গেমিং পিসি কেনার সময় যা খেয়াল রাখা দরকার

গেমিং পিসি তৈরী করতে বা কিনতে প্রচুর পরিকল্পনা ও গবেষণার প্রয়োজন। গেমিং পিসি কেনা বা তৈরির বিষয়টি কিন্তু মোটেই সহজ নয়। বিশেষ করে কাস্টম পিসি তৈরি করতে গেলে অবশ্যই একাধিক বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। এই পোস্টে জানবেন গেমিং পিসি তৈরী করতে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

সাইজ

গেমিং পিসি তৈরী করার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে কম্পিউটারের মধ্যে থাকা হার্ডওয়্যার নিয়ে আগে কথা বলা হয়। কিন্তু ইন্টারনাল হার্ডওয়্যার নিয়ে কথা বলার আগে এক্সটেরিয়র নিয়ে প্ল্যান করা অধিক জরুরি।

বর্তমানে গেমিং পিসি বিভিন্ন শেপ ও সাইজে পাওয়া যায়। বড় ডেস্ক না থাকলে কিংবা ঘরে যথেষ্ট জায়গা না থাকলে সেক্ষেত্রে সাইজে ছোট কম্পিউটার এক্সটেরিয়র অর্থাৎ সিপিইউ কেস দেখতে পারেন।

পিসি সাইজ ছোট হলে তা ঘরে কম জায়গা দখল করে। তবে সাইজে ছোট হওয়ায় মধ্যকার কুলিং সিস্টেম ছোট হয়, যার ফলে এসব পিসি অপেক্ষাকৃত অধিক শব্দ তৈরী করে। ভবিষ্যতে আপডেট করার পরিকল্পনা থাকলে সহজে পার্টস লাগানো বা রিপ্লেস করা যায় এমন পিসি বাছাই করুন। 

প্রসেসর

প্রি-বিল্ট হোক বা কাস্টম-বিল্ট, গেমিং পিসি কেনার সময় প্রথম যে স্পেসিফিকেশনটি দেখতে হবে সেটি হলো প্রসেসর। এই প্রসেসর ই মূলত অধিকংশ অ্যাপ বা গেম কেমন চলবে তা ঠিক করে। প্রসেসর এর মোট কোর সংখ্যা এর উপর পারফরম্যান্স অনেকাংশে নির্ভর করে। বাজারে ২ থেকে ১৬ কোর এর সিপিইউ বা প্রসেসর পেয়ে যাবেন। আপনার বাজেট যদি কম হয়, তবে অন্তত ৪ কোর এর প্রসেসর বিবেচনা করুন।

এএমডি ও ইনটেল এর মধ্যে এএমডি এর রাইজেন প্রসেসরগুলো দাম হিসেবে অধিক ভ্যালু পাওয়া যায়। এএমডি এর প্রসেসরগুলোতে অধিক কোর থাকে বলে ভালো মাল্টিথ্রেডেড পারফরম্যান্স পাওয়া যায়।

বেশিরভাগ  মডার্ন গেমগুলো একইসাথে মাল্টিপল কোর ব্যবহার করে ভালো পারফরম্যান্স এর জন্য। তবে ভাল জিপিইউ ব্যবহার করলে একই দামের অন্যান্য প্রসেসরে প্রায় একই পারফরম্যান্স দেখা যায়। অর্থাৎ ভালো জিপিইউ থাকলে লেটেস্ট ও গ্রেটেস্ট টপ-এন্ড প্রসেসর এর প্রয়োজন হয়না। 

তবে সকল অ্যাপ ও গেম ভালোভাবে রান করতে চাইলে ভালো প্রসেসর নেওয়া উচিত। যেহেতু কিছু অ্যাপ সিংগেল কোর ও কিছু অ্যাপ মাল্টিকোরে চলে, তাই মানানসই প্রসেসর বাছাই ভালো পারফরম্যান্স পাওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত।

জিপিইউ

গেমিং পিসি এর কথা হচ্ছে আর জিপিইউ এর কথা হবেনা, তা কি করে হয়। গেমিং পিসি তৈরীর ক্ষেত্রে জিপিইউ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গেমে বেটার গ্রাফিক্স ও ফ্রেমরেট পেতে হলে ভালো সিপিইউ এর পাশাপাশি ভালো একটি জিপিইউ থাকা অত্যাবশ্যক।

জিপিইউ এর মডেল নাম্বার দেখে এর কার্যক্ষমতা অনেকাংশে যাচাই করা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিপিইউ এর সংখ্যা অধিক হওয়া মানে আরো ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে। তবে ওভারক্লকড জিপিইউ মডেলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি কিছুটা আলাদা। যেমনঃ ওভারক্লকড আরটিএক্স ২০৬০ এর পারফরম্যান্স প্রায় দামি আরটিএক্স ২০৭০ এর সমান।

গেমিং করার উদ্দেশ্যে তৈরী কম্পিউটারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেট হলো জিপিইউ বা গ্রাফিক্স কার্ড। গ্লোবাল সেমিকন্ডাক্টর শর্টেজ এর কারণে কিছু বছর ধরে গ্রাফিক্স কার্ডের দাম কিছুটা বেশি। তবে গেমিং পিসি তৈরী করতে গ্রাফিক্স কার্ড লাগবেই।

গ্রাফিক্স কার্ডের ভিডিও মেমোরি বা ভি র‍্যাম হলো আসল ফিচার। ভিডিও র‍্যাম বা ভি র‍্যাম যত বেশি হবে গেমের গ্রাফিক্স ততো বেটার হবে। একাধিক গ্রাফিক্স কার্ড ক্রয় না করে অধিক ভি র‍্যাম এর একটি গ্রাফিক্স কার্ড কেনা উত্তম।

তবে আপনার কম্পিউটারের অন্যান্য কম্পোনেট আপনার গ্রাফিক্স কার্ডের সাথে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে কিনা, সে বিষয়টি বিবেচনা করাও জরুরি।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

র‍্যাম

বেশি র‍্যাম মানে অধিক পারফরম্যান্স – এই ভুল ধারণাটিতে এখনো অনেকে বিশ্বাস করে। যেকোনো পিসির ক্ষেত্রে র‍্যাম গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটা নিয়ে চিন্তা করে কপালে ভাঁজ ফেলার দরকার নেই। কম্পিউটারের সকল পার্টস এর মধ্যে র‍্যাম এর দাম সবচেয়ে কম ও খুব সহজে পরিবর্তন করা যায়।

যেকোনো গেম স্মুথলি চালাতে চাইলে আপনার গেমিং পিসিতে কমপক্ষে ১৬জিবি র‍্যাম রাখুন। এর চেয়ে বেশি র‍্যাম বর্তমানে কোনো গেমের ক্ষেত্রে লাগেনা। এর চেয়ে বেশি র‍্যাম না কিনে সে অর্থ অন্য কোনো বেটার পার্টস কিনতে খরচ করুন।

তবে একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি, সেটি হলো কম্পিউটারের র‍্যাম গেম ছাড়াও অন্য অ্যাপও ব্যবহার করে থাকে। তাই কল অফ ডিউটি ওয়ারজোনের মত গেম এর সিস্টেম রিকোয়ারমেন্টস ৮জিবি র‍্যাম হওয়ায় স্বত্বেও আপনার ১৬জিবি র‍্যামের পিসিতে ল্যাগ করতে পারে।

স্টোরেজ

কম্পিউটার এর স্টোরেজ হিসেবে হার্ডডিস্ক এর চেয়ে এসএসডি সবদিক থেকে এগিয়ে। দামে বেশি হলেও এসএসডি ব্যবহার করে কয়েকগুণ বেশি স্পিড পাওয়া যায়।

আপনার যদি গেমিং এর পাশাপাশি অন্য কাজের জন্য অনেক বেশি স্টোরেজ প্রয়োজন হয়, তবে এসএসডি এর পাশাপাশি এক্সট্রা হার্ডডিস্ক ব্যবহার করতে পারেন। তবে চেষ্টা করুন আপনার গেমগুলো এসএসডি তে রাখতে।

👉 এসএসডি স্টোরেজ নাকি হার্ড ডিস্ক – কম্পিউটারে কোনটি ভাল হবে?

মাদারবোর্ড

এতক্ষণ ধরে আলোচনা করা সকল পার্টস যেখানে শোভা পাবে, সেটি হলো মাদারবোর্ড। মাদারবোর্ড কেনার ক্ষেত্রে কৃপণতা করবেন না, তবে অতিরিক্ত খরচেরও কোনো দরকার নেই। মাদারবোর্ড সিলেক্ট করার সময় আপনার অন্যান্য কম্পোনেট মাদারবোর্ডে সাপোর্ট করে কিনা তা যাচাই করুন। আবার পরে কোনো পার্টস আপগ্রেড এর ইচ্ছা হলে মাদারবোর্ড সে সুবিধা প্রদান করে কিনা সেটিও জেনে নিন।

মনিটর

সব পার্টসে টাকা খরচ করলেন, কিন্তু সবকিছুর ফলাফল যে মনিটরে দেখবেন সেটিই যদি ভালো না হয়, তাহলে তো সব টাকা জলে যাবে। মনিটর কেনার সময় রেজ্যুলেশন ও রিফ্রেশ রেট গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বিষয়।

আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক গেম টুর্নামেন্টগুলোতে অংশগ্রহণ করে থাকেন, তবে অবশ্যই হাই রিফ্রেশ রেটের মনিটর লাগবে। আবার ডিসপ্লে রেজ্যুলেশন কমপক্ষে এইচডি+ রাখার চেষ্টা করুন। যে গ্রাফিক্স কার্ড ই ব্যবহার করুন না কেনো, এর চেয়ে কম রেজ্যুলেশনের ডিসপ্লেতে কোনো ভালো আউটপুট ই পাবেন না।

গেমিং পিসি কেনার সময় যা খেয়াল রাখা দরকার

অন্যান্য পার্টস

গেমিং এর কথা যেহেতু হচ্ছে, মাউস ও কিবোর্ড এর নাম তো আসবে। আপনার বাজেট যদি কিছুটা টাইট হয়, তবে প্রথমে অন্য পার্টসে টাকা খরচ করুন, তবে চলনসই মাউস ও কিবোর্ড দেখতে পারেন। আবার অনেকে শখের বসে আরজিবি মাউস ও কিবোর্ডকে প্রাধান্য দেন। বলতে গেলে মাউস ও কিবোর্ড এর বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দ।

আর গেমিং কম্পিউটার এর ক্ষেত্রে অবশ্যই হেডফোন লাগবে। যেকোনো গেমে বর্তমানে হেডফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভালো হয় কোনো মাইকযুক্ত হেডফোন কিনলে। তবে আপনি চাইলে হেডফোন ও মাইক আলাদা ও কিনতে পারেন, এতে অবশ্য খরচ কিছুটা বেশি হবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খরচ করুন

কোনো গেমিং পিসি তৈরির সময় আপনার গেমিং এর পছন্দ মাথায় রাখবেন। আপনি কি ধরণের গেমপ্লে এক্সপেরিয়েন্স চান, সে অনুসারে আপনার গেমিং পিসি এর পার্টসগুলো বাচাই করুন।

আপনি যদি কি ধরণের সেটাপ তৈরী করবেন সে বিষয়ে কনফিউজড থাকেন, তবে কোনো পিসি এক্সপার্ট এর সাথে কথা বলতে পারেন। তবে গেমের ভিজ্যুয়াল আউটলুক যেহেতু সিপিইউ ও গ্রাফিক্স কার্ড দ্বারা ঠিক হয়, তাই এই দুইটি বিষয়ে অধিক খরচ করাই যেতে পারে।

আপনার বাজেট ও পছন্দের উপর আপনার গেমিং পিসি এর পারফরম্যান্স নির্ভর করে। অসাধারণ দেখতে সিপিইউ কেস আপনার কম্পিউটারের পারফরম্যান্স বাড়িয়ে দিবেনা। তাই প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে খরচ করুন ও তারপর বাহ্যিক সৌন্দর্যে গুরুত্ব দিন।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *