জাভা ফোন কি? জাভা ফোনের সুবিধা জানুন

নতুন যুগের ফোন ব্যবহারকারী অনেকে না চিনলেও জাভা মোবাইল সম্পর্কে স্মার্টফোন যুগের আগে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ধারণা থাকার কথা। স্মার্টফোন এতোটা জনপ্রিয় হওয়ার আগে মোবাইল ফোন ছিল মূলত বর্তমানের ফিচার ফোন বা বাটন ফোন গুলোর মতো। সেসব ফোনের ক্ষেত্রে জাভা সাপোর্ট ছিল বেশ বড় একটি ফিচার। স্মার্টফোন বাজারে আসবার আগে জাভা ফোনগুলোই মূলত বাজার মাতিয়ে রাখতো। এসময় জাভা ফোনের বেশ কিছু ব্র্যান্ড বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো। মূলত ছোট বাটন ফোনের মধ্যেই বিভিন্ন বাড়তি অ্যাপ ও ফিচার দিতে সক্ষম ছিল জাভা ফোনগুলো। কাজেই যারা মোবাইলের মাধ্যমেই ইন্টারনেট ব্রাউজিং বা আরও স্মার্ট কোন কাজ করতে চাইতেন তারা জাভা ফোনকে প্রাধান্য দিতেন।

তবে জাভা ফোন এখনও পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি এই স্মার্টফোনের যুগে এসেও। কেননা কম দামে বাটন ফোনে বাড়তি ফিচার দিতে জাভা বেশ ভালো একটি উপায়। কাজেই যারা বাটন ফোন বা ডাম্বফোন ব্যবহার করে থাকেন তারা এখনও জাভা ফোনের সুবিধা নিতে পারেন। আজকের এই পোস্টে আলোচনা করা হবে জাভা ফোন কী বা কী কী বাড়তি ফিচার জাভা ফোনের মাধ্যমে উপভোগ করা যায় সে সম্পর্কে। তবে জাভা ফোন সম্পর্কে বুঝতে হলে আমাদের প্রথমেই জেনে নেয়া প্রয়োজন জাভা ব্যাপারটি কী সে সম্পর্কে।

জাভা কী?

জাভা সোজা কথায় একটি প্রোগ্রামিং ভাষা বা কম্পিউটারের ভাষা। আমরা বর্তমানে যে সকল অ্যাপ বা সফটওয়্যার দেখতে পাই তার মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রোগ্রামিং ভাষা। নানা রকমের প্রোগ্রামিং ভাষা রয়েছে। জাভা এদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও পুরাতন একটি প্রোগ্রামিং ভাষা। এই প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেছিলো সান মাইক্রোসিস্টেমস নামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৫ সালে, প্রায় ২৭ বছর আগে।

ধীরে ধীরে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষাও উন্নত হয়েছে। মোবাইল ফোন সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় মোবাইলে চলবে এমন একটি জাভা এডিশন তৈরি করার ব্যাপারে কাজ করতে শুরু করে সান মাইক্রোসিস্টেমস। ফলে তারা জাভার একটি হালকা ভার্সন তৈরি করে যার নাম দেয়া হয়েছিলো ‘জেটুএমই’। এই নতুন ভার্সনের ভাষার মাধ্যমে ডেভেলপাররা মোবাইলের জন্য সহজেই বিভিন্ন এপ্লিকেশন তৈরি করতে শুরু করেন। আর তাই জাভা প্রোগ্রামিং ভাষাও পায় জনপ্রিয়তা। তবে জাভা শুধুমাত্র যে মোবাইল অ্যাপ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় তাই নয়, এর মাধ্যমে বিভিন্ন পিসি অ্যাপ, সার্ভার অ্যাপও তৈরি করা হয়। জাভা এখনও পর্যন্তও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্রোগ্রামিং ভাষা। জাভা ব্যবহার করে ডেভেলপাররা অনেক রকম কাজ করে থাকেন। এমনকি এন্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরিতেও ব্যাপকভাবে জাভার ব্যবহার হয়েছে।

জাভা ফোন কি?

জাভা ফোন বলতে বোঝায় সোজা কথায় জাভা সাপোর্ট করে এমন ফোন। অর্থাৎ জাভার মোবাইল এডিশন ‘জেটুএমই’ অ্যাপ্লিকেশন রান করতে পারে এমন ফোনকেই মূলত জাভা ফোন বলা হয়। জাভা অ্যাপ্লিকেশন মূলত বাটন ফোনগুলোর জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। তাই বাটন ফোনগুলোতেই এটি দেখা যায় বেশি। আপনার ফোনটি যদি স্মার্টফোন না হয়ে থাকে; অর্থাৎ আইফোন, অ্যান্ড্রয়েড ফোন বা উইন্ডোজ ফোন না হয়ে থাকে তবে সুযোগ থাকে সেটি জাভা (জেটুএমই) সাপোর্টেড ফোন হওয়ার।

জাভা ফোনে জাভা জেটুএমই আপ্লিকেশনের মাধ্যমে নতুন নতুন বিভিন্ন ফিচার বা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস এর মতো অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর না থাকলেও ইন্টারনেট থেকে জাভা অ্যাপ ফাইল নামিয়ে তা ইন্সটল করা যায় জাভা ফোনে। স্মার্টফোনের পূর্বে জাভা ফোনগুলোই ছিল সবথেকে জনপ্রিয়। তখন জাভা ফোন তৈরি করে সুনাম কুড়িয়েছিল নোকিয়া, সিমেন্সের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড। মোবাইলের মাঝে প্রথম স্মার্ট ফিচার যুক্ত করার সুবিধা দিয়েছিল জাভা ফোন। এখনও পর্যন্ত বাটন ফোনের জন্য জাভার মতো ভালো অ্যাপ সিস্টেম তৈরি হয়নি তেমন একটা। যদিও বাটন ফোনের জন্য ‘কাই ওএস’ নামক আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম আছে। তবে আপনার কাছে যদি বাটন ফোন থেকে থাকে তবে সম্ভাবনা আছে সেটি (জেটুএমই) জাভা ফোন হবার।

জাভা ফোনের সুবিধা কি?

জাভা ফোনের সুবিধা অনেক। বাটন ফোনের মাধ্যমেই স্মার্ট ফিচার পেতে পারেন আপনি জাভা ফোনে। কাজেই বাটন ফোন কিনতে চাইলে জাভা ফোন দেখে কেনা যেতে পারে। বর্তমানে নোকিয়া, স্যামসাং ইত্যাদি বিখ্যাত ব্র্যান্ড এখনও জাভা ফোন তৈরি করে যাচ্ছে। এছাড়া অনেক চাইনিজ ব্র্যান্ডের ফোনেও জাভা সাপোর্ট সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। নিশ্চিত হতে আগে ফোনের সকল ফিচার পরীক্ষা করে নিন।

জাভা ফোনের মাধ্যমে আপনি স্মার্টফোনের মতোই বিভিন্ন অ্যাপ বাটন ফোনে ইন্সটল করে ফেলতে পারবেন। এসব অ্যাপ আপনাকে বিভিন্ন কাজ করার সুবিধা দিতে পারে। যেহেতু বাটন ফোনের প্রসেসিং পাওয়ার খুবই কম তাই জাভা অ্যাপের মাধ্যমে খুব বড় বা জটিল কাজ করা যায় না। তবে সাধারণ বিভিন্ন কাজে জাভা অ্যাপ আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

যেমন অপেরা মিনি ইন্টারনেট ব্রাউজার মূলত তাদের জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো জাভা ফোনের জন্য ব্রাউজার তৈরি করে। তখনকার টুজি ভার্সনের ধীরগতির ইন্টারনেটেও সহজে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য পারদর্শী ছিল অপেরা মিনি। অর্থাৎ জাভা ফোনে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন বিভিন্ন ব্রাউজার নামিয়ে। বর্তমানে বাটন ফোনেও ৪জি ইন্টারনেট থাকে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার আরও সহজ হয়ে গেছে।

এছাড়া বিভিন্ন অডিও প্লেয়ার বা ভিডিও প্লেয়ার অ্যাপ পাওয়া যায় জাভা ফোনের জন্য। জটিল হিসাব করতে ক্যালকুলেটর অ্যাপ কিংবা অডিও শুনতে অডিও প্লেয়ার অ্যাপও আপনি পেতে পারেন এর মাধ্যমে। এমনকি ইমেইল পাঠানোর বিভিন্ন অ্যাপও রয়েছে। জাভা অ্যাপ ছাড়াও জাভা ব্যবহার করে বিভিন্ন গেম ডিজাইন করা হতো নিয়মিত। খুব কম সাইজের কিছু গেম আপনি এখনও পেয়ে যাবেন ইন্টারনেটে। অর্থাৎ ফোনে বাড়তি বিভিন্ন ফাংশন যুক্ত করতে পারে জাভা ফোন। আর এটিই জাভা ফোনের মূল সুবিধা। আর তাই বাটন ফোনের ক্ষেত্রে জাভা আলাদা একটি বিশেষ ফিচার।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

What is Java phone and what are the benefits

👉 ইন্টারনেট সংযোগ যুক্ত বাটন ফোন

কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোন জাভা সাপোর্ট করে কিনা?

আপনার ফোনটি বাটন বা ফিচার ফোন হলে এবং সেটি শেষ কয়েক বছরের মধ্যে তৈরি হলে সেটি জাভা সাপোর্ট করে বলে ধরে নেয়া যায়। তবে আরও নিশ্চিত হতে আপনি আপনার ফোনের ম্যানুয়াল দেখে নিতে পারেন। জাভা সাপোর্ট করে কিনা বুঝতে আপনি জাভা অ্যাপ্লিকেশন ফাইল নামিয়ে সেটি ইন্সটল করবার চেষ্টা করেও দেখতে পারেন। জাভা অ্যাপ্লিকেশন ফাইলগুলো .jar নামের হয়ে থাকে সাধারণত।

কোথায় পাবেন জাভা অ্যাপ?

জাভা অ্যাপের অফিসিয়াল কোন স্টোর নেই। কাজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন উৎস থেকে আপনি আলাদা অ্যাপ ফাইল ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই বিশ্বস্ত উৎস হতে জাভা অ্যাপ ডাউনলোড করা উচিত। জাভা অ্যাপের জন্য জনপ্রিয় একটি ওয়েবসাইট হচ্ছে গেটজার। এছাড়াও ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুঁজলে আরও বিভিন্ন উৎস পেতে পারেন।

জাভা অ্যাপ ইন্সটল করতে অন্য কোন ডিভাইসে .jar ফাইলটি নামিয়ে এরপর ব্লুটুথ, ইউএসবি কেবল বা মেমরি কার্ড ব্যবহার করে আপনার জাভা সাপোর্টেড বাটন বা ফিচার ফোনে সেটি নিতে পারেন। এরপর ফোনের ফাইল ব্রাউজার ব্যবহার করে ইন্সটল করবার চেষ্টা করতে পারেন। অনেক ফোনে আগে থেকেই বিভিন্ন জাভা অ্যাপ ইন্সটল করে দেয়া থাকে সুবিধার জন্য। এমনকি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য বিশেষ অ্যাপও প্রি-ইন্সটলড থাকে। নতুন অ্যাপ ইন্সটল করার সুবিধা সকল ফিচার ফোনে নাও থাকতে পারে। কাজেই আপনার ফোনে অ্যাপ ইন্সটল করা যাবে কিনা সেটি বুঝতে বেশ কিছু অ্যাপ ইন্সটল করার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

অর্থাৎ জাভা ফোন এখনও আপনাকে বাড়তি বিভিন্ন সুবিধা দিতে পারে। তাই বাটন ফোনের ক্ষেত্রে জাভা ফোন ভালো একটি পছন্দ হতে পারে আপনার জন্য।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *