একটি শিশু জন্মের ৪৫দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করতে বলা হয়ে থাকে। সকলের জন্য জন্ম সনদ বা বার্থ সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে প্রায় সকল ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন হয়, হোক সেটা স্কুলের ভর্তি বা চাকরির আবেদন।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আবেদন করা যাবে। আবার ঘরে বসেও এই ফরম পূরণ করার সুযোগ রয়েছে। তবে জন্ম নিবন্ধনের আবেদনের সময় অসচেতন বা অসতর্ক থাকলে প্রদত্ত তথ্য ভুল হতে পারে।
জন্ম সনদে বিভিন্ন ধরনের ভুল হতে পারে। কারো দেখা যায় নিজের নাম ভুল আসে, আবার কেউ মা কিংবা বাবার নাম ভুল করে বসেন। তবে জন্ম সনদের সকল ধরণের ভুল সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ জন্ম সনদে কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে থাকলে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই পোস্টে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর আবেদন করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জোগাড় করে রাখতে হবে। সংশোধন এর প্রক্রিয়াতে এই কাগজগুলো প্রয়োজন হবে। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলোঃ
- আবেদনকারীর অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধন
- পিতা ও মাতার অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধন
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ / টিকা সনদ / তথ্য প্রমাণের জন্য কার্যকরী যেকোনো সনদ
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন নিয়মাবলী
জন্ম সনদ সংশোধনের আগে জন্ম নিবন্ধ সংশোধন এর কিছু নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- জন্ম নিবন্ধনে পিতা / মাতার তথ্য সংশোধন করতে হলে পিতা / মাতার জন্ম সনদ লাগবে
- পিতা / মাতার নাম যদি তাদের জন্ম সনদে ঠিক না থাকে, তবে আগে সেটা সংশোধন করে তবেই জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করা যাবে
- জন্ম নিবন্ধনের সময় ইতিমধ্যে পিতা / মাতার নিবন্ধন নাম্বার প্রদান করে থাকলে, জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের পর পিতা / মাতার সংশোধিত নাম দেখা যাবে
- পিতা / মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলে বা আবেদনকারীর জন্ম ০১/০১/২০০১ এর আগে হলে, জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধনের আবেদনের সময় পিতা / মাতার নাম সংশোধন করা যাবে। এই ক্ষেত্রে পিতা / মাতা মৃত হলে মৃত্যুর প্রমাণপত্র সাবমিট করতে হবেনা
- আবেদনকারীর পিতা / মাতার জন্ম সনদ না থাকলে বা পিতা / মাতা মৃত হলে এবং জন্ম ০১/০১/২০০১ এর পরে হলে সংশোধনের আবেদনের ক্ষেত্রে মৃত্যুর প্রমাণপত্র অর্থাৎ ডেথ সার্টিফিকেট সাবমিট করতে হবে
উল্লিখিত নিয়ামবালী পড়ে আগে যাচাই করে নিন আপনার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধনে কি ধরনের কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করার পর তবেই জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করুন।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন আবেদন এর নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধনের আবেদন করা আসলে অনেক সহজ। অনেকে এই প্রক্রিয়াকে জটিল মনে করে থাকেন। উল্লেখ্য যে জন্ম সনদ আগে থেকেই অনলাইন না থাকলে, আগে অনলাইন করে নিতে হবে। তারপর জন্ম সনদ সংশোধনের আবেদন করা যাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর আবেদন করবেন।
- জন্ম সনদের তথ্য সংশোধন এর আবেদন করতে ভিজিট করুন https://bdris.gov.bd/br/correction লিংকে
- প্রথমে প্রদর্শিত জন্ম সনদের তথ্য সংশোধন ফর্মের প্রথমে বক্সে জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রদান করুন
- দ্বিতীয় বক্সে ১৭ডিজিটের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন নম্বর লিখুন ও অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করুন
- প্রদর্শিত তথ্য সঠিক হলে জন্ম সনদের তথ্য দেখতে পাবেন। তথ্যের পাশে থাকা নির্বাচন করুন বাটনে ক্লিক করুন
- এরপর “আপনি কি নিশ্চিত?” মেসেজ দেখালে কনফার্ম বাটনে ক্লিক করুন। এখন জন্ম সনদ সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হবে
- এবার আপনার যে পৌরসভা বা ইউনিয়ন থেকে জন্ম নিবন্ধন ইস্যু করা হয়েছে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা সিলেক্ট করুন
- এরপর আসবে তথ্য সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের ধাপ
- প্রদর্শিত ড্রপ ডাউন মেন্যু থেকে যে বিষয়টি সংশোধন করতে চান, সেটি সিলেক্ট করুন
- উল্লেখ্য যে, নাম, পিতা ও মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয়তা, লিঙ্গ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সংশোধন এর জন্য সিলেক্ট করা যাবে
- এরপর সংশোধনের জন্য সিলেক্ট করা তথ্য সিলেক্ট করার পর সংশোধিত তথ্য বক্সে সঠিক তথ্য প্রদান করুন। কারণ হিসেবে “ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছে” সিলেক্ট করুন
- একাধিক তথ্য সংশোধন করতে চাইলে “আরও তথ্য সংশোধন করুন” বাটনে ক্লিক করে একাধিক তথ্য সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন
- ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য সংশোধন এর জন্য বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য প্রদান করুন
- এরপর তথ্য সংশোধন আবেদনকারীর তথ্য প্রদান করতে হবে। এখানে আবেদনকারীর সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক, আবেদনকারীর নাম, ফোন নম্বর ও ইমেইল প্রদান করতে হবে
- আবেদনকারী নিজের জন্ম সনদ সংশোধনের আবেদন করলে সেক্ষেত্রে “নিজ” সিলেক্ট করতে হবে, এক্ষেত্রে শুধু ফোন নাম্বার আর ইমেইল প্রদান করলে হবে
- এরপর জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন এর সাথে সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করতে “সংযোজন” বাটনে ক্লিক করুন
- এরপর প্রয়োজনীয় ফাইল নির্বাচন করে ওপেন বাটনে ক্লিক করুন। আপলোড করা ফাইলের প্রিভিউ দেখতে পাবেন, ড্রপ ডাউন মেন্যু থেকে ফাইলের ধরন সিলেক্ট করুন। এরপর স্টার্ট বাটনে ক্লিক করলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড হয়ে যাবে
এতটুকু পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হলে এবার জন্ম সনদ সংশোধন আবেদনের ফি প্রদানের পালা। সে সম্পর্কে বিস্তারিত পরের সেকশনে আলোচনা করা হলো।
👉 অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করার উপায় জানতে এখানে ক্লিক করুন
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন ফি
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন এর ক্ষেত্রে ফি প্রযোজ্য। এই ফি দুই উপায়ে পরিশোধ করা যাবে – একটি হলো চালান এর মাধ্যমে, অন্যটি হলো অনলাইনে। জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদনের সময় ফি আদায় বাটনে ক্লিক করে সংশোধনের আবেদন ফি জমা করা যাবে।
সংশোধনের আবেদন সফল হয়েছে জানিয়ে মেসেজ আসলে বুঝতে হবে আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে। আবেদনের পর মনে করে প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে আবেদনপত্র প্রিন্ট করে নিন। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভায় গিয়ে জমা করুন।
মনে রাখবেন, শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদন করলেই আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন গৃহীত হবেনা। সংশোধনের আবেদন সঠিকভাবে করার নিয়ম হলো ফরম পূরণের পর তা প্রিন্ট করে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় গিয়ে জমা দেওয়া। তবেই আপনার আবেদন গৃহিত হবে।
👉 অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম
আবেদনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাখিলকৃত কার্যালয় থেকে আপনার আবেদন যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সংশোধিত অনলাইন জন্ম সনদ হাতে পেয়ে যাবেন। জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের জনানা কমেন্ট সেকশনে, আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন শীঘ্রই। এছাড়া সাহায্যের জন্য কল করতে পারেন ১৬১৫২ নম্বরে।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।
Both data with solution