প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এদের ব্যবহারও দিনদিন আরো সহজ হয়ে উঠছে। আমাদের দেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার যখন শুরু হয় তখন একটি সিম কার্ডের সাইজ ছিল প্রায় একটি ক্রেডিট কার্ড বা এটিএম কার্ডের সাইজের সমান। এরপর এলো প্রচলিত সাইজের ছোট সিম যেগুলো সাধারণত ফিচার ফোনে ব্যবহার করা হয়। সিম কার্ড আরও ছোট হয়ে পরে এলো মাইক্রো সিম।
এরপর সিমগুলো আরো ছোট হয়ে বাজারে এলো ন্যানো সিম, যা আজকাল স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে ই-সিম। এগুলো হচ্ছে ভার্চুয়াল সিম। ই-সিম প্রযুক্তি ব্যবহার করলে আপনার কোনো প্লাস্টিকের সিম ব্যবহারের দরকার পড়বেনা। ফোনে থাকা বিল্ট-ইন চিপে সিম ভার্চুয়ালি ইনস্টল করা হবে।
ফোনের ক্যামেরা দিয়ে একটি কিউআর কোড স্ক্যান করেই ফোনে ইনস্টল করতে পারবেন সম্পূর্ণ ফাংশনাল একটি সিম, অর্থাৎ মোবাইল সংযোগ! ই-সিম ফোনে ইনস্টল করার পর আপনি সাধারণভাবে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কল, মেসেজ বা ডাটা সার্ভিস উপভোগ করতে পারবেন। এটি প্রচলিত সিমের সুবিধার পাশাপাশি বাড়তি সুবিধা দেবে।
এটি ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইসে ভয়েস কল, মেসেজ, সেলুলার ডাটা ও ওয়্যারলেস ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। আইফোন ১০এস ও আইফোন ১০আর এর পর থেকে সকল আইফোনে ই-সিম সাপোর্ট রয়েছে, যা এই নতুন প্রযুক্তিকে বেশ ভালোভাবে প্রোমোট করেছে। এছাড়া অন্যান্য ব্র্যান্ডের অনেক ফোনেই এই ফিচারটির সাপোর্ট আছে।
সাধারণ সিম এর পরিবর্তে ই-সিম ব্যবহার করে অনেক সুবিধা পাওয়া গেলেও এখনো সকল ব্যবহারকারী ইসিম প্রযুক্তিকে সাদরে গ্রহণ করেনি। এই প্রযুক্তিটি নিয়ে অনেকের মনে আছে বেশ কিছু ভুল ধারণা। এই পোস্টে ই-সিম সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা এবং সেগুলোর সঠিক তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ই-সিমের নিরাপত্তা
ই-সিম যেহেতু ডিজিটাল অথেনটিকেশন ব্যবহার করে, তাই অনেকে মনে করেন ই-সিম সাধারণ সিমের মত ততোটা নিরাপদ নয়। তবে এই ধারণা ঠিক নয়। eUICC ব্যবহার করে ই-সিম স্টোর করা থাকে, যা হলো ফিজিক্যাল সিম কার্ড থেকে ই-সিমকে আলাদা করে।
eUICC হলো ডিভাইসে থাকা একটি ডেডিকেটেড চিপ যা সাধারণ সিম কার্ডের মত একই নিরাপত্তা ই-সিমে প্রদান করে। অর্থাৎ সাধারণ সিম এর মতো একই এলগরিদম ব্যবহার করলেও বাড়তি হার্ডওয়্যার ছাড়াই ই-সিম একইভাবে কাজ করে।
এছাড়া ই-সিম জেনারেশনের প্রক্রিয়া জিএসএমএ দ্বারা খুবই সুরক্ষিত, যা সাইবার থ্রেট থেকে নিরাপত্তা প্রদান করে। ই-সিম এর নিরাপত্তা আরেকটি বিষয় নিশ্চিত করে, সেটি হলো শুধুমাত্র এক ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে এমন কিউআর কোড। এই কোড ফিজিক্যাল কার্ডের মত সোয়াইপ বা ক্লোন করা যায়না।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
ই-সিমের প্রাইভেসি
কিছু ব্যক্তি ডিজিটাল ও ওয়্যারলেস সার্ভিসকে সিকিউরটির কমতি বলে যাচাই করে। তবে ই-সিম এর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সত্য নয়। ই-সিম এর মাধ্যমে ট্রান্সমিট করা ডাটা এনক্রিপটেড থাকে ও এটি সাধারণ সিম কার্ডের মত একই ৪জি, এলটিই ও ৫জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকে।
ফিজিক্যাল সিম কার্ড সার্ভিস প্রোভাইডারের মত ই-সিম ক্যারিয়ারগুলো লোকাল প্রাইভেসি আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ ডিজিটাল প্রাইভেসি সম্পর্কে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ছাড়া এই ডিজিটাল-অনলি মোবাইল সার্ভিস ব্যবহার করা যাবে নিশ্চিন্তে।
ই-সিম এর দাম
ই-সিম এর সুবিধাসমূহ সম্পর্কে ইতিমধ্যে কমবেশি সবার জানা আছে। তবুও ই-সিম সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা খুব প্রচলিত, যেটি হলো সাধারণ সিমের চেয়ে ই-সিম বেশ দামি হয়ে থাকে। বাস্তবিক পক্ষে ই-সিম বেশ সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় ও ফিজিক্যাল সিম কার্ড থেকে এর ব্যবহার অধিক সুবিধার।
👉 আইফোনের নামের শুরুতে ‘আই’ দ্বারা কী বোঝায়?
ই-সিম এমন অনেক সুবিধা প্রদান করে, যা ফিজিক্যাল সিম কার্ডে কখনো পারেনা। আবার ই-সিম এক্টিভেট করতে সাধারণ সিমের মতো দোকানে গিয়ে কিনতে হচ্ছেনা। ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে ই-সিম অপারেটরে সাইন-ইন করা যাবে।
তবে ই-সিম এর দাম আহামরি না হলেও বর্তমানে যেসব ই-সিম সাপোর্টেড ডিভাইস পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো দাম অনেক বেশি। গুগল, অ্যাপল, স্যামসাং ও হুয়াওয়ে এর টপ-টিয়ার ডিভাইসগুলোতে বর্তমানে ই-সিম সাপোর্ট দেখতে পাবেন। আর আপনি যদি এত দাম দিয়ে ওসব সেট ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার কাছে ইসিম এর দাম তেমন একটা বেশি মনে হবেনা!
ই-সিমে ব্যবহারযোগ্য প্ল্যানের সংখ্যা
চিরাচরিত সিম ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা সবচেয় যে বিষয়ে বেশি অভিযোগ করেন, সেটি হলো একটি সিম কার্ড দিয়ে শুধু একটি অপারেটর ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ একাধিক সিম ব্যবহার করতে হলে হয়তো ডুয়াল সিম ফিচারের ফোন লাগে অথবা নতুন ফোন কিনতে হয়। অনেকে মনে করেন সাধারণ সিম এর এই সমস্যা ই-সিম এর ক্ষেত্রেও রয়েছে।
👉 এক NID দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা সকল সিম যাচাই করার উপায়
মজার ব্যাপার হলো ই-সিম ব্যবহার করে একজন গ্রাহক নিজের ইচ্ছামত একাধিক সেলুলার প্ল্যান ইনস্টল করতে পারবেন। এছাড়া একই চিপ স্লট এর মাধ্যমে একাধিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা সম্ভব ই-সিম এর মাধ্যমে। অর্থাৎ শুধুমাত্র একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে একাধিক অপারেটর এর আলাদা সেলুলার প্ল্যান ব্যবহার করা যাবে ই-সিম এর কল্যাণে।
ই-সিমের মাধ্যমে একাধিক অপারেটর ব্যবহার করা যাবে একই স্লটের দ্বারা। এজন্য আপনাকে সিম ট্রে খোলা ও পিন দিয়ে খোঁচাখুঁচি করতে হবেনা। কেউ চাইলে ব্যবসা ও ব্যাক্তিগত ব্যবহারের জন্য একই ই-সিমে একাধিক অপারেটর ব্যবহার করতে পারবেন। আবার এক অপারেটরে ডাটা ও অপর অপারেটর টেক্সট করতেও ই-সিম এর একাধিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
👉 ই-সিম কি? eSIM ব্যবহারের সুবিধা কি?
ই-সিম এর মাধ্যমে অনেক নতুন সুবিধা ও সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গিয়েছে। সাধারণ সিম কার্ডের সকল সমস্যা দূর করতে চলেছে এই নতুন সিম প্রযুক্তি। যেহেতু ইতিমধ্যে ই-সিম সম্পর্কে আপনার সকল ভুল ধারণা ভেঙ্গে গিয়েছে, আপনি এবার চাইলে নিশ্চিতে ই-সিম ব্যবহার করতে পারেন। আরো জানুনঃ গ্রামীণফোন ই-সিম সম্পর্কে যেসব তথ্য আপনার জানা দরকার।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।