কম্পিউটার ঠাণ্ডা রাখার ১০ উপায়

আপনার পিসিতে অসংখ্য ইলেক্ট্রনিক কম্পোনেন্ট রয়েছে। প্রায় সবগুলোই কম্পিউটার চলা অবস্থায় গরম হয়। তবে কাজের ক্ষেত্রে যেমন সিপিইউ আর জিপিইউ সবচেয়ে বেশি কাজ করে, ঠিক তেমনি তাপ উৎপাদনের দিক দিয়েও এই দুটো কম্পোনেন্টই এগিয়ে থাকে। একটি ভাল পিসিতে তাপ নির্গমন করার ব্যবস্থাও ভালই হয়ে থাকে। কিন্তু কোনো কারণে এই ব্যবস্থা ভাল না হলে উৎপাদিত তাপ বাইরে বের না হতে পেরে আপনার পিসিকে গরম করে তোলে এবং তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে আপনার পিসি’র বড় ধরনের ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে। তাই পিসিকে ঠাণ্ডা রাখা খুবই জরুরি। তো চলুন দেখে নেয়া যাক পিসিকে ঠাণ্ডা রাখার ১০টি কার্যকর টিপস।

১। গরম বাতাস বেরিয়ে যেতে দিন

সবচেয়ে সহজ এবং প্রথম টোটকা হল, আপনার পিসি’র বায়ুছিদ্রগুলো দিয়ে বাতাস বেরিয়ে যেতে দিন। কারণ পিসিতে সিপিইউ ও জিপিইউ ঠাণ্ডা রাখতে হিট সিঙ্ক থাকে। এই হিট সিঙ্ক তাপ গ্রহণ করে কুলিং ফ্যানের মাধ্যমে সেই তাপকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু আপনার পিসির এয়ার ভেন্টের আশেপাশে যদি কোন বাধা থাকে তাহলে সেই বাতাস বেরিয়ে যেতে পারে না। পিসি যদি দেয়ালের পাশে রাখেন তাহলে পিসিটি দেয়াল থেকে অন্তত কয়েক ইঞ্চি দূরে রাখা উচিত। তাছাড়া টেবিল বা ডেস্কের নিচের অংশে রাখলে সেই অংশের দরজা বা ঢাকনা যেন খোলা থাকে সেদিকে নজর রাখবেন।

ল্যাপটপের ক্ষেত্রে আলাদা কুলিং প্যাড/ডিভাইস ব্যবহার করুন

২। পিসির কেসিং বন্ধই রাখুন

অনেকে মনে করে থাকেন যেহেতু পিসির কেসিং এর বায়ুছিদ্র গরম বাতাস বের হতে সাহায্য করে সেহেতু কেইসিং এর সম্পুর্ন ঢাকনা খোলা রাখলে নিশ্চয়ই গরম বাতাস আরো ভালোভাবে বের হয়ে যাবে। যুক্তি ঠিক আছে! কিন্তু ঢাকনা খোলা রাখলে বাতাস বেশি বের হওয়ার পাশাপাশি আপনার সিপিইউ’তে ধূলাবালি বেশি পরিমাণে ঢুকবে। এতে আপনার কুলিং ফ্যান জ্যাম হয়ে বাতাস প্রবাহ আরো কমিয়ে দিবে। তাই কেসিং বন্ধ রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৩। পিসি নিয়মিত পরিষ্কার করুন

জমে থাকা ধূলাবালি যেহেতু ফ্যান জ্যাম করে দেয় তাই এসব নিয়মিত পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত বিরতিতে পিসির কেসিং খুলে সম্পুর্ণটা পরিষ্কার করা উচিত। বাজারে পিসি ও ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র পরিষ্কারের জন্য অনেক ধরনের ক্লিনার পাওয়া যায়। তবে পিসি পরিষ্কারের সময় এটি রুমের বাইরে নিয়ে গিয়ে পরিষ্কার করে আনাটা বেশি কার্যকর।

৪। পিসিটা একটু সরিয়ে রাখুন

অনেকসময় এমন হতে পারে যে আপনার পিসি যে কোণে রেখেছেন ঘরের সেই কোণটাতে তুলনামূলক বেশিই তাপমাত্রা থাকে কিংবা ঐ কোনটাতে হয়তো বাইরে থেকে ধূলাবালিও সরাসরি এসে পড়ে। এমন হলে পিসিটা সরিয়ে অন্য কোনো অংশে নিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো কাজ হবে।

৫। ভাল মানের একটা কুলিং ফ্যান লাগান

আপনার সিপিইউ কেসিং বা পিএসইউ এর সাথে কুলিং ফ্যান অনেকসময় দেয়াই থাকে। কিন্তু এই কুলিং ফ্যানগুলো বেশি পাওয়ারফুল হয় না। তাই আপনি ভালো পারফরমেন্স চাইলে আলাদা এক বা একাধিক ভালো মানের কুলিং ফ্যান কিনে লাগাতে পারেন। বাজারে অনেক ধরনের কুলিং ফ্যান থেকে আপনার বাজেট ও রুচি অনুযায়ী বেছে নিন।

৬। ওভারক্লকিং একদম নয়

যারা সিপিইউ’কে ওভারক্লকিং করেন তারা যদি পিসি ঠাণ্ডা রাখতে চান তাহলে ওভারক্লকিং করা (বিশেষ উপায়ে অস্বাভাবিক বেশি পারফরমেন্স আদায় করা) এখনই বন্ধ করুন। কারণ ওভারক্লকিং সরাসরি পিসির কর্মদক্ষতার উর প্রভাব ফেলে এবং এতে আপনার পিসি অনেক বেশি তাপ উৎপন্ন করে। একান্তই ওভারক্লকিং করতে চাইলে ঠাণ্ডা রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আগে নিয়ে নিন।

আরো জানুনঃ প্রসেসর কি? প্রসেসর কিভাবে কাজ করে?

৭। পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিটটাকেই বদলে ফেলুন

আপনার পিসির কেসিংয়ে যদি কোন কুলিং ফ্যান না থেকে থাকে তাহলে পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট এর সাথে থাকা ফ্যানটাই আপনার পিসি ঠাণ্ডা রাখার একমাত্র ভরসা। যদি মনে করেন যে এর ফ্যানটি যথেষ্ট স্পিডে ঘুরছে না তাহলে পুরো পিএসইউ (পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট)টাই বদলে ফেলতে হবে আপনাকে।

৮। বিভিন্ন কম্পোনেন্টের জন্য আলাদা ফ্যান

যদিও আপনার সিপিইউ’টাই সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন করে কিন্তু বর্তমানের কম্পিউটারের ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে জিপিইউ, র‍্যাম, স্টোরেজ ইত্যাদিও যথেষ্ট তাপ উৎপাদন করে। তাই আপনি যদি জিপিইউ, মেমরি ইত্যাদি কম্পোনেন্ট এর জন্য আলাদাভাবে ডেডিকেটেড ফ্যান কিনে ইন্সটল করতে পারেন তাও ভাল হয়।

৯। ওয়াটার কুলিং সিস্টেম

আধুনিক শক্তিশালী পিসিগুলোর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফ্যান দিয়ে বাতাস বাইরে পার করে দেয়াই যথেষ্ট নয়। এজন্য আপনি ওয়াটার কুলিং সিস্টেম ইন্সটল করতে পারেন যা পানির মাধ্যমে তাপ শোষণ করে এবং এটা অনেক বেশি কার্যকর।

১০। ফেইজ চেঞ্জ ইউনিট

এটি একটি অত্যাধুনিক কুলিং টেকনোলজি। এটি মূলত সিপিইউ এর জন্য এক ধরনের রেফ্রিজারেটর।

এটা সিপিইউ ঠাণ্ডা করতে রেফ্রিজারেটরের পদ্ধতিই ব্যবহার করে। এমনকি এটা আপনার সিপিইউ কে ফ্রিজ করে দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে। তবে এগুলো অত্যন্ত দামি হওয়ায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহার নেই বললেই চলে।

আশা করি এই পোস্টটি আপনাকে দরকারী কিছু তথ্য দিয়েছে। পরবর্তী পোস্ট পাওয়ার জন্য সাথেই থাকুন!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,550 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *