ভিওএলটিই বা ভোল্টি (VoLTE) কী? এতে সুবিধা কী?

ফোরজির এই যুগে এলটিই শব্দটার সাথে আপনারা সবাই পরিচিত। ফোরজির সাথে এলটিই বা লং টার্ম ইভল্যুশন এর একটি বিশেষ যোগসূত্র আছে। ফোরজি এলটিই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন অপারেটর চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা দিচ্ছে। ৪জি এলটিই এর সাথে সংশ্লিষ্ট আরেকটি টার্ম ভোল্টি বা ভিওএলটিই যাকে ইংরেজিতে VoLTE রূপে লেখা হয়। ভোল্টি নামেই একে অনেকে উচ্চারণ করে থাকেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে রবি এবং গ্রামীণফোন ভোল্টি সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশে রবির ব্র্যান্ড এয়ারটেলও ভোল্টি সেবা প্রদান করছে। অনেকের মত আপনার মনেও হয়ত এই জিনিসটি নিয়ে কৌতূহল জেগেছে।

ভোল্টি কি?

ভিওএলটিই বা ভোল্টি এর  পূর্নরূপ হচ্ছে “ভয়েস ওভার লং টার্ম ইভোল্যুশন” বা “ভয়েস ওভার এলটিই”। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এর মাধ্যমে চতুর্থ প্রজন্মের এলটিই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভয়েস ট্রান্সফার অর্থাৎ কল করা হয়। স্বাভাবিকভাবে সাধারণ ফোরজি এলটিই নেটওয়ার্ক ডেটা ট্রান্সফার করতে পারলেও ভয়েস কল করতে পারে না।

সেক্ষেত্রে ফোরজি এলটিই দিয়ে ভয়েস কল করতে ভোল্টি প্রযুক্তি দরকার হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো ভোলটি চালু হয় নি।

এখন নিশ্চয়ই অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, ভোল্টি প্রযুক্তি যদি এখনো এদেশে না ই থাকে তবে এতদিন আমাদের ফোরজি সিম ও মোবাইল দিয়ে ভয়েস কল করলাম কীভাবে? একটি জিনিস শুনলে অবাক হবেন যে আমরা বর্তমানে আমাদের ফোরজি মোবাইল ও সিম দিয়ে কাউকে ভয়েস কল করলেও আমাদের কলটি কিন্তু ফোরজি ব্যান্ড দিয়ে ট্রান্সফার হয় না

আরও পড়ুনঃ রবি ৪.৫জি, জিপি ৪জি ও বাংলালিংক ৪জি সম্পর্কে যা আপনার জানা উচিত

বরং আমরা ফোরজি নেটওয়ার্কে থাকলেও কাউকে কল করার জন্য ডায়াল করলে আমাদের ফোন অটোমেটিক ফোরজি ত্যাগ করে থ্রিজিতে চলে যায়। কারণ তো আগেই বলেছি, সাধারণ এলটিই নেটওয়ার্ক শুধু ডেটা ট্রান্সফার করতে পারে।

এই মজার ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করা একটা মজার পদ্ধতি শিখিয়ে দিই আপনাদেরকে। ফোরজি নেটওয়ার্কে থাকা অবস্থায় কাউকে কল করুন। এবার কলে থাকা অবস্থায় আপনার ফোনের নোটিফিকেশন বারে লক্ষ্য করে দেখুন এতক্ষণ ফোরজি আইকন দেখালেও এখন থ্রিজি বা এইচ+ আইকন দেখাচ্ছে। ভোলটি ব্যতিত শুধু ফোরজি নেটওয়ার্ক যে ভয়েস কল করতে পারে না সেটার আরেকটি পরীক্ষা আছে।

আপনার ফোনটির সেটিংস থেকে নেটওয়ার্ক মোড “ফোরজি অনলি” করে দিন। এবার কাউকে কল করা চেষ্টা করুন। পারবেন না। কারণ এ অবস্থায় ফোনটি ফোরজি নেটওয়ার্ক থেকে থ্রিজি তে যেতে পারছে না। আর অন্যদিকে ফোরজি দিয়েও ভয়েস কল করতে পারছে না।

ভোল্টি প্রযুক্তির সুবিধা

উপরে যে এলটিই নেটওয়ার্কের ভয়েস কল করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কথা শুনলেন, ভোলটি এসে সেই সীমাবদ্ধতাকে দূর করবে। ইতিমধ্যে ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোলটি সেবা চালু আছে।

ভোলটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, আপনি যখন দুটো ভোলটি সাপোর্টেড ফোনে একে অপরের সাথে ভয়েস কলে যুক্ত থাকবেন তখন এইচডি কোয়ালিটির সাউন্ড পাবেন। কোন টেকনিক্যাল নয়েজ কিংবা সিগন্যাল লস পাবেন না। এর কারণ হলো ভোলটি প্রযুক্তিতে ভয়েস কলটিকে এলটিই এর ব্যান্ড দিয়ে ট্রান্সফার করা হয়।

এর আরেকটি সুবিধা হলো এর মাধ্যমে আপনি ভয়েস কলে থাকা অবস্থায়ও মোবাইল ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন যেটা বর্তমানে থ্রিজি কিংবা ভোলটি বিহীন ফোরজি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। এছাড়া ৪জির মত কল করার সময় নেটওয়ার্ক মুড সুইচ করার দরকার না হওয়ায় ভোল্টি এলে ফোনের ব্যাটারির চার্জ কিছুটা হলেও বাঁচবে। এছাড়া কল কানেক্ট আরো দ্রুত হবে।

কীভাবে পাবেন ভোলটি সুবিধা?

সাধারণ ফোরজির মতোই ভোল্টি সুবিধাও আপনার ডিভাইসের উপর নির্ভরশীল। মোটামুটি প্রায় সব জনপ্রিয় ব্র্যান্ড এর ফোরজি সাপোর্টেড ফোনগুলো একই সাথে ভোলটি ও সাপোর্ট করে।

আপনার ফোনের কল সেটিংস এ খুঁজলেই ভোল্টি চালু করার অপশন পেয়ে যাবেন আশা করি। না পেলে আপনার স্মার্টফোন এর কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে পারেন। বর্তমানে প্রচলিত সব ফোরজি সাপোর্টেড সিমে ভোল্টি সাপোর্ট করবে বলে আশা করা যায় (যদি অপারেটর চায় আরকি)। যদি তাই হয় তাহলে এজন্য আর সিম পরিবর্তনের দরকার হবেনা।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,579 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *