এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন দিয়ে সুপার কম্পিউটার!

কবি বলেছেন, ‘ছোট বালুকার কণা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল’- অর্থাৎ ছোট ছোট অবদান থেকেই বড় কিছু করা সম্ভব। আর এই মূলনীতি কাজে লাগিয়ে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইবিএম নতুন একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে যেখানে এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনের অব্যবহৃত কার্যক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সেগুলো দিয়ে অধিক শক্তিশালী সুপার কম্পিউটিং নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।

এই প্রকল্পের কার্যনীতি খুব সরল। অনেকগুলো এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন এই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকবে। ফোনগুলোর মালিকরা যখন ফোনে কোনো কাজ করবেননা, অর্থাৎ ডিভাইসগুলো অলস পড়ে থাকবে, তখন আইবিএম নেটওয়ার্কে যুক্ত থেকে ফোনগুলো নিজেদের প্রসেসিং পাওয়ার শেয়ার করবে, এবং এভাবে অনেকগুলো ডিভাইস একত্রিতভাবে সুপার কম্পিউটারের মত শক্তিশালী হবে। এই নেটওয়ার্কে কম্পিউটারও ব্যবহৃত হবে।

এটি একটি বিশাল সিটিজেন সায়েন্স প্রজেক্ট যা আইবিএম দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা শৈশব ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন মালিকদের প্রতি তাদের ফোনের কিছুটা প্রসেসিং ক্ষমতা ‘দান করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

নিজেদের এন্ড্রয়েড ফোনের প্রসেসিং ক্ষমতা ডোনেট করে এতে সাহায্য করার জন্য ব্যবহারকারীদের একটি মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। আইবিএম দ্বারা ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব কমিউনিটি গ্রিড (World Community Grid ) প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের পর থেকে ৭০০,০০০ সেচ্ছাসেবক গবেষকদের এভাবেই জটিল সব কম্পিউটেশনে সাহায্য করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ইবোলা, জিকা, যক্ষ্মা এবং এইচআইভি এইডস বিষয়ক গবেষণাও।

প্রাথমিকভাবে এই নেটওয়ার্কে শুধুমাত্র কম্পিউটারের প্রসেসিং ক্ষমতাকে কাজে লাগানো হলেও কয়েক বছর ধরে এতে অ্যান্ড্রয়েড ফোনও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বর্তমানে এটি ছয় প্রকারের শৈশব ক্যান্সার নিয়ে কাজ করছে যার মধ্যে ব্রেইন টিউমার, লিভার ও হাড়ের ক্যান্সার অন্যতম।

এই অ্যাপটি ব্যবহারের জন্য আপনার ফোনে নূন্যতম ৯০% চার্জ  এবং ওয়াই-ফাই কানেক্টেড থাকতে হবে। এই অ্যাপ্লিকেশনটি অনধিকারমূলক কোন কিছুই করবেনা বলে জানিয়েছেন আইবিএম কর্পোরেট সিটিজেন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক জুয়ান হিন্দো।

তিনি আরো বলেন, গবেষকরা সিমুলেশন টুল চালিয়ে শৈশব ক্যান্সারের প্রতিকার ও সতর্কতামূলক বার্তা পেতে কাজ করছেন।

ভার্চুয়াল সুপার কম্পিউটার

এই গবেষণাকার্য চালানোর জন্য অনেক কম্পিউটারের প্রয়োজন, কিন্তু গবেষকরা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়ে একটি সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিটি পরীক্ষায় তাদের লক্ষ লক্ষ সিমুলেশন চালানোর প্রয়োজন হয় বলে হিনদো জানান।

তাই এমন গবেষণা সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় এর পুরোটাই গবেষণাগারে করা প্রায় অসম্ভব।

আইবিএম এর ঐ নির্দিষ্ট অ্যাপ ইনস্টল করার পর, যখন আপনার ফোনে অব্যবহৃত কম্পিউটিং ক্ষমতা থাকবে তখন এই অ্যাপটি আপনার ফোনকে এসব হিসাবনিকাশের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। এরপর আপনি যদি ফোনে কোনো কাজ করেন, উদাহরণস্বরূপ, একটি মেসেজ লেখা শুরু করবেন, তখন অ্যাপটি বিরটি নেবে। ফলে আপনার কাজে কোনো বাঁধা পড়বেনা।

হিনদো অনুমান করেন যে এই ব্যবস্থাটি প্রতিদিন এক-দুই লক্ষ গণনা সম্পন্ন করে।

এই প্রযুক্তি এর আগে ব্যবহার করা হয়েছে নিউরোব্লাস্টমা নামক শৈশব ক্যান্সারের কারণ সনাক্ত করার গবেষণায়। এটির চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রায় ২০০,০০০ সেচ্ছাসেবক কাজ করেছেন।

গবেষণাকার্যে এটি তাদের একটি ভার্চুয়াল সুপার কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে যাতে একজন সাধারণ নাগরিকও গবেষণাজনিত কাজ করছেন এবং বিজ্ঞানের উন্নতিতে অবদান রেখেছেন বলে জানান হিনদো ।

অ্যাপল অ্যাপ প্ল্যাটফর্মের কাঠামোর কারণে এই নেটওয়ার্কড কম্পিউটিং ব্যবস্থা বর্তমানে আইওএস (iOS) ডিভাইসে নেই।

এই কমিউনিটি গ্রিড সিস্টেম বিজ্ঞানীরা বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু শর্ত হচ্ছে, তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং অন্য বিজ্ঞানীদের ব্যবহারের জন্য এক্সেস দিতে হবে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,545 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *