বিশ্বের বৃহত্তম পেমেন্ট নেটওয়ার্ক এর মধ্যে মাস্টারকার্ড অন্যতম। মাস্টারকার্ড বিশ্বের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে পার্টনারশিপ এর মাধ্যমে গ্রাহকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। এই পোস্টে মাস্টারকার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন।
মাস্টারকার্ড কি? – What is Mastercard?
মাস্টারকার্ড হলো একটি পেমেন্ট প্রসেসর নেটওয়ার্ক। মাস্টারকার্ড মূলত ভিসা, ডিসকভার, ইত্যাদি পেমেন্ট নেটওয়ার্ক এর মত কাজ করে। মাস্টারকার্ড এর আয়ের উৎস হলো প্রতি কার্ডের উপর ইস্যু করা বিভিন্ন চার্জ ও ফি। গ্রোস ডলার ভলিউম ফি থেকে মাস্টারকার্ড তাদের মূল আয় জেনারেট করে থাকে।
মাস্টারকার্ড কার্ডগুলো মেম্বার ব্যাংক ইস্যু করে থাকে, যেখানে মাস্টারকার্ড এর লোগো থাকে। এর মানে হলো মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ড যেখানে পেমেন্ট মেথড হিসেবে গ্রহণ করা হয়, সেখানে এই কার্ড কাজ করবে। পুরো পেমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে চারটি প্রধান পেমেন্ট কার্ড প্রসেসর রয়েছেঃ মাস্টারকার্ড, ভিসা, আমেরিকান এক্সপ্রেস ও ডিসকভার। প্রতিটি কোম্পানি পেমেন্ট নেটওয়ার্ক চালনা করে ও কার্ডের সুবিধা প্রদানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে পার্টনারশিপ করে।
মাস্টারকার্ড কিভাবে কাজ করে?
বিশ্বের ২০০টির অধিক দেশ ও অঞ্চলে প্রায় ১৫০টি মুদ্রায় মাস্টারকার্ড ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট ব্যবহার করে লেনদেন করা যায়। পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে মাস্টারকার্ড এর ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মাস্টারকার্ড এর ব্র্যান্ড ও পার্টনার ব্র্যান্ডগুলো মাস্টারকার্ড এর সফলতার প্রধান কারণ।
একটি সাধারণ মাস্টারকার্ড ট্রানজেকশনে মোট ৫টি সত্তা একসাথে কাজ করে। পেমেন্ট প্রসেসর এর পাশাপাশি লেনদেনে কনজ্যুমার, একাউন্ট হোল্ডার, ইস্যুকারী ব্যাংক, মার্চেন্ট ও স্বত্বাধিকারী ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সাধারণত একজন একাউন্ট হোল্ডার তার মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ডেড কার্ড ব্যবহার করে মার্চেন্টের কাছে পেমেন্ট করে থাকে। ট্রানজেকশন অথোরাইজেশন এর পর ইস্যুকারী ব্যাংক পেমেন্টের অর্থ প্রদান করে স্বত্বাধিকারী ব্যাংককে। এরপর লেনদেনের অর্থ একাউন্ট হোল্ডারের একাউন্ট থেকে চার্জ করা হয়।
মাস্টারকার্ড এর ধরন
যদিওবা কার্ডের যেকোনো ধরনের রিওয়ার্ড বা অফার নির্ভর করে ইস্যুকারী ব্যাংকের উপর, তবে মাস্টারকার্ড এর সুবিধার উপর ভিত্তি করে তিনটি আলাদা টিয়ার রয়েছেঃ
- স্ট্যান্ডার্ড
- ওয়ার্ল্ড
- ওয়ার্ল্ড এলিট
প্রতিটি টিয়ার বা ধরন এর সুবিধাসমূহ সম্পর্কে মাস্টারকার্ড এর ধরন সেকশনে আলোচনা করা হয়েছে। এই ধরন ব্যাংক ও স্থানভেদে আলাদা হতে পারে। উদাহরণঃ গোল্ড, প্লাটিনাম, টাইটানিয়াম প্রভৃতি। সুতরাং আপনি যদি আজ একটি মাস্টারকার্ড ডেবিট, ক্রেডিট বা প্রিপেইড কার্ড পান, তাহলে সেটা উপরের ক্যাটেগরিগুলোর বাইরে অন্য কোনো ক্যাটেগরিরও হতে পারে।
👉 ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড এর মধ্যে পার্থক্য কী?
মাস্টারকার্ড এর সুবিধা
মাস্টারকার্ড অরিজিনালি তিনটি প্যাকেজ অফার করে থাকে, যার উপর ভিত্তি করে প্রাপ্ত সুবিধা নির্ভর করে।
স্ট্যান্ডার্ড
মাস্টারকার্ড স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজ এর ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সুবিধাগুলো পাওয়া যাবেঃ
- কার্ড জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যবহারকারির কোনো দায়বদ্ধতা নেই, শর্ত প্রযোজ্য
- মাস্টারকার্ড এর গ্লোবাল হটলাইন নাম্বারে কল করে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে
- আইডি চুরি হওয়া থেকে নিরাপত্তা প্রদান করা হবে
ওয়ার্ল্ড
উল্লেখিত স্ট্যান্ডার্ড লেভেলের সুবিধার পাশাপাশি বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে ওয়ার্ল্ড প্যাকেজে। ওয়ার্ল্ড প্যাকেজের সুবিধাসমূহ হলোঃ
- মাসিক ফোনের বিল কার্ড দ্বারা পে করা যাবে ও ৬০০ডলার পর্যন্ত ড্যামেজ কভারেজ থাকছে
- মাস্টারকার্ড এর ট্রাভেল ও লাইফস্টাইল সার্ভিস অ্যাকসেস
- ট্রিপ প্ল্যানিং এসিস্ট্যান্স
- কম দামে হোটেল বুকিং এর সুবিধা
- বিলাসবহুল হোটেল এর সুবিধাসমূহ
- এয়ারপোর্টে বাড়তি সুবিধা
- পার্টনার সার্ভিসগুলোতে ডিসকাউন্ট ও মেম্বারশিপ সুবিধা
👉 ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডের পার্থক্য কী?
ওয়ার্ল্ড এলিট
স্ট্যান্ডার্ড ও ওয়ার্ল্ড লেভেল এর সুবিধার পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড এলিট প্যাকেজে আরো বাড়তি কিছু প্রিমিয়াম সুবিধা পাওয়া যাবে, যেমনঃ
- উচ্চ সেল ফোন ইস্যুরেন্স ক্লেইম লিমিট
- টিকেট, রিসার্ভেশন ইত্যাদি কাজ ফোনের মাধ্যমে করা যাবে
- মুভি টিকেট ক্রয়ে ছাড়, ইত্যাদি
আবারো জানিয়ে রাখছি আপনার কাঙ্ক্ষিত ব্যাংকে এই ক্যাটেগরি আলাদা হতে পারে। সেটা ব্যাংক থেকেই জানতে পারবেন।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
মাস্টারকার্ড এর অসুবিধা
মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে খুব সহজে কেনাকাটা করা যায়, তবে এর সহজলভ্যতার কারণে ব্যবহারকারীদের ঝণের বোঝা না চাইতেই ভারি হতে পারে। আবার যেহেতু খরচ করা অর্থের উপর ইন্টারেস্ট চার্জ রয়েছে, তাই এই অর্থের পরিমাণ সময়ের সাথে সাথে অনেক বেশিও হতে পারে। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় সম্ভব হলেও তা পরিশোধ বেশ ঝামেলার বিষয় হতে পারে। আবার নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাড়তি ফি প্রযোজ্য হবে।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারে আপনার বিল বাড়তে পারে, আবার ঠিক সময়ে বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে এটি আপনার ক্রেডিট স্কোর ও নষ্ট করতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অর্থ খরচ করা যেমন সহজ, একইভাবে খুব সহজে ঝণের কবলেও পড়ে যেতে পারেন।
আবার ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে প্রতারণার বিষয়টি বিদ্যমান। অর্থাৎ মাস্টারকার্ড এর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে যা বিবেচনায় রাখা উচিত।
👉 ক্রেডিট কার্ড কি ও কিভাবে পাবেন
মাস্টার কার্ড কিভাবে পাওয়া যায়
অন্য যেকোনো ক্রেডিট কার্ড এর মত মাস্টারকার্ড এর জন্য ব্যাংক থেকে আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশে সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক সহ আরো অনেক ব্যাংক মাস্টারকার্ড ইস্যু করে থাকে। মাস্টার কার্ড পেতে হলে প্রথমে আপনার ব্যাংকের হেল্পলাইনে কল করে জেনে নিন উক্ত ব্যাংক মাস্টারকার্ড অফার করে কিনা ও করলেও কার্ড নিতে কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংকে যোগাযোগ করে মাস্টারকার্ড এর জন্য আবেদন করলে নির্দিষ্ট কার্যদিবস এর মধ্যে মাস্টার কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন।
মাস্টারকার্ড ফি
মাস্টারকার্ড নেটওয়ার্কে থাকা কার্ডগুলোর ধরন ও এগ্রিমেন্টের উপর ফি ও চার্জ আলাদা হয়ে থাকে। তবে মাস্টারকার্ড মূলত কার্ডের ব্যবহারের উপর ফি চার্জ করে থাকে।
প্রতিটি লেনদেনে ৫টি সত্তা একসাথে কাজ করে, যথাঃ কার্ডহোল্ডার, মার্চেন্ট, অধিগ্রহণকারী ব্যাংক, ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান ও নেটওয়ার্ক প্রসেসর হিসেবে মাস্টারকার্ড। কার্ড ও মার্চেন্ট এগ্রিমেন্টের উপর কার্ডের ফি ভিন্ন হতে পারে।
নেটওয়ার্ক প্রসেসিং সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে মাস্টারকার্ড লেনদেন প্রসেসিং করে থাকে৷ কার্ড অথোরাইজেশন এর জন্য ইস্যুকারীকে মাস্টারকার্ড চার্জ করে থাকে কিন্তু মূল ফি থাকে লেনদেনে অন্তর্ভুক্ত ইন্টারচার্জ ফি যা ইস্যুকারী ও অধিগ্রহণকারীর মধ্যকার আলাপের মাধ্যমে ঠিক করা হয়।
👉 ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডের পার্থক্য কী?
আপনি কি মাস্টারকার্ড ব্যবহার করেন? আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্টে জানান!
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।
Thanks for sharing important informations. Waiting for breaking something new. 🙂
Thanks for staying with us!
Helpful Information, thanks!!