ফ্রিল্যান্সিং কি আপনার জন্য ভাল হবে? এখানে জেনে নিন

অনেকের কাছে ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ক্যারিয়ার অপশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসংখ্য তরুণ-তরুণী সাধারণ চাকরির বাইরে এসে ফ্রিল্যান্সিংকে নিজের জীবনের প্রধান ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে চান। ফ্রিল্যান্সিং মানে স্বাধীনতা হলেও অনেক ক্ষেত্রে এটি চ্যালেঞ্জিং একটি প্রক্রিয়া। সবার জন্য ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং বেস্ট অপশন নাও হতে পারে। 

ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আপনার নিজেকে করা উচিত। এসব প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে নিশ্চিত হতে পারবেন আপনার জন্য ফ্রিল্যান্সিং যথাযথ পেশা নাকি না। ফ্রিল্যান্সিং করে স্বনির্ভর হওয়া ও নিজের ব্যবসা নিজে এগিয়ে নেওয়া বিষয়টি যতটুকু সহজ মনে হয়, বাস্তবে কিন্তু তা নয়।

অনেক মানুষ চিরাচরিত চাকরির পরিবর্তে ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চায় শুধুমাত্র তাদের বাধাধরা নিয়মের মধ্যে কাজ করতে ইচ্ছে হয়না বলে। এই ভাবনা থেকে ফ্রিল্যান্সিং করা কি ঠিক? এই পোস্টে জানবেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা বিবেচনা করে আপনি বুঝতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আপনি প্রস্তুত কি না।

একা কাজ করা

ফ্রিল্যান্সিং মানে নিজের বস নিজে হওয়া, নিজের কাজ নিজে করা – এসব বিষয় শুনে উদ্ধুদ্ধ হওয়া খারাপ কিছুনা। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণের আগে আপনি যে বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করবেন, উক্ত বিষয়ে একা কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন কিনা সে বিষতে নিশ্চিত হয়ে নিন।

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি অধিকাংশ সময় একা কাজ করবেন। আপনি যদি অফিস বা স্টুডিওতে কাজ করতে অধিক পছন্দ করে থাকেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য মানানসই করার জন্য সেরকম সেটআপ গড়ে নিতে হবে। ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই একা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে হবে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট

একজন ফ্রিল্যান্সার তার কাজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকেন। অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সার এর সময়ের সুষ্ঠু ব্যবহারের দায়িত্ব একজন ফ্রিল্যান্সারের নিজের। সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে নিজের সময়কে ম্যানেজ করা, ঠিকভাবে টাইম-ট্র‍্যাকিং টুল ব্যবহার করা ও প্রতিটি মুহুর্তের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। আপনি যদি সময়ের দিকে নজর রাখার পাশাপাশি নিজের কাজকে গুছিয়ে রাখতে সক্ষম হন, তবে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য ভাল হতে পারে।

একাধিক কাজের বোঝা

ফ্রিল্যান্সার মানে কিন্তু নিজের ব্যবসার পরিচালক নিজে হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ একজন ফ্রিল্যান্সারের কাজের হিসাব রাখা থেকে শুরু করে কাজের পারিশ্রমিক বুঝে নেওয়া পর্যন্ত, সকল কাজ নিজ থেকে করতে হয়। তাই ফ্রিল্যান্সিংকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া আগে এটি নিশ্চিত হোন যে আপনি একাধিক কাজের বোঝা নিতে পারেন কিনা।

ফোকাস

ফ্রিল্যান্স লাইফস্টাইল মানে হলো যেকোনো পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়ে নিজের কাজ করা। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে ফোকাস রেখে কাজ করতে না পারলে ফ্রিল্যান্সিং কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা বেশ ঝামেলার বিষয় হতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে যেমন কাজের স্বাধীনতা রয়েছে, তেমনি যেকোনো পরিস্থিতিতে কাজে ফোকাস রেখে কাজ সম্পন্ন করার দক্ষতা থাকা জরুরি।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

প্রেরণা

নতুন কিছু শুরু করার প্রথম দিকে বেশ প্রেরণা থাকে। তবে দিন পার হওয়ার সাথে সাথে একই কাজের ক্ষেত্রে হীনমন্যতার স্বীকার হওয়ার ব্যাপারটি অসম্ভব নয় কিন্তু। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে কাজের প্রেরণা দিতে হয়। আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া, ফোন, বিনোদন, ইত্যাদি বিষয়ে অধিক সময় ব্যয় করতে থাকেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং কে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে পস্তাতে হয়ে পারে।

ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা

ফ্রিল্যান্সিং এর পথে হেঁটে সফল হওয়ার বিষয়টিতে কোনো ধরনের গ্যারান্টি নেই। এমনকি অনেক মানুষ কিছুদিন ফ্রিল্যান্সিং করে হাল ছেড়ে দেন। আবার অনেকে হতাশায় ভোগেন। তবে কঠোর পরিশ্রম, দৃড় লক্ষ্য ও বুদ্ধিমান প্ল্যান ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং এর পথে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

ফ্রিল্যান্সিং কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে হলে প্রথম এর অনিশ্চয়তাসমূহকে এড়িয়ে চলতে হবে। অসাধারণ ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার তৈরী করতে বেশ সময় লাগে বটে, কিন্তু একবার আপনি ভালো ক্লায়েন্ট পেয়ে গেলে উক্ত ক্লায়েন্টদের সাথে সুসম্পর্ক ভবিষ্যতে বেশ লাভজনক হতে পারে। তাই ঝুঁকি ও অনিশ্চিয়তা সাথে থাকবে, এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝেই ফ্রিল্যান্সিং এ নামা উচিত।

👉 ফ্রিল্যান্সিং কি ও ফ্রিল্যান্সিং করে কিভাবে অনলাইনে আয় করবেন

আত্মবিশ্বাস

একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে এই পথে ঝুঁকি আছে জেনেও আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। আপনার নিজের উপর ও নিজের কাজের উপর আস্থা না রাখলে ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে নিয়ে তেমন সুবিধা করতে পারবেন না। বিশেষ করে নিজের পারিশ্রমিক বুঝে নেওয়া বা খারাপ ক্লায়েন্টের সাথে ডিল করলে আত্মবিশ্বাস এর ব্যাপক প্রয়োজন হয়। আপনার যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে, তব্র ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার আপনার কাছে বেশ সমস্যাপূর্ণ মনে হতে পারে।

কমিনিউকেশন

আত্মবিশ্বাসের প্রধান একটি উৎস হলো ক্লায়েন্টের সাথে সঠিকভাবে কমিনিউকেশন বা কথা বলতে পারা। কোনো কাজের প্রতি আপনার আত্মবিশ্বাস ব্যবহার করে ক্লায়েন্টকে বুঝাতে সামর্থ্য না হলে কাজ হয়ত পাবেন, কিন্তু আপনার যথার্থ মূল্যায়ন পাবেন না। তাই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে ঠিকভাবে ক্লায়েন্টের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

ফ্লেক্সিবিলিটি

সব ক্লায়েন্ট একই ধরনের নয়। মাঝেমধ্যে কোনো ক্লায়েন্টের ইউনিক প্রয়োজনের জন্য নিজেকে কিছুটা পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিজের সৃজনশীলতা ও ফ্লেক্সিবিলিটিকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হয়। তাই সব ধরনের কাজের পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

👉 ফ্রিল্যান্সিং করে আয় সম্পর্কে সেরা প্রশ্নগুলো এবং উত্তর

দক্ষতা

অনেকে মনে করেন, যেকেউ ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে পারেন। ধারণাটা আসলে আংশিক সত্য, কেননা কোনো ধরনের দক্ষতা বা স্কিল ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ আপনার একটি দক্ষতার অধিকারী হতে হবে যার সেবা অন্যরা পেতে টাকা খরচ করতে রাজি।

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই অন্যদের পেছনে ফেলতে আপনার যথেষ্ট দক্ষতা থাকা কিন্তু জরুরি একটি বিষয়। আপনি যে কাজটি সবচেয়ে ভালো পারেন, সেটি বেছে নিন ও কাজ চালিয়ে যান। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে প্রদান উপাদান হলো দক্ষতা।

ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং বেশ অসাধারণ পছন্দ। বিশেষ করে নিজের দক্ষতা ও আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে আয় করার ব্যাপারটি বেশ মজার। কাজের স্বাধীনতার পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে ফ্রিল্যান্সিংকে বেছে নেওয়া যেতে পারে। উল্লেখিত কারণগুলোর মধ্যে বর্ণিত বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য কেমন পেশা হতে চলেছে। 

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *