সিটি ব্যাংক ফ্রিল্যান্সার সল্যুশন কী ও এর সুবিধা জানুন

ফ্রিল্যান্সারদের বাড়তি কিছু সুযোগ সুবিধা দিতে বর্তমানে বাংলাদেশের একাধিক ব্যাংকে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে মূলত বাংলাদেশ সরকার থেকে ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয় দিতে আলাদা ফ্রিল্যান্সার কার্ড চালু করার মাধ্যমে। এই কার্ড ব্যবহার করে আপনি ব্যাংকগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থার এসব অ্যাকাউন্ট সহজেই খুলে নিতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এই বিশেষ অ্যাকাউন্ট দরকার হয় কেননা এছাড়া বাইরের দেশের সঙ্গে লেনদেনের জন্য খুব বেশি উপায় নেই। কিন্তু ফ্রিল্যান্সারদের কাজের ধরণ অনুযায়ী বাইরের দেশের সঙ্গে অর্থ আদান প্রদানের দরকার হয় নিয়মিত। তাই ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট বিশেষ মাধ্যমে এই সুবিধা ফ্রিল্যান্সারদের দিতে পারে। আর এর ফলে বাইরের দেশ থেকে পেমেন্ট নেয়া বা পাঠানো অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ও জনপ্রিয় ব্যাংক সিটি ব্যাংকও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এই বাড়তি সুবিধাযুক্ত অ্যাকাউন্ট চালু করেছে। বেশ কিছু আকর্ষণীয় সুবিধার মাধ্যমে এই অ্যাকাউন্ট এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের অর্থের লেনদেনে স্বস্তি পেতে পারেন। আমাদের পোস্টে আমরা সিটি ব্যাংকের ফ্রিল্যান্সার সল্যুশন অ্যাকাউন্ট নিয়ে কথা বলবো এবং এর সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানবো।

সিটি ব্যাংক ফ্রিল্যান্সার সল্যুশন কী?

সিটি ব্যাংকের ফ্রিল্যান্সার সল্যুশন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ এক ডুয়াল কারেন্সি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। অর্থাৎ এখানে আপনি ইউএসডি এবং টাকা দুটি কারেন্সিতেই লেনদেন করতে পারবেন। ফলে বাইরের দেশের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কেনাকাটা বা বাইরের দেশে টাকা পাঠানো অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বাইরের দেশের ওয়েবসাইটে কেনাকাটা করতে আপনাকে পাসপোর্ট এন্ডোরসমেন্টের মাধ্যমে ট্রাভেল কোটা হতে লেনদেন করতে হয়। তাতে বাৎসরিক একটি সীমাবদ্ধতা আছে।

তবে ফ্রিল্যান্সারদের এর থেকেও বেশি পরিমাণ অর্থের লেনদেনের প্রয়োজন হয় কখনও কখনও। তাই তাদের বিশেষ সুবিধা দিতেই এই অ্যাকাউন্ট। এখানে ফ্রিল্যান্সাররা রপ্তানিকারক হিসেবে একটি ইআরকিউ অ্যাকাউন্ট বা এক্সপোরটারস রিটেনশন কোটার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারেন। এই অ্যাকাউন্ট ইউএসডি কারেন্সিতে হয়ে থাকে। ফলে বাইরের দেশের সাথে লেনদেনের সীমাবদ্ধতা অনেকটাই কমে আসে।

ফ্রিল্যান্সার সল্যুশনে ফ্রিল্যান্সারদের মূলত দুটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ইআরকিউ অ্যাকাউন্টের সঙ্গে বাধ্যতামুলকভাবে একটি বিডিটি (বাংলাদেশি টাকা) কারেন্সি এর লোকাল সেভিংস অ্যাকাউন্টও খোলার দরকার হয়। এক্ষেত্রে সিটি ব্যাংক তাদের ফ্রিল্যান্সার সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে থাকে। ফলে দুটি কারেন্সিতেই সহজে লেনদেনের পথ উন্মুক্ত হয়ে যায় ফ্রিল্যান্সারদের জন্য। আলাদা করে পাসপোর্ট এন্ডোরসমেন্টের দরকার হয় না। শুধুমাত্র সরকার থেকে প্রদত্ত ফ্রিল্যান্সার কার্ড ব্যবহার করেই এই সুবিধা আপনি পেতে পারেন।

ফলে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এই সিটি ব্যাংক ফ্রিল্যান্সার সল্যুশন বেশ বড় একটি সুবিধা নিয়ে এসেছে। কাজেই সিটি ব্যাংক যদি আপনার পছন্দের ব্যাংক হয়ে থাকে এবং আপনি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তবে দেরি না করে এই অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারেন দ্রুত।

কী কী দরকার হবে ফ্রিল্যান্সার সল্যুশন অ্যাকাউন্ট খুলতে?

প্রথমত আপনাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে। অবশ্যই ১৮ বছর বা তার উপরে বয়স হতে হবে আপনার। অন্য যে জিনিসটি দরকার হবে সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার থেকে প্রদত্ত ফ্রিল্যান্সার আইডি। ফ্রিল্যান্সার আইডি পেতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয় এবং একটি ফি প্রদান করতে হয়। ফ্রিল্যান্সার আইডি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে আমাদের এই পোস্টটি দেখে নিতে পারেন। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সার আইডি কীভাবে তৈরি করবেন তার একটি পূর্ণ গাইডলাইন পেয়ে যাবেন এই পোস্ট থেকে।

আপনার যদি উপরের  জিনিসগুলো ঠিকঠাক থাকে তাহলে সিটি ব্যাংকের যে কোন শাখায় যেতে হবে। সঙ্গে অবশ্যই একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে যে কাগজগুলো লাগে সেগুলো সাথে রাখবেন। যা যা আপনাকে সঙ্গে নিতে হবেঃ

  • এনআইডি/জন্ম সনদ/ পাসপোর্ট
  • বৈধ ফ্রিল্যান্সার আইডি
  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • নমিনির ১ কপি ছবি
  • নমিনির এনআইডি / জন্ম সনদ / পাসপোর্ট

এগুলো সঙ্গে নিয়ে গেলে আপনাকে একটি অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম পূরণ করতে হবে। এরপর আপনি সহজেই এই অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

banking solution for freelancers

ফ্রিল্যান্সার সল্যুশন অ্যাকাউন্টের সুবিধা

এই অ্যাকাউন্টের সবথেকে বড় সুবিধা বিদেশে লেনদেনের ক্ষেত্রে। এই অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে পেমেন্ট আনা বা বিদেশে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে দারুণ সার্ভিস পাবেন আপনি। অ্যাকাউন্টের সঙ্গেই একটি ডুয়াল কারেন্সি ডেবিট কার্ড থাকবে যার মাধ্যমে আপনি যে কোন স্থানে পেমেন্ট করতে পারবেন। এই কার্ডের সঙ্গে মূলত দুটি অ্যাকাউন্ট যুক্ত থাকবে, একটি ইআরকিউ অ্যাকাউন্ট এবং অপরটি সাধারণ সেভিংস অ্যাকাউন্ট।

ইআরকিউ অ্যাকাউন্ট একটি কারেন্ট বা চলতি অ্যাকাউন্ট। এই অ্যাকাউন্টে থাকা ব্যালেন্সের উপর আপনি কোন ইন্টারেস্ট না পেলেও সেভিংস অ্যাকাউন্টে থাকা ব্যালেন্সে আপনি ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী ইন্টারেস্ট পেয়ে যাবেন। ফলে অ্যাকাউন্টে চাইলে আপনি সেভিংস করতে পারবেন সহজেই।

এই অ্যাকাউন্টের সবথেকে বড় সুবিধা হল বিদেশে পেমেন্টের ক্ষেত্রে আপনি সাধারণ ট্র্যাভেল কোটার বদলে ইআরকিউ কোটা থেকে পেমেন্ট করতে পারবেন। ট্র্যাভেল কোটার সীমাবদ্ধতার মধ্যে না থেকে আরও বেশি পরিমাণ টাকা আপনি খরচ করতে পারবেন যেটির হিসাব হবে ইআরকিউ কোটা হতে। এছাড়া আপনাকে পাসপোর্ট এন্ডোরসমেন্টেরও কোন দরকার পড়বে না।

👉 ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যাট্রিক্স অ্যাকাউন্টের সুবিধা জানুন

👉 ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এলো UCB স্বাধীন একাউন্ট, এর সুবিধা জানুন

ইআরকিউ অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা কোন মেইন্টেন্যান্স ফিও নেই। প্রথম বছরে আপনার ডুয়াল কারেন্সি ডেবিট কার্ডের চার্জও পুরোপুরি ফ্রি। এছাড়া আপনাকে প্রতি ৬ মাসে বিনামুল্যে রেমিট্যান্স সার্টিফিকেটও প্রদান করবে সিটি ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ড বা লোন নেওয়াও সম্ভব এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। এছাড়া রেমিট্যান্স পেতে এই অ্যাকাউন্ট বাড়তি বিভিন্ন সুবিধাও আপনাকে দেবে।

সব সুবিধা মিলিয়েই এটি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অন্যতম সেরা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। কাজেই আপনার ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড থেকে থাকলে সহজেই এই অ্যাকাউন্টের সুবিধা নিতে পারবেন। এই অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আপনি সিটি ব্যাংকের ওয়েবসাইটেও ভিজিট করতে পারেন এই লিঙ্কে

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *