সিম পিন কোড লক হয়ে গেলে করণীয়

সিমের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পিন কোড লক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার। আমরা এখনও দেশে মূলত ফিজিক্যাল সিম ব্যবহার করছি। সিমের মাধ্যমেই মোবাইলে যোগাযোগের সকল সেবা পাওয়া যায়। আর এই সিম নিজ নামে নিবন্ধিত করে এরপর ব্যবহার করতে হয়। কেননা সিম কার্ডের মাধ্যমে নানারকম অপরাধমূলক কাজও করে থাকে অপরাধীরা। কাজেই নিজেকে নিরাপদ রাখতে এবং নিজ পরিচয় নিশ্চিত করতে সিম কার্ডের নিবন্ধন জরুরি।

তবে আপনার সিম কার্ড অন্য কারো হাতে চলে গেলে সে সহজেই সেই সিম কার্ড দিয়ে মোবাইল অপারেটরের সকল সেবা নিতে পারবে যদি আপনি সিম কার্ডটি অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করে বন্ধ করে রিপ্লেস না করেন। তবে এটি করতে সময় লাগতে পারে, ততক্ষণে আপনার সিম কার্ড ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজ করে ফেলতে পারে যে কেউ। এই বিষয়ে নিরাপত্তা দিতেই অত্যন্ত কার্যকরী সিম কার্ডে পিন কোড লক।

পিন কোড লক চালু করে দিলে আপনার দ্বারা নির্ধারিত পিন ছাড়া কোনো মোবাইলেই অপারেটরের সেবা ভোগ করতে পারবে না কেউ। আর তাই পিন কোড লক দেবার মাধ্যমে আপনি সহজেই নিরাপদ থাকতে পারেন এবং নিজের সিম নিজে ব্যবহার করার নিশ্চয়তা পেতে পারেন।

সিমের ক্ষেত্রেও পিন কোড লকের ব্যাপারটি মোবাইলে বা অন্য কোন ডিভাইসে পিন কোড দেয়ার মতোই। আপনি মোবাইলে প্রথম যখন সিম ঢুকিয়ে চালু করবেন তখন প্রথমেই সেট আপনার কাছে পিন কোড চাইবে। ৪ ডিজিট বা আরও বেশি সংখ্যার এই পিন দিয়ে এরপর আপনি মোবাইল অপারেটরের সকল সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন। সিমের পিন ভুলে গেলে লক খোলার জন্য বিশেষ রিসেট কোড আছে যার মাধ্যমে পিন পুনরায় পরিবর্তন করে নেয়া যায়। সেই কোডকে বলা হয় পাক কোড। পাক কোড বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন আমাদের ডেডিকেটেড পোস্ট থেকে।

আজকের পোস্টে আলোচনার বিষয়বস্তু সিমের পিন কোড লক হয়ে গেলে কী করবেন। সিমে পিন কোড লক করার অন্যতম একটি অসুবিধা হলো এই পিন কোড ভুলে গেলে নিজের সিম ব্যবহারে সমস্যায় পড়তে পারেন। পিন চালু করে পিন ভুলে যাওয়া খুবই সচরাচর একটি ভুল। পিন কোড লক হয়ে গেলে কী করতে হয় সে বিষয়েই আজকের আলোচনা। তাই এই সমস্যার সমাধান জেনে নিতে পুরো পোস্ট পড়ে নিতে পারেন।

সিম পিন কোড লক কীভাবে হয়?

সিমের পিন কোড লক সাধারণ অবস্থায় চালু থাকে না। অর্থাৎ আপনি যখন নতুন একটি সিম কেনেন তখন এই সিমে সেবা গ্রহণের জন্য কোনো পিন লক চালু থাকে না। সিম ফোনে প্রবেশ করালেই সিমের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় এবং সকল সেবা গ্রহণ করা যায়। গ্রাহককে সিমের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য পিন কোড লক চালু করে নিতে হয়। সাধারণত অপারেটর থেকে একটি ডিফল্ট পিন দেয়া থাকে। এই ডিফল্ট পিন হতে পারে ১২৩৪ কিংবা ১১১১। এই ডিফল্ট পিন পরিবর্তন করে নিজের মতো একটি পিন বসিয়ে নিতে হয়।

এই পিন কোড লক মোবাইলের সেটিংস হতে চালু করে নিতে হয়। বিভিন্ন মোবাইলে পিন কোড লক চালু করতে চাইলে এই পোস্ট দেখে নিতে পারেন। এছাড়া সিমের পিন কোডও দুই ধরনের হয়ে থাকে: PIN 1 এবং PIN 2। PIN 1 ব্যবহার করা হয় কল থেকে শুরু করে সকল ধরনের নেটওয়ার্ক সেবা লক করে রাখতে। অপরদিকে PIN 2 ব্যবহার করা হয় সিমের মধ্যে থাকা এসএমএস, কনট্যাক্ট ডাটা নিরাপদ রাখতে। দুটি পিন আলাদা বা এক রেখে চালু করা যায়।

তবে বিপত্তি বাঁধে যখন পিন কোড দেয়ার পর সেটি কেউ ভুলে যায়। আপনি মোবাইলের সেটিংস হতে পিন কোড চালু করে সেটি ভুলে গেলে নিজের সিম নিজেই ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়ে যাবেন। ভুল পিন কোড ৩বার প্রবেশ করালে পিন লক হয়ে যায়। এই অবস্থাকেই বলা হয় পিন কোড লক। সঠিক পিন ছাড়া সিমের কোনো সেবা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না। এভাবেই সিমের পিন কোড লক চালু হয়ে যেতে পারে।

সিমের পিন কোড লক হলে করণীয়

সিমের পিন কোড লক হয়ে গেলে পিন রিসেট করে ফেলতে হবে। অনলাইন অ্যাকাউন্ট বা ডিভাইস লকে পাসওয়ার্ড বা পিন ভুলে গেলে যেভাবে আপনাকে পাসওয়ার্ড রিসেট করে নিতে হয় এই ব্যাপারটিও সেরকম। তবে এখানে রিসেট করার জন্য কিছুটা ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

সিম লক পিন রিসেট করতে হলে আপনার একটি বিশেষ রিসেট কোডের দরকার হয়। এই রিসেট কোড প্রতিটি সিমের জন্য আলাদা। এই কোডটি পরিবর্তন ক রা যায় না, সিম কিনবার সময় নির্দিষ্ট ৮ ডিজিটের কোড দিয়ে দেয়া হয়। এই কোডের নামই হচ্ছে পাক কোড বা PUK Code। পাক কোড সিম কিনবার সময় আলাদা প্লাস্টিক কার্ডে লিখে দেয়া হয়। পিন কোড নিজের ইচ্ছামত পরিবর্তন কোড গেলেও পাক কোড পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। এই পাক কোড প্রবেশ করে পিন নতুন করে সেট করা যায়।

পাক কোডও সাধারণত দুটি হয়ে থাকে। PIN 1 রিসেট করতে PUK 1 কোড আর PIN 2 রিসেট করতে PUK 2 কোড দরকার হয়। তাই সিম কেনার সময় পাক কোড সংরক্ষণ করে রাখা উচিত সবার। পাক কোড আপনার সিমের অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

তবে অনেকেই আমরা পাক কোড সংরক্ষণ করে রাখি না। সিমের পিন কোড ভুলে গেলে এবং পাক কোডও যদি হারিয়ে ফেলেন তবে পিন কোড লক খোলার আরও কিছু অপশন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে অনলাইন কাস্টোমার সার্ভিস ব্যবহার করে পাক কোড দেখে নেয়া। সাধারণত আপনার অপারেটরের মোবাইল অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করে সিমের জন্য পাক কোড দেখে নেয়া যায়। প্রতিটি সিমের জন্য নির্দিষ্ট পাক কোড মোবাইল অপারেটরের ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে। কাজেই আপনি অ্যাপ সাইন আপ করলে নির্দিষ্ট অংশে পাক কোড দেখে নিতে পারবেন। ⭐️ অ্যান্ড্রয়েড ফোন নাকি আইফোন? কোনটি সেরা? জানুন

কোন কারণে অ্যাপে লগইন করতে না পারলে বা অ্যাপ ব্যবহার করা সম্ভব না হলে আপনার শেষ ভরসা আপনার মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার। অনলাইনে বা যে কোনো গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়ে আপনার সমস্যার বিস্তারিত তাদের জানাতে পারেন। আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও অন্যান্য তথ্য সাথে রাখতে হবে। সিমটি আপনার মালিকানায় থাকলে পরিচয় নিশ্চিত করে আপনাকে পাক কোড জানিয়ে দেয়া হবে কিংবা পিন রিসেট করে দেয়া হবে। কীভাবে আপনি বিভিন্ন অপারেটরের পাক কোড অনলাইনে দেখতে পারবেন সেটি নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন এই পোস্ট থেকে।

অর্থাৎ সিমে পিন কোড লক হয়ে গেলেও ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই যদি সিমটি আপনার নামে নিবন্ধিত থাকে। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে সিমের পাক কোড পাওয়ার অনেক রকম উপায় রয়েছে। সিমের পিন কোড লক চালু করলে পাক কোড প্রথম থেকেই সংগ্রহে রাখা উচিত। সিম কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত জিনিস। তাই নিজের সিম অন্যকে ব্যবহার করতে দেয়া উচিত নয়। সবসময় নিজ নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করলে সিম সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যার সমাধান সহজেই পাওয়া যায়।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *