আইফোনের নামের শুরুতে ‘আই’ দ্বারা কী বোঝায়?

অ্যাপল এর প্রোডাক্ট লাইনে রহস্যময় একটি “i” রয়েছে। আইম্যাক, আইপ্যাড, আইপড থেকে শুরু করে এমনকি জনপ্রিয় ডিভাইস, আইফোনে পর্যন্ত রয়েছে এই “i” লেটার। অ্যাপল এর প্রোডাক্টে থাকা এই “i” অক্ষরের মানে কি? চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ইতিহাস।

মূলত অ্যাপল ব্র‍্যান্ডের সকল প্রোডাক্টকে একই ছাদের নিচে আনতে এই “i” প্রিফিক্স ব্যবহার করা হয়। আইম্যাক, আইপড, ইত্যাদি অ্যাপল ডিভাইসে থাকা এই “i” লেটার অনেকটা অ্যাপল ব্র‍্যান্ডের পরিচয় হয়ে গিয়েছে। ফ্যান দ্বারা চালিত অ্যাপল উইকি এর তথ্যমতে ইতিমধ্যে এই “i” প্রিফিক্সযুক্ত মোট ২৩টি প্রোডাক্ট বাজারে এনেছে অ্যাপল।

এই ব্র‍্যান্ডিং প্রথম দেখা যায় ১৯৯৮সালে মুক্তি পাওয়া আইম্যাকে। iMac ছিলো একটি ইনোভেটিভ কম্পিউটার যা ইন্টারনেট এর প্রসারকে ত্বরান্বিত করতে তৈরী করা হয়। কোম্পানি হিসেবে প্রায় বন্ধ হতে চলা অ্যাপলকে ঘুরে দাড়াতে সাহায্য করে ১৯৯৮সালের এই আইম্যাক।

আইম্যাক এর ডেভলপমেন্ট চলমানকালীন সময়ে স্টিভ জবস এই ফ্রেন্ডলি-লুকিং কম্পিউটারকে “ম্যাকম্যান” নাম দিতে চেয়েছিলেন। পরে এডভার্টাইজিং ফার্মের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অ্যাপল কোলাবোরেটর, কেন সেগাল “আইম্যাক” নামটি প্রস্তাব করেন। তিনি এই “i” অক্ষরের মাধ্যমে ইন্টারনেটকে নির্দেশের কথা জানান। তিনি “I” কে (ক্যাপিটাল লেটার) সাজেশন হিসেবে প্রদান করলেও অ্যাপল শেষ পর্যন্ত “i” কে নির্বাচন করে যা পরবর্তীতে ফাইনালাইজ করা হয়।

মে মাসের ৬তারিখ আইম্যাক ঘোষণার ইভেন্টে স্টিভ জবস কয়েকমিনিট ধরে আইম্যাক নামটি নিয়ে কথা বলেন। তিনি উক্ত ইভেন্টে বলেন, “আইম্যাক নামটি এসেছে ইন্টারনেট এর এক্সাইটমেন্ট ও ম্যাকিনটোশ এর সিম্পলিসিটি থেকে।”

তিনি আরো জানান এটিকে এই সিরিজের প্রথম প্রোডাক্ট হিসেবে ট্যাগ করার কারণ হলো কাস্টমারগণ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সাধারণ একটি কম্পিউটার ডিমান্ড করছিলেন, যার সমাধান ছিলো এই নতুন প্রোডাক্ট।

যদিওবা বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট অনেকটা অক্সিজেনের মত সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছে, কিন্তু ১৯৯৮সালে সহজে ইন্টারনেট অ্যাকসেস করার সুবিধা এতটা সহজসাধ্য ছিলনা। তবে এই “i” এর মানে শুধুমাত্র ইন্টারনেট নয়। কেন সেগাল এর আসল পিচ এর মধ্যে এই “i” এর আরো মানে জানান, যেমনঃ “individual,” “instruct,” “inform,” “inspire” ইত্যাদি।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

“আমাদের কাছে “i” এর আরো অন্যান্য অর্থ আছে,” বলেন স্টিভ জবস। “আমরা একটি পারসোনাল কম্পিউটার কোম্পানি ও এই প্রোডাক্ট এর জন্মই হলো নেটওয়ার্ক স্থাপন করা। এটি আবার একটি সুন্দর দেখতে স্ট্যান্ডেলন প্রোডাক্ট ও। আমরা এটিকে শিক্ষার কাজেও ব্যবহার হতে দেখতে চাই। শিক্ষার্থীরা যদি এই কম্পিউটার ক্রয় করে তবে এটি তাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে অসাধারণ সংযোজন হতে পারে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের তথ্যের উৎস খুঁজে পেতে এটি সাহায্য করতে পারে। আমরা আশা করছি এই প্রোডাক্টটি আমাদেরকে ভবিষ্যতে আরো ভালো প্রোডাক্ট তৈরীতে উদ্ধুদ্ধ করবে।”

অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারলাম আইম্যাক এর “i” এর মানে প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেট ধরা হলেও, এই কনসেপ্টকে আরো প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছে অ্যাপল। আইফোন থেকে শুরু করে অ্যাপল এর সকল প্রোডাক্টে এই ব্র‍্যান্ডিং এর ব্যবহার অন্যদের থেকে অ্যাপলকে আলাদা করার পাশাপাশি একটি ইউনিক পরিচয় প্রদান করেছে।

👉 আইফোন কেন এত দামি ও জনপ্রিয়?

আইম্যাক এর পর পোর্টেবল মিউজিক প্লেয়ার, আইপড নিয়ে আসে অ্যাপল যা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। আইপড এর পর একই ব্র‍্যান্ডিং এর অন্য ডিভাইস নিয়ে আসে যেগুলোও ভালো জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে অ্যাপলের অসংখ্য প্রোডাক্টে এই “i” ব্র‍্যান্ডিং এর দেখা মিলবে। দেখার বিষয় হচ্ছে এই ব্র‍্যান্ডিং এর বাইরে অ্যাপল নতুন কিছু তৈরী করে কিনা।

তাই “আই” দিয়ে অ্যাপল একক কিছু বোঝায় না। যদিও এর শুরুটা “ইন্টারনেট”, “ইনফর্ম” প্রভৃতি ছিল, কিন্তু বর্তমানে এই আই এর মানে অনেক কিছু যেটা আসলে অফিসিয়ালি জানায়না অ্যাপল। আই মানে হতে পারে ইন্সপায়ার, ইনোভেটিভ, ইনভেনশন – আর ইতিবাচক অনেক কিছু। আবার ‘ইন্টারনেট’ ও হতে পারে!

তাই আপনি যদি আইফোনের শুরুর আই এর মানে জানতে চান, তাহলে জেনে রাখুন, অ্যাপল অফিসিয়ালি এর কোনো মানেই বর্তমানে স্বীকার করেনা। তারা শুধু এই ‘আই’ ব্র্যান্ডিংকেই কাজে লাগায় কারণ এটি এখন অ্যাপলের একটি প্রতীক হয়ে গেছে। আপনার কৌতূহলকে সংবরণ করার জন্য শুধু এটাই ধরে নিন যে, আই দিয়ে যত ভাল কিছু হওয়া সম্ভব সেগুলোকেই বোঝাচ্ছে অ্যাপল পণ্যের নামের শুরুতে থাকা ঐ ‘আই’।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *