ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা জানুন

ক্রেডিট গড়ে তোলা, ক্যাশ ব্যাক পাওয়া, বা প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ইত্যাদি ক্রেডিট কার্ডের উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা। আবার ক্যাশ বহন করতে হয়না বলে বেশ নিশ্চিন্তে থাকা যায়। তবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে শুধু সুবিধা রয়েছে, কোনো অসুবিধা নেই; এমন ভাবলে বোকামি হবে। এই পোস্টে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা

প্রথমে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাসমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ক্রেডিট রেকর্ড তৈরী

ক্রেডিট কার্ড সঠিকভাবে ব্যবহারে ক্রেডিট রেকর্ড তৈরী হয়। আর ক্রেডিট কার্ডের খরচের লিমিট এই ক্রেডিট রেকর্ডের উপর নির্ভর করতে পারে। আপনার ক্রেডিট হিস্ট্রি যদি ভালো হয়, তবে ক্রেডিট কার্ড ভিত্তিক বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবেন। আপনি যদি নিয়মিত ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করেন এবং ভাল পরিমাণ লেনদেন করেন তাহলে আপনার ক্রেডিট স্কোর বা সুনাম বৃদ্ধি পাবে। ফলে আপনি পরবর্তী কার্ড বা লোনের ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারেন।

রিওয়ার্ডস

ক্যাশ ব্যাক ও পয়েন্টস আকারে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে রিওয়ার্ডস পেতে পারেন। এছাড়া অনেক ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডার সাইন আপ বোনাসও প্রদান করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে।

প্রতারণা থেকে নিরাপত্তা

ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীদের লেনদেনকে নিরাপত্তা প্রদান করতে যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখে। কোনো কারণে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো লেনদেন আপনার কার্ড থেকে দেখেন, তবে তৎক্ষণাৎ ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডারকে ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন। আবার কার্ড খুঁজে না পেলে বা হারিয়ে ফেললে ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডারকে কল করে জানালে উক্ত কার্ড ব্লক করে আপনাকে নতুন কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

ক্যাশ বহন করতে হয়না

ক্যাশ ব্যবহার করা থেকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা অনেকক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক। এছাড়া ওয়ালেটে অল্প জায়গা নেয় বলে ক্রেডিট কার্ড বহন করতে কোনো সমস্যা হয়না। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে ক্রেডিট কার্ড একটি আদর্শ পেমেন্ট মেথডে পরিণত হয়েছে। কোথাও যাওয়ার সময় বেশ সহজে ক্রেডিট কার্ড পকেটে বহন করা যায়। আবার এই কার্ড হারিয়ে ফেললে সেক্ষেত্রে নতুন কার্ড ইস্যু করে নেওয়া যায় অল্প সময়ের মধ্যে।

খরচের হিসাব রাখা

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে করা সকল লেনদেন ট্র্যাক ও রেকর্ড করে থাকে ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান। আপনার লেনদেনের হিস্টোরি, অর্থাৎ মার্চেন্টের নাম, খরচের পরিমাণ, তারিখ, ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এইসব তথ্য হাতের নাগালে থাকার ফলে খরচের হিসাব রাখা যায় বেশ সহজে।

পার্কস

বেশিরভা ক্রেডিট কার্ডে এক্সটেনসিভ পার্কস থাকে যা ফ্রড প্রটেকশন, প্রাইস প্রটেকশন ও এক্সটেনডেড ওয়ারেন্টি এর মত সুবিধা প্রদান করে। এছাড়া রেন্টাল কার ইন্স্যুরেন্স, রোডসাইড এসিস্টেন্স ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীগণ এক্সক্লুসিভ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

কিস্তিতে পণ্য কেনা এবং তাৎক্ষণিক খরচ না হওয়া

ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কেনা যায়। বড় আকারের পেমেন্ট সহজেই দীর্ঘমেয়াদি ছোট ছোট কিস্তিতে বিভক্ত করে লাইফস্টাইল উন্নত করা সম্ভব। অপরদিকে ক্রেডিট কার্ডের বিল তাৎক্ষণিক দিতে হয়না বলে জরুরি প্রয়োজনে অর্থের ব্যবস্থা করা বেশ সহজ হয়।

ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা

ক্রেডিট কার্ড মানেই শুধু রিওয়ার্ড বা সাইন-আপ বোনাস এর সমাহার নয়। এটি একটি ফিনান্সিয়াল টুল যা গুরুত্ব সহকারে ব্যবহার না করলে অযথা ঝণ ও ফি দিতে হয়। তাই ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা জেনে রাখা জরুরি। চলুন ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

👉 ক্রেডিট কার্ড কি ও কিভাবে পাবেন

অতিরিক্ত খরচের মানসিকতা

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক খরচের মানসিকতা সৃষ্টি হতে পারে। যেহেতু ক্রেডিট কার্ডের মূল লক্ষ্য আপনার জমানো টাকার বাইরে খরচের সুবিধা প্রদান করা, তাই হিসাব করে খরচ না করার ফলে বাড়তি খরচের অভ্যাস তৈরী হতে পারে, যেটা অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতি বয়ে আনে।

ঝণ

ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত খরচের ফলে ঝণের কবলে পড়তে পারেন। নিয়মিত খরচের হিসাব না রাখলে অল্প সময়ের মধ্যে অর্থের স্বল্পতায় ভোগার পাশাপাশি অতিরিক্ত ঝণ জমে যেতে পারে। তাই যে পরিমাণ অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব, শুধুমাত্র সে পরিমাণ অর্থ খরচ করাই শ্রেয়। মনে রাখতে হবে, ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে আপনি কিন্তু ধার করা অর্থ ব্যবহার করছেন। সুতরাং হিসাব রেখে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে ঝণের মুখোমুখি হতে বেশি সময় লাগবেনা।

👉 ক্রেডিট কার্ড এর খরচ কমানোর উপায়

ফি ও ইন্টারেস্ট

ক্রেডিট কার্ডের ফি ও ইন্টারেস্ট এমন দুইটি বিষয় যা ব্যবহারকারীর অজান্তেই বাড়তে পারে। বিশেষ করে ইন্টারেস্ট বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে যে তা ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। 

ইন্টারেস্ট এর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী দেরিতে পেমেন্ট, ব্যালেন্স ট্রান্সফার, ক্যাশ এডভান্স, ফরেইন ট্রানজেকশন, ইত্যাদি বিষয়ে ফি চার্জ করে থাকে। কিছু ইস্যুকারী তো এমনকি শুধুমাত্র কার্ড ব্যবহারের জন্য বার্ষিক ফি চার্জ করে।

এই ধরণের ইন্টারেস্ট ও অন্যান্য ধরণের ফি সম্পর্কিত সমস্যা এড়ানোর সেরা উপায় হলো বাকি টাকা (অন্তত মিনিমাম পেমেন্ট) প্রতি মাসে পরিশোধ করে ফেলা। তা সম্ভব না হলে, যতটুক সম্ভব, বাকি টাকা পেমেন্ট করে দেওয়া উত্তম। তবে এতে আপনার খরচ বাড়বে ছাড়া কমবেনা।

👉 ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড এর মধ্যে পার্থক্য জানুন

ক্রেডিট স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব

ক্রেডিট কার্ড ঠিকমত ব্যবহার করতে না জানলে এটি আপনার ক্রেডিট স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর ক্রেডিট স্কোর কমলে উল্লেখিত আলাদা সুবিধাসমূহ, যেমনঃ অটো লোন, কার লোন, ইত্যাদি নাও পেতে পারেন।

👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন। এখানে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন কনফার্ম করুন!

ঠিক সময়ে বিল পে না করা, একদমই বিল পে না করা বা উপলব্ধ ক্রেডিট লিমিটের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে ক্রেডিট স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ক্রেডিট কার্ডের স্কোর ঠিক রাখতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সঠিক নিয়মগুলো অনুসরণ করা উচিত।

জীবনের সকল বিষয়ের মত ক্রেডিট কার্ডের ও সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। তবে আপনি যদি এই প্লাস্টিকের কার্ড সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না জানেন, তবে বেশ সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে ভালোভাবে জেনেশুনে তবেই ক্রেডিট কার্ডের জন্য এপ্লাই করা উচিত।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *