ গেম খেলতে ভালোবাসে। এই কারণে গেমিং থেকে টাকা আয় করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন কৌশল এবং পরিশ্রমের।

গেমিং করে টাকা আয়ের ক্ষেত্রে পরিশ্রমের ব্যাপারটি অনেকের জন্যই গেম খেলার মজাকে নষ্ট করে দেয়। তাই গেম খেলে টাকা আয় করতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত একান্তই নিজের। তবে নিজের পছন্দের কাজ থেকে যদি টাকা আয় সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে সমস্যা থাকার কথা না কারোই।

আপনার হাতে যদি সময় থেকে থাকে, তবেই গেম থেকে টাকা আয় করার ব্যাপারটি বিবেচনা করুন। অন্যথায় এই সিদ্ধান্তটি সফল নাও হতে পারে।

উল্লেখ্য যে, এই লেখায় আমরা গেম খেলে বিকাশে টাকা আয় এর মতো ব্যাপারে কথা বলছিনা। গেম খেলে বিকাশে টাকা আয় এর ব্যাপারটি এখনো যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিষ্ঠিত নয়। এই লেখায় আমরা মূলত ভিডিও গেম এর মাধ্যমে টাকা আয় এর উপায় নিয়ে কথা বলবো।

গেম খেলে টাকা আয় করার উপায়

গেমিং করে টাকা আয় করার একাধিক উপায় রয়েছে। গেম খেলে টাকা আয় করার উল্লেখ্যযোগ্য কিছু পন্থা নিয়ে আমরা জানবো। গেম খেলে টাকা আয় করার প্রধান উপায়সমুহ হলোঃ

  • লাইভস্ট্রিম
  • গেম সাংবাদিকতা
  • ভিডিও গেম গাইড ও টিউটোরিয়াল
  • গেমিং পডকাস্ট বা ইউটিউব চ্যানেল
  • গেমিং টুর্নামেন্ট
  • গেম টেস্টিং
  • একাউন্ট বা ডিজিটাল আইটেম বিক্রি

লাইভস্ট্রিম

বর্তমানে গেম এর লাইভস্ট্রিম এর জনপ্রিয়তা অন্য মাত্রায় অবস্থান করছে। আপনি যদি কোনো গেমে পারদর্শী হন আর আপনার কাছে লাইভস্ট্রিম করার মত যন্ত্রপাতি থাকে, তবে এটি গেম খেলে আপনার আয়ের প্রধান উৎস হতে পারে।

আপনার যদি যথেষ্ট পরিমাণ লাইভস্ট্রিম অডিয়েন্স থাকে, তাহলে একাধিক মাধ্যমে লাইভস্ট্রিম থেকে আয় সম্ভব। লাইভস্ট্রিমে পেইড এড প্রদর্শন করে, ডোনেশন নিয়ে, সাবস্ক্রিপশন মডেল, ইত্যাদি উপায়ে আয় করা সম্ভব।

আরো জানুনঃ ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম

বর্তমানে সবচেয়ে বড় গেম লাইভস্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে টুইচ। তবে ইউটিউব ও পাল্লা দিয়ে গেম লাইভস্ট্রিমের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যুক্ত হয়েছে ফেসবুকও। এছাড়াও অসংখ্য নতুন গেম লাইভস্ট্রিম প্ল্যাটফর্ম ও সম্প্রতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

তবে লাইভস্ট্রিম থেকে আয় করার ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবে একটি মোটা অংকের লাইভ ভিউয়ার। শুরুর দিকে হয়তো আপনি ১০জন ভিউয়ার ও পাবেন না। তবে ধৈর্য ধরে লাইভস্ট্রিম কন্টিনিউ করলে ধীরেধীরে উন্নতি দেখতে পাবেন।

ফোনে হোক বা কম্পিউটারে, লাইভস্ট্রিম করার ক্ষেত্রে আহামরি কোনো গিয়ার এর প্রয়োজন পড়েনা। লাইভস্ট্রিম এর ক্ষেত্রে দরকার পড়বে এমন একটি গেম যা মানুষ দেখতে পছন্দ করবে, মজার ব্যাক্তিত্ব ও স্ট্রিমিং সফটওয়্যার।

উল্লিখিত ব্যাপারগুলোর পাশাপাশি আপনার ইন্টারনেট এর স্পিড ও ভালো হওয়া চাই। নাহলে গেম লাইভস্ট্রিমের ভিডিও কোয়ালিটি ধরে রাখা কঠিন হবে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার।

গেম সাংবাদিকতা

গেম খেলার পাশাপাশি লেখালেখি করতেও পছন্দ করেন? তাহলে লিখতে পারেন গেম ও গেমিং ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত খবর, রিভিউ, ইন্টারভিউ, ইত্যাদি। আপনি চাইলে ইতিমধ্যে থাকা কোনো গেম সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে লিখতে পারেন বা আপনার নিজের ওয়েবসাইটও খুলতে পারেন।

এছাড়াও ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আর্টিকেল লিখেও আয় করতে পারেন। আপনি যদি নিজের গেমিং সম্পর্কিত ওয়েবসাইট খুলেন, সেক্ষেত্রে একাধিক উপায়ে ওয়েবসাইট থেকে আয় করতে পারবেন।

অন্যসব ইন্ডাস্ট্রির মত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও প্রচুর প্রতিযোগিতা রয়েছে। আপনি যদি এক্সিস্টিং কোনো ওয়েবসাইটের জন্য লিখতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার পোর্টফোলিও ও কাজের স্কিল এর প্রমাণ দিতে হবে। আবার নিজের ওয়েবসাইট শুরু করলেও আয় করার মত যথেষ্ট অডিয়েন্স পেতেও কিছুটা সময় লাগবে।

আইজিএন এর মতো বড় ওয়েবসাইট কিংবা স্টার্টআপ গেমিং ওয়েবসাইটগুলোকে বাদ দিয়ে এমন ওয়েবসাইটের কাছে নিজের লেখা পাঠান, যেগুলোর যথেষ্ট পরিমান অডিয়েন্স ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। শুরুতে ছোটোখাটো কিছু সাইটের জন্য বিনামূল্যে গেস্ট পোস্ট ও লিখতে পারেন। এতে সম্পর্ক বাড়তে থাকে।

ভিডিও গেম গাইড ও টিউটোরিয়াল

নতুন প্লেয়ার যখন কোনো মাল্টিপ্লেয়ার বা অন্য গেম খেলা শুরু করে, বেশিরভাগ সময়ই ইউটিউব এর শরণাপন্ন হয় গেম খেলা শিখতে। যার ফলে ভিডিও গেম গাইড ও টিউটোরিয়াল এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

আপনি যদি কোনো গেমে পারদর্শী হোন, সেক্ষেত্রে ভিডিও গেম গাইড ও টিউটোরিয়াল বানিয়েও আয় করা সম্ভব। আপনি চাইলে লিখিত গাইড ও টিউটোরিয়াল তৈরী করতে পারেন, ইউটিউব ভিডিও বানাতে পারেন, এমনকি ইবুক ও বানাতে পারেন।

ওয়েবসাইট বা ভিডিও থেকে বিজ্ঞাপন ও ডোনেশন এর মাধ্যমে আয় করা যায়। অন্যদিকে ইবুক সরাসরি বিক্রি করেও আয় করা সম্ভব।

যেকেউ গেমিং গাইড ও টিউটোরিয়াল বানাতে পারে। তাই এক্ষেত্রেও আয় করার জন্য আপনাকে অনন্য হতে হবে। প্রয়োজন পড়বে আলাদা স্কিল, যেমনঃ লিখা বা ভিডিও বানানোর।

বাউন্টি প্রোগ্রাম নামে GameFAQs একটি ক্যাম্পেইন চালায়, যেখানে উল্লেখিত কোনো একটি গেম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার জন্য ২০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পে করা হয়। তবে এই কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে সময় ও বিবেচনা – উভয় ব্যবহার করে নিখুঁত লিখা লিখতে হবে। তবেই আপনার লেখা ওয়েবসাইটটি কতৃক গৃহীত হবে।

ভিডিও গেম ও টিউটোরিয়াল এর ক্ষেত্রে প্রথমে একটি যথেষ্ট প্লেয়ার বেস আছে, এমন গেম খুঁজে নিন। গেমটি খেলে এর সমস্যা খুঁজে বের করে এর সমাধান এর খোঁজ করুন।

যেমনঃ মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন রোল-প্লেয়িং গেম (MMORPGs) এ গোল্ড পাওয়ার গাইড, লেভেল আপ গাইড, রেইড গাইড ইত্যাদি নিয়ে টিউটোরিয়াল বানান। প্লেয়ার ভার্সেস প্লেয়ার গেম হলে সিক্রেট টেকনিক শিখাতে পারেন। সিংগেল প্লেয়ার গেম হলে নির্দিষ্ট এচিভমেন্ট বা ট্রফি বা চ্যালেঞ্জ কীভাবে পার করতে হয়, তার গাইড তৈরী করে সহজেই অডিয়েন্স পাওয়া সম্ভব।

গেমিং পডকাস্ট বা ইউটিউব চ্যানেল

গেম ও গেমিং ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান থাকলে শুরু করতে পারেন গেমিং পডকাস্ট। এছাড়াও একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকাও বর্তমানে সকল ক্রিয়েটর এর জন্য অত্যন্ত জরুরি। গেমাররা যেসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কমবেশি সকল প্ল্যাটফর্মেই নিজের উপস্থিতি রাখার চেষ্টা করুন।

উদাহরণস্বরূপঃ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইবড ব্যাক্তিগত চ্যানেল, পিউডিপাই একটি গেমিং চ্যানেল। পিউডিপাই মূলত মাইনক্রাফট, জিটিএ ৫ ইত্যাদি গেম খেলে ইউটিউবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

আরো জানুনঃ ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়

তবে এই তালিকার অন্যান্য আয়ের উৎসের পাশাপাশি পডকাস্ট বা ইউটিউব ভিডিও এর মাধ্যমে প্রথম দিন থেকেই আয় সম্ভব নয়। শুরুর দিকে পডকাস্ট বা ইউটিউব চ্যানেলে কোনো আয় হবেনা। তাই আয় করতে হলে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

পডকাস্ট চালানোর ক্ষেত্রে লেটেস্ট সব গেমিং খবর সম্পর্কে আপডেটেড থাকতে হবে, যা অনেকের জন্যই সমস্যার মনে হতে পারে। সেক্ষেত্রে যে গেম ভালো খেলেন, যে গেমের গেমপ্লে ইউটিউবে নিয়মিত আপলোড করে আয় করা সম্ভব।

গেমিং টুর্নামেন্ট

প্লেয়ার ভার্সেস প্লেয়ার (PvP) গেম, যেমনঃ পাবজি, ফ্রি ফায়ার ইত্যাদি গেমের নিয়মিত টুর্নামেন্ট হয়ে থাকে। বর্তমানে কমবেশি সকল গেমেরই টুর্নামেন্ট হয়ে থাকে, যেখানে যেকোনো প্লেয়ারই অংশগ্রহণ করতে পারে। যে গেম যত বেশি জনপ্রিয়, সে গেমের টুর্নামেন্ট জিতে তত বেশি আয় সম্ভব।

আপনি যদি ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্ট এ উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখতে পারেন, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন স্পন্সর ডিল ও পেতে পারেন। মূলত গেমিং রিলেটেড বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানই প্রো-গেমারদের স্পন্সর করে থাকে।

আরো জানুনঃ ফ্রিল্যান্সিং কি ও ফ্রিল্যান্সিং করে কিভাবে অনলাইনে আয় করবেন

আপনি যদি কোনো গেমে যথেষ্ট দক্ষ হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে কোনো ই-স্পোর্টস সংস্থায় যোগ দিতে পারেন। এছাড়াও কম্পিটিটিভ গেমারগণ লাইভস্ট্রিম ও ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করেও বিশাল অংকের অর্থ আয় করে থাকেন।

গেম টেস্টিং

যেকোনো গেম মুক্তির আগে একাধিক ডেভলপমেন্ট টেস্টিং এর মধ্য দিয়ে যায়। গেম টেস্ট এর ক্ষেত্রে অধিকাংশ ডেভলপার বাইরে থেকে গেম টেস্টার হায়ার করে থাকেন। প্লেটেস্টার এর কাজ হচ্ছে মূলত একটি গেম খেলে এটির ভুল-ত্রুটি ও সমস্যাসমুহ ডেভলপার এর কাছে উপস্থাপন করা, যার মাধ্যমে মুক্তির আগে গেমকে যথাযথ গ্রহণযোগ্য রূপ দেওয়া সম্ভব হয়।

বর্তমানে যেকেউ গেম টেস্টার হতে পারে। কোনো বড়সড় গেম কোম্পানির টেস্টার না হলে, আহামরি আয় করা যায়না। মোটামুটি বেশিরভাগ প্লেটেস্টিং ক্যাম্পেইন মোবাইল গেমের জন্যই হয়ে থাকে।

প্লেটেস্টিং এ যুক্ত হতে ঘুরে দেখতে পারেন বিভিন্ন জব বোর্ড। এছাড়াও প্লেটেস্টক্লাউড বা বিটাটেস্টিং এর মতো ডেডিকেটেড ওয়েবসাইটগুলোতেও ঘুরে আসতে পারেন প্লেটেস্টিং ক্যাম্পেইন এর খোঁজে।

একাউন্ট বা ডিজিটাল আইটেম বিক্রি

আপনি যদি কোনো গেমে যথেষ্ট সময় প্রদান করে থাকেন, সেক্ষেত্রে ইন-গেম আইটেম এক্সচেঞ্জ বা বিক্রি করেও আয় করতে পারেন। এছাড়াও অনেক গেমিং রিলেটেড আইটেম রিসেলও করা যায়। প্লেয়ার অকশনস এর মতো অনেক ওয়েবসাইটই গেম আইটেম এক্সচেঞ্জ এর কাজটি সহজ করে দিয়েছে।

আইটেম এক্সচেঞ্জ বা বিক্রির পাশাপাশি আপনার একাউন্ট ও বিক্রি করে আয় করতে পারেন। যেকোনো গেমের নতুন প্লেয়ারগণ বর্তমানে পুরনো একাউন্ট খুঁজে থাকেন। যার ফলে পুরনো একাউন্টের দাম ভালোই পাওয়া যায়।

আপনি যদি ফুল-টাইম গেমার হোন, সেক্ষেত্রে আপনার আসল গেমিং একাউন্ট এর পাশাপাশি সেকেন্ড একাউন্ট ও তৈরী করতে পারেন, যা পরে বিক্রি করে উল্লেখযোগ্য অর্থ আয় সম্ভব।

এছাড়াও অন্য খেলোয়াড় এর হয়ে গেম খেলেও আয় করা সম্ভব। অনেক প্লেয়ার বিভিন্ন গেম লেভেল বা গেম অবজেকটিভ সম্পূর্ণ করতে বাধার সম্মুখীন হয়। সেক্ষেত্রে আপনি একটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে উক্ত প্লেয়ারকে সাহায্য করতে পারেন।

গেম খেলে বা গেমিং করে টাকা আয় এর ক্ষেত্রে আপনার মতামত কী? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,550 other subscribers

2 comments

    • আরাফাত বিন সুলতান Reply

      অনুগ্রহ করে পোস্টটি ভালোভাবে পড়লেই জানতে পারবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *