আমরা যখন কোনো স্বপ্ন দেখি সেগুলো সাদাকালো নাকি রঙিন হয় এটা নিয়ে অনেক গবেষণা রয়েছে। ছোটবেলায় শুনেছিলাম, স্বপ্নগুলো নাকি সাদাকালো হয়। তথ্যটি কেমন যেন অবিশ্বাস্য লেগেছে। এরপর প্রায়ই সকালে ঘুম থেকে উঠে স্মরণ করার চেষ্টা করতাম গত রাতে দেখা স্বপ্নটি রঙিন নাকি সাদাকালো ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই মনে রাখার মত তেমন কোনও রঙ বা চিহ্ন চোখে ভাসত না। কিন্তু কয়েকটি স্বপ্নের মধ্যে যে আমি রঙ দেখেছি তা স্পষ্ট মনে আছে।
১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে আমাদের একটা সাদাকালো টিভি ছিল। বাংলাদেশী ব্র্যান্ডের ন্যাশনাল লোগোওয়ালা একটা ১৭ ইঞ্চি টেলিভিশন। তখন ভাবতাম এটা যদি রঙিন টিভি হত তবে কতই না মজা হত। অথবা হঠাত একদিন যদি নিজ থেকেই টিভির স্ক্রিন রঙিন হয়ে যেত তাহলে তো কথাই নেই! কিন্তু এরকম চিন্তাভাবনা ছেলেমানুষির নামান্তর, এটা বোঝার বয়স তখন হয়নি। একদিন স্বপ্নে দেখলাম আমাদের টিভির স্ক্রিনে রঙিন ছবি আসছে। খুব মজা পেলাম। কিন্তু সকালে উঠে তো আবার সেই B/W টিভি। অবশ্য ঐদিন কী কী রঙ দেখেছি তা ঠিক মনে নেই। তবে রঙিন যে কিছু একটা ছিল, সেরকমই মনে পড়ছিল।
আমার দুই কাজিন (Cousin) আছেন যারা ছোটবেলা থেকেই তাদের বাবার চাকুরীসূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে থেকে এসেছেন। বয়সে ওনারা আমার চেয়ে বড়। আমি সহ বাসায় আমাদের অন্যন্য যে কাজিনরা আছে উক্ত দুইজনের সাথে তাঁদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সাধারণত, এদের সাথে বছরে আমাদের একবার বা বড়জোর দুইবার দেখা হত। ওনারা দুই ভাই বেশ বিজ্ঞান মনষ্ক। দুজনেই দেশের সেরা দুটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী নিয়েছেন।
খুব ছোটবেলায়, আমরা যখন প্রাইমারিতে পড়তাম, হয়ত ক্লাস ওয়ান-টু হবে, তখন মাঝে মাঝে ভাবতাম ভাইয়াদের সাথে ভবিষ্যতে কী আমাদের যোগাযোগ থাকবে? কে জানে, হয়ত ওনারা কিছুদিন পরে দেশের বাইরেই চলে যাবেন। ওনাদের সাথে আমাদের আর কতদিন দেখা হবে? তাঁদের মধ্যে যিনি ছোট, তিনি আমার চেয়ে কমবেশি দুই বছরের বড়। স্বাভাবিকভাবেই এর সাথে একটু বেশি মজা করা হত। বড় ভাইয়াও অনেক ফ্রেন্ডলি।
ঐযে বললাম, আমরা এদিকের কাজিনরা ভাবতাম, ওনাদের সাথে আমাদের কতদিন পর্যন্ত দেখা হবে, বড় হলে তাঁরা আমাদের কথা মনে রাখবেন কিনা ইত্যাদি। প্রতিবারই ভাইয়ারা এলে এই চিন্তাভাবনা কমপক্ষে দুই বছরের জন্য ‘রিনিউ’ হত। এর পেছনে আমার একটা ‘যুক্তি’ও ছিল। লজিকটা মোটামুটি এরকম, যেহেতু বড় ভাইয়া এবছর আমাদের সাথে খুব আন্তরিকভাবে মিশেছেন, সুতরাং অন্ততঃ ওনার বয়স হওয়া পর্যন্ত ছোটভাইয়াও আমাদেরকে মনে রাখবেন (অদ্ভুত চিন্তাভাবনা); কারণ তাঁদের দুইজনের বয়সের পার্থক্য কমবেশি দুই বছর হবে।
এরই মধ্যে একদিন ছোটভাইয়াকে স্বপ্নে দেখলাম উনি বাসায় এসেছেন এবং আমাদের সাথে গল্প করছেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ভাইয়া তখন একটা পেস্ট কালারের শার্ট পরেছিলেন। পকেটে ‘ক্যাসপার’ লেখা। ‘স্বপ্নের মধ্যে আমরা রঙ দেখতে পাইনা’, এই কথা আমার বিশ্বাস হয়না।
ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নগুলো রঙিন বা সাদাকালো যেরকমই হোকনা কেন, সেগুলো স্বপ্নই। বাস্তবেও আমাদের কিছু স্বপ্ন থাকে। ছোট, বড়, স্বল্প কিংবা দীর্ঘমেয়াদী আরও কত-কী!
এই ছোটভাইয়ার হাত ধরেই অনলাইনে প্রথম প্রবেশ করেছিলাম। ইন্টারনেটে বড় বড় ব্লগ, মিডিয়া সাইটগুলো দেখে একসময় ইচ্ছে জাগত, ইশ্ আমার যদি একটা ওয়েবসাইট থাকত। একসময় ওয়েবস ডটকমে ফ্রি সাইট খুলে ফেললাম। এরপর ব্লগস্পট, টাম্বলার, উইবলি আরও কী কী যেন সবগুলোর হিসেবও রাখিনি।
ওগুলো ছিল ফ্রি সাইট। একবার ভাবলাম নিজের একটা সেলফ হোস্টেড সাইট থাকলে ভালই হয়। কিন্তু এজন্য ডোমেইন ও হোস্টিং খরচ পরিশোধের পেমেন্ট মেথড হিসেবে পেপাল’ই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পেপালের অফিসিয়াল কার্যক্রম নেই। তাই এক লোকাল রিসেলার প্রোভাইডারের কাছ থেকেই ডোমেইন+হোস্টিং নিয়ে শুরু করলাম ‘নিজের ব্লগ’ মিশন।
এটাই (https://banglatech24.com/) ছিল ওয়ার্ডপ্রেসে আমার হাতেখড়ি। অনলাইনে ঘনিষ্ঠ এক সিনিয়র (আরেফিন ভাই) টেমপ্লেট সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিলেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্লগের ডোমেইন ও হোস্টিং নিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারিতে লঞ্চ করার। আরেফিন ভাই তখন এত ব্যস্ত ছিলেন যে ওনাকে ডিস্টার্ব না করে নিজেই শুরু করলাম। গুগল সার্চের সাহায্যে তথ্য জেনে ব্লগ অনলাইনে এনেও ফেলালাম। পরীক্ষামূলক কিছু পোস্ট দিলাম। ফেসবুক, টুইটার একাউন্ট প্রভৃতি ঠিক করলাম। ২১শে ফেব্রুয়ারির আগেই বেশ কিছু পোস্ট দিয়ে ভিজিটরদের জন্য কনটেন্টের ব্যবস্থা করে রাখলাম। ২১ ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে আমার ব্লগের ফ্যানদের উদ্দেশ্যে হালকাপাতলা একটু মেসেজ দিয়ে বেটা ভার্সন ছেড়ে ফাইনালি পোস্ট করা শুরু হল।
একটা বাংলা ব্লগ একজনের পক্ষে চালানো বেশ সময়সাপেক্ষ। এই কঠিন কাজটাই করে এসেছি গত এক বছর ধরে। অনেকেই বলেছেন আর দশটা ব্লগ সাইটের মত সবার জন্য পোস্টিং ওপেন করে দিতে, কিন্তু এর ফলাফল সব সাইটের জন্য উপকারী হয়না। এখনও এই ব্লগে যেকেউ একাউন্ট খুলে পোস্ট করতে পারেন। কিন্তু সেটা সরাসরি পাবলিশ হয়না। পোস্টটি যদি কপি-পেস্ট না হয় ও যথেষ্ট মান না থাকে তাহলে সেটা প্রকাশ করে ভিজিটরদের বিরক্ত করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই।
ফেসবুকে এখন এই ব্লগের চার লক্ষাধিক ফ্যান। আলাদাভাবে SEO করার সময় হয়ে ওঠেনা আমার। এই সাইটটি আজকের অবস্থানে নিতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই দুই হাতেই চশমার মধ্য দিয়ে প্রতিটি আপডেট করেছি আমি একজন। গত এক বছর কোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এই ইফোর্ট দিলে নিঃসন্দেহে মোটা অংকের ডলার আয় করা যেত। কিন্তু টাকা পয়সাই একজন মানুষের সবকিছু না।
আমাদের ফেসবুক পেজে কেউ কেউ কমেন্ট করেছেন পুরো পোস্টটি স্ট্যাটাস আকারে দিয়ে দিলে নাকি আমার বিজনেস জমবেনা তাই শুধু লিংক শেয়ার করি! আপনিই একবার ভেবে দেখেন, ফেসবুক স্ট্যাটাস আর ব্লগ পোস্ট কি কখনও কারও বিকল্প হতে পারে? না… সেটা সম্ভব নয়।
ব্লগের ফ্যান সংখ্যা যখন ১০ হাজারের মত ছিল, তখনও পেইজের পোস্টে তেমন একটা ‘লাইক’, ‘কমেন্ট’, ‘শেয়ার’ আসত না। এটা যেকোনো অ্যাডমিনের জন্য হতাশাজনক। কিন্তু তাই বলে আমি কোনদিনও বলিনি যে ‘এই পোস্টটি ভাল লাগলে লাইক শেয়ার মাস্ট’! আসলে আপনি যদি মনে করেন কোন কিছু সত্যি সত্যি আপনার জন্য ডেডিকেটেড, তাহলে সেটি আপনি নিজ থেকেই ভালবাসবেন। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
দেখতে দেখতে আমাদের ফেসবুক ফ্যান চার লক্ষের কোটা পেরিয়ে গেল। এর মধ্যে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেকের নিকট ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর উপলক্ষ্য রয়েছে। সেগুলো পরবর্তী কোনো পোস্টে লিখব ইনশাআল্লাহ্।
আমি একজন স্টুডেন্ট। আমার ক্লাস থাকে, পরীক্ষা থাকে। আরও অনেক বিষয় থেকে যায়। এতকিছু মিলিয়ে একজনের পক্ষে এতগুলো মানুষের প্রত্যাশা মেটানো খুব কঠিন- কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ত অসম্ভব। তাই আপনারাও যদি এখানে একাউন্ট খুলে নিজেদের লেখাগুলো পোস্ট করেন তবে ব্লগটি আরও সমৃদ্ধ হবে।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষামূলক বিষয় নিয়ে বাংলাটেক২৪ ডটকম এর যাত্রায় আপনাদের সবাইকে সাথে পাব বলে আশা রাখছি। এই সাইট সম্পর্কে আপনার যেকোনও মতামত জানাতে ইমেইল করতে পারেন [email protected] ঠিকানায়। আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শের অপক্ষায় থাকব।
বিনীত
আরাফাত বিন সুলতান
প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক @ www.banglatech24.com
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।