দুঃখিত গ্রামীণফোন

grameenphone logo abs

এই পোস্টটি যখন লিখছি, তখন আমার কম্পিউটারে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই। গত দশ বছর ধরে আমি গ্রামীণফোন ইন্টারনেট ব্যবহার করছি। আর ভয়েস কল করার জন্য জিপি মোবাইলের বিকল্প কখনোই চিন্তা করিনি। এরও অবশ্য কিছু কারণ আছে।

আমাদের গ্রামে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কই ছিল সবচেয়ে ভাল। ২০০৫ এর দিকে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দিলেও জিপি নেটওয়ার্ক পাওয়া যেত। ২০০৭/০৮ এ আমাদের বাড়ীর কাছে জিপির বিটিএস (নেটওয়ার্ক টাওয়ার) বসানো হয়। এরপর আরও দুটি অপারেটরের নেটওয়ার্ক আসে।

অন্যান্য অপারেটরের চেয়ে গ্রামীণফোনের কলরেট ও অন্যান্য খরচ বেশি হলেও শুধুমাত্র নেটওয়ার্ক কাভারেজ ও আত্নীয়-স্বজনদের জিপি মোবাইল থাকায় ০১৭ থেকে আর অন্য নম্বরে যাওয়া হয়নি।

গ্রামীণফোনের যে ব্যাপারটি আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি তা হচ্ছে এর ইন্টারনেট সার্ভিস। সেই স্কুল জীবন থেকে ইউনিভার্সিটির শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব কয়টি মোবাইল অপারেটরের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে দেখেছি। জিপি’র চেয়ে তাদের প্যাকেজ মূল্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কম।

কিন্তু কোনোটিই বেশীদিন ব্যবহার করে যেতে পারিনি। টেলিটক থ্রিজি ব্যবহার করেছি কিছুদিন। শহরে টেলিটকের ভাল স্পিড পাওয়া যায়। প্যাকেজ মূল্যও তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, টেলিটকের নেটওয়ার্ক কাভারেজ খুবই কম। আমাদের গ্রামে এয়ারটেল পর্যন্ত ফুল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, কিন্তু টেলিটকের নেটওয়ার্ক পেতে হলে বাড়ির ছাদে উঠে মোবাইল নিয়ে পায়চারী করা লাগে।

সুতরাং টেলিটক আর ব্যবহার করতে পারলাম না। গ্রামে অন্যান্য মোবাইলের নেটওয়ার্ক কথা বলার জন্য উপযোগী থাকলেও ইন্টারনেটের স্পিড খুব কম থাকায় সেগুলোতেও সুইচ করা সম্ভব হয়নি।

সব মিলিয়ে গ্রামীণফোনের ইন্টারনেটই ছিল আমার সবচেয়ে ভাল অপশন। জিপির ৩০০ টাকায় ১জিবি প্যাকেজ (P6) ব্যবহার করেছি বেশ কিছু দিন। এরপর শুরু করলাম ৭০০ টাকায় ৩জিবি প্যাকেজ (P5)। কিন্তু সময়ের সাথে ডেটার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় শর্তসহ আনলিমিটেড প্যাকেজ P2 শুরু করলাম যার খরচ ছিল মাসে ১ হাজার টাকা। পরে সম্ভবত এর দাম কমে ৮৫০ টাকা হয়েছিল। এই প্যাকেজটা অনেকদিন চালিয়েছি।

Grameenphone 3g ads

এক সময় থ্রিজি এলো। তখন থ্রিজির সবচেয়ে বড় প্যাকেজ ছিল ৮জিবি, যার মূল্য ছিল যতদূর মনে পড়ে ১১০০ টাকার মত। এটাও অনেক দিন ব্যবহার করেছি। গ্রামীণফোন থ্রিজি ৮জিবি প্যাকেজের মূল্য এখন ৯৫০টাকা চলছে। টুজি নেই। দরকারও হয়না।

মাঝখানে গ্রামীণফোন ছেড়ে ওয়াইম্যাক্স নেয়ার চিন্তা করছিলাম। কিন্তু হঠাত করে ‘ফ্লেক্সি প্ল্যান’ নামের চমৎকার একটা ফিচার চালু করল জিপি। এতে বিভিন্ন পরিমাণ ডেটা, ভয়েস কল মিনিট, এসএমএস ও মেয়াদ বেছে নিয়ে নিজের মোবাইল প্ল্যান তৈরি করা যায়। সাধারণভাবে ৮জিবি প্যাকেজ নিতে যেখানে ভ্যাট ছাড়া ৯৫০ টাকা খরচ হয়, সেখানে ফ্লেক্সি প্ল্যানে ৮জিবি ইন্টারনেট, ৩০০মিনিট জিপি-জিপি টকটাইম, ৫০-১০০ এসএমএস এই সবকিছু একসাথে ৩০ দিনের মেয়াদে নিলে ভ্যাট সহ ৯৯৮ টাকার মত খরচ হত। এই অফারটি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করেছি এক বছরের বেশি সময় ধরে।

কিন্তু কিছুদিন আগে ফ্লেক্সি প্ল্যানের লাগাম টেনে ধরেছে গ্রামীণফোন। এতে এখন আর ২জিবির বেশি ইন্টারনেট একসঙ্গে নেয়া যায়না। অপরদিকে ২জিবি ইন্টারনেটে আজকাল কিছুই হয়না। এখন জিপির হেভি ব্রাউজিং প্যাকের সর্বনিম্ব খরচ হচ্ছে ৯৫০ টাকা (ভ্যাট ছাড়া, ৮জিবি)।

কিন্তু শুধুমাত্র ৮জিবি ইন্টারনেটের জন্য মাসে ১০০০+ টাকা খরচ করার কোনো মানে হয়না। ফ্লেক্সি প্ল্যানের আগের সুবিধা বহাল থাকলে নিকট ভবিষ্যতে আমার জিপি-ইন্টারনেট ছাড়ার কোনো প্ল্যান ছিলনা। কিন্তু গ্রামীণফোনের নতুন পলিসির কারণে জিপি ইন্টারনেটের সাথে আগের মত আর থাকতে পারছিনা।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য জানতে এই লিংকে গিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন!

ফ্লেক্সি প্ল্যানে আমার লাস্ট ডেটা প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত সপ্তাহে। তখন ১ জিবির বেশি ডেটা ব্যাল্যান্স ছিল। মেয়াদ থাকাকালেই আমি নতুন করে ১ মাসের মেয়াদ সহ ফ্লেক্সি প্ল্যানের ডেটা নিলেও সেই ডেটার আর কোনো কুল-কিনারা পাইনি। সম্ভবত পুরাতন প্যাকেজের মেয়াদ শেষে ডেটাও শুণ্য হয়ে যায়।

গ্রামীণফোন ফ্লেক্সি প্ল্যানের এই সর্বোচ্চ ২জিবি পলিসি কোনো নিয়মিত ব্যবহারকারীর জন্যই সুবিধাজনক না।

গ্রামীণফোন সিম অনেকদিন ব্যবহার করলে ও ভাল অ্যামাউন্ট খরচ করলে গ্রাহককে ‘জিপি স্টার’ বানানো হয়। আমি এখন ‘জিপি প্লাটিনাম স্টার’, যা এর সর্বোচ্চ লেভেল।

মূলত গ্রামীণফোন ইন্টারনেট ছেড়ে যেতে কিছুটা খারাপ লাগবে। তারের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন কেমন হয় কে জানে। তবে খরচ কমে অর্ধেকে নেমে আসবে, সেটা নিশ্চিত। যেহেতু জিপি সিম চালাচ্ছি, তাই ছোটোখাটো কোনো একটা প্যাকেজ হয়ত নিয়ে নেবো, রাস্তাঘাটে বা কোথাও বেড়াতে গেলে যাতে ব্রাউজ করা যায়।

শেষ পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিয়েই নিলাম। এখন আমি আবারও ইন্টারনেটে যুক্ত। আমার এই কম্পিউটারটি এই প্রথম জিপি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির ইন্টারনেটে সংযুক্ত হল। যাইহোক, বিদায় জিপি ইন্টারনেট। একসাথে ভালো অনেকটা সময় কাটিয়েছি। বিভিন্ন সময় মিস করব তোমাকে। স্কুল-কলেজের সেই সবুজ দিনগুলোতে জিপি ছিল আমার অন্যতম ভাল বন্ধু। ভার্সিটির সাদাকালো-একঘেয়ে-উচ্ছল-রঙ্গিন জীবনে জিপি ইন্টারনেট ছিল এক ভরসার নাম। হলের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করিনি কখনো। কারণ তাতে মাঝে মাঝে স্পিড ওঠানামা করত। আন-ইন্টারাপ্টেড সার্ভিস আমার খুব পছন্দ। বন্ধুদের সাথে অনেকটা গর্ব করেই বলতাম “খরচ কিছুটা বেশি হলেও জিপির সার্ভিস চমৎকার”। কিন্তু কী আর করা বলো, তোমার ট্যারিফ যে প্র্যাক্টিক্যালি অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছো! তাই হেভি জিপি ইন্টারনেটকে বিদায়।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,551 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *