প্রিপেইড ও পোস্টপেইড সিমের মধ্যে পার্থক্য কী? কোনটি বেশি ভালো?

মোবাইল সিমের ক্ষেত্রে প্রিপেইড ও পোস্টপেইড নামক দুটি শব্দের সঙ্গে অনেকেরই পরিচয় থাকবে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে আসলে কী পার্থক্য রয়েছে এটি নিয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। কেননা আমরা সিমের ক্ষেত্রে খুব বেশি চিন্তা না করেই প্রিপেইড সিমের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে প্রিপেইড সিম ছাড়াও প্রতিটি অপারেটর পোস্টপেইড সিমও দিয়ে থাকে। কোনটি আসলে আপনার জন্য ভালো? এই সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় সিম কিনবার ক্ষেত্রে অনেকেই ভুল করে ফেলি।

তাই আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো প্রিপেইড ও পোস্টপেইড সিম নিয়ে। জানবো যে কোন সিমটি কার জন্য উপযুক্ত এবং দুটি সিমের মধ্যে পার্থক্যই বা কী।

প্রিপেইড সিম কী?

আমাদের দেশে প্রিপেইড সিম সবথেকে জনপ্রিয়। কেননা প্রিপেইড সিম সবথেকে সাশ্রয়ী। প্রিপেইড সিম আসলে কী এই নিয়ে অনেকেরই জানা নেই। প্রিপেইড সিম বলতে আসলে বুঝানো হয়ে যেখানে আপনি সিম সেবা ব্যবহার করার জন্য আগেই পেমেন্ট করে দেন। অর্থাৎ আপনি মোবাইল অপারেটরকে টাকা দেয়ার পরে আপনি তাদের সমস্ত সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী এই ধরণের সিম ব্যবহার করে থাকেন ব্যবহারের সুবিধার জন্য। 

আমরা সবাই মোবাইল রিচার্জ করে থাকি। মূলত প্রিপেইড সিম বলেই রিচার্জ করবার প্রয়োজন হয়। আপনি রিচার্জ করার মাধ্যমে আপনার মোবাইল অপারেটরকে আগে থেকেই পেমেন্ট করে দিচ্ছেন। মোবাইল অপারেটর সেই পরিমাণ অর্থ আপনাকে ব্যালেন্স হিসেবে দিচ্ছে। এবার আপনি এই ব্যালেন্স ব্যবহার করে মোবাইল অপারেটরের বিভিন্ন সেবা ব্যবহার করতে পারছেন। আপনার ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে সিম থেকে আপনি কোন ধরণের সেবাই আর পাবেন না। আপনার আবারও রিচার্জ করার দরকার পড়বে। আর তাই আগে থেকেই আপনি মোবাইল অপারেটরকে পেমেন্ট করছেন বলে এই সিমকে প্রি-পেইড বলা হয়।

যদিও বর্তমানে সব অপারেটর জরুরি সময়ের কথা চিন্তা করে আপনাকে ছোট পরিমাণে ইমারজেন্সি লোন দিয়ে থাকে যেখানে ফি এর বিনিময়ে আগে পেমেন্ট না করলেও আপনার ব্যালেন্সে টাকা যুক্ত হয়ে যায়। এই সেবার মাধ্যমে বিভিন্ন শর্ত মেনে আপনি আগে পেমেন্ট না করেও প্রিপেইড সিমে মোবাইল অপারেটরের সেবা নিতে পারেন। তবে এটিও আসলে প্রিপেইড সিমের একটি সার্ভিস ছাড়া আর কিছু নয়।

অর্থাৎ প্রিপেইড সিম বলতে সেই সিমকেই বুঝানো হচ্ছে যে সিমে আপনি আগে থেকেই মোবাইল অপারেটরের সেবা পেতে পেমেন্ট করে রাখেন।

পোস্টপেইড সিম কী?

পোস্টপেইড সিম প্রিপেইড সিম থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে। এখানে মোবাইল অপারেটর থেকে সেবা গ্রহণ করে এরপর আপনার মোবাইল অপারেটরকে পেমেন্ট করতে হয়। অর্থাৎ বারবার রিচার্জ করা বা ব্যালেন্স শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। আপনি একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মোবাইল অপারেটরকে আপনার ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে পেমেন্ট করে দিতে পারবেন।

পোস্টপেইড সিমে আপনার ব্যবহারের উপর ভিত্তি করেই বিল পেমেন্ট করা হয়। তবে এটি তেমন সাশ্রয়ী নয়। কলরেট কম হলেও আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার করতে হয় যার ফলে সেটা অনেকের কাছে বোঝা মনে হতে পারে। ফলে পোস্টপেইড ব্যবহারকারীর সংখ্যা কিছুটা কম। পোস্টপেইড এর অর্থই হচ্ছে যেখানে সেবা নিয়ে তার পরে আপনাকে পেমেন্ট করতে হয়। সুতরাং এই ধরণের সিমে আপনি মোবাইল অপারেটরের যে কোন ধরণের সেবা যে কোন সময় ব্যবহার করতে পারবেন কোন বাঁধা ছাড়াই। তবে এই সেবা নেবার জন্য পরবর্তীতে আপনার অপারেটরকে পেমেন্ট করে দিতে হবে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

sim card - prepaid vs postpaid sim

👉 সাধারণ সিম এবং ইসিম এর মধ্যে পার্থক্য জানুন

প্রিপেইড ও পোস্টপেইড সিমের পার্থক্য

প্রিপেইড ও পোস্টপেইড সিমের বেশ কিছু বড় পার্থক্য রয়েছে। এটাকে অনেকটাই ক্রেডিটডেবিট কার্ডের মতো মনে করতে পারেন। ডেবিট কার্ডে যেমন আপনার দেয়া টাকা থেকেই আপনি খরচ বা টাকা তুলতে পারেন প্রিপেইড সিমের ব্যাপারটিও তেমন। আবার ক্রেডিট কার্ডে আপনার আয়ের উপর নির্ভর করে একটি সীমার মধ্যে টাকা খরচ করতে দেয়ার সুবিধা থাকে সে পরিমাণ টাকা আপনার কাছে সেই মুহূর্তে না থাকলেও। পোস্টপেইড সিমের ব্যাপারটিও এমন। একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে মোবাইল অপারেটরের সব সেবা আপনি উপভোগ করতে পারবেন কোন বাঁধা ছাড়াই।

প্রিপেইড সিমের ক্ষেত্রে আপনাকে বারবার রিচার্জ করার ঝক্কি পোহাতে হয়। জরুরি সময়ে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে এবং রিচার্জ করার মতো অবস্থা না থাকলে বেশ বিপাকে পরে যেতে হয়। তবে পোস্টপেইড সিমে এই ব্যাপারটি নেই। আপনি যখন তখন নিজের ইচ্ছামতো সেবা গ্রহণ করতে পারেন। সেই সঙ্গে কখন ব্যালেন্স শেষ হয়ে যাচ্ছে এই ব্যাপারে চিন্তামুক্ত থাকা যায় এবং মূল্যবান সময় বাঁচানো যায়। গুরুত্বপূর্ণ কলে থাকার সময় কল কেটে যাবার ভয় থাকে না কিংবা হঠাৎ ইন্টারনেট ডাটা শেষ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে বাঁধা সৃষ্টি হওয়ার ভয়ও থাকে না।

অর্থাৎ পোস্টপেইড সিমে আপনি অনেকটাই আনলিমিটেড সেবা পেয়ে যেতে পারেন। আপনাকে ব্যালেন্স, মিনিট, এসএমএস, ডাটা ইত্যাদি নিয়ে আলাদা করে চিন্তা করতে হয় না। তবে এক্ষেত্রে আপনার খরচটাও বেশি হয়ে যায়। প্রিপেইড সিমে আপনি সচেতন থেকে আপনার মোবাইল অপারেটরের সকল সেবা পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন। তবে পোস্টপেইড সিমে এই সুবিধা পাওয়া যায় না। ফলে আপনার জন্য নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে ফেললে পোস্টপেইড সিমে অতিরিক্ত বিল চলে আসার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু প্রিপেইড সিমে আপনি আপনার ইচ্ছা ও সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন ডাটা বা কল প্যাকেজ ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়াও পোস্টপেইড সিমে গ্রাহকদের জন্য বাড়তি কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর। মোবাইল অপারেটরগুলো পোস্টপেইড সিমের গ্রাহকদের তাদের প্রিমিয়াম গ্রাহক হিসেবে গণ্য করে থাকে। তাই সেবার মানের ক্ষেত্রেও পোস্টপেইড সিমে বাড়তি সুবিধা দেখা যায়। আপনি বাড়তি কী সুবিধা পাবেন এটা আপনার অপারেটরের উপর নির্ভর করে থাকে।

👉 সিমের পিন কোড চালু এবং পরিবর্তন করার নিয়ম (ও এর সুবিধা)

প্রিপেইড না পোস্টপেইড? কোনটি ভালো?

প্রিপেইড বা পোস্টপেইড কোন একটি সিমকে আলাদা করে ভালো বলা সম্ভব নয়। আপনার জন্য কোনটি ভালো হবে সেটা আপনার ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। আপনি যদি ভালো বেতনের চাকরি করে থাকেন এবং আপনার অফিস ও পেশাদারি ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ কল ও ডাটা ব্যবহার করার দরকার হয় তবে নিঃসন্দেহে পোস্টপেইড সিম আপনার জন্য ভালো হবে। কেননা এতে আপনাকে বারবার রিচার্জ করতে হবে না এবং আপনার ব্যবহারের সীমা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এছাড়া বেশি ব্যবহারের ফলে রেটও কম পাবেন। তাই পেশাদারি কাজে পোস্টপেইড সিমের ব্যবহার বেশি দেখা যায়।

তবে যারা শিক্ষার্থী এবং একটু সাশ্রয়ী হতে চান তাদের কাছে প্রিপেইড সিম জনপ্রিয়। শুধুমাত্র নিজের ব্যবহারের জন্য খুব বেশি কল বা ডাটা ব্যবহার করতে হয় না সাধারণত। নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন প্যাকেজ নেয়ার সুবিধা শুধুমাত্র প্রিপেইড সিম থেকেই পাওয়া সম্ভব। তাই আপনি যদি সাশ্রয় করতে চান এবং খুব বেশি মোবাইল সার্ভিস ব্যবহারের দরকার না হয় তবে প্রিপেইড সিম আপনার জন্য ভালো হবে।

কাজেই প্রয়োজন অনুযায়ী প্রিপেইড ও পোস্টপেইড সিমের সুবিধা বুঝে তবেই সিম ক্রয় করা উচিত। প্রতিটি অপারেটর তাদের সিমে আলাদা সুবিধা দিয়ে থাকে। তাই যেটি আপনার বাজেট ও সুবিধার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটিই ব্যবহার করা উচিত।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *