এনএফটি কি? NFT এতো দামি ও জনপ্রিয় হওয়ার কারণ

এনএফটি নিয়ে সম্প্রতি সকল মাধ্যমে যে ঝড় উঠেছে, সে সম্পর্কে হয়ত কমবেশি সকলেই অবগত আছেন। ডিজিটাল দুনিয়া ও কালেক্টিবলসের দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এনএফটি (NFT) নামে ডাকা এই ডিজিটাল আর্টওয়ার্কসমূহ।

মুদ্রার বেলায় যেমন বিটকয়েন কে ডিজিটাল সমাধান হিসেবে অবহিত করা হয়, ঠিক তেমনি সংগ্রহযোগ্য আইটেম বা কালেক্টিবলস এর ক্ষেত্রে ডিজিটাল সমাধান এই এনএফটি। নতুন ক্রিপটোপ্রেমীদের কল্যাণে ডিজিটাল আর্টিস্টগণ এনএফটি থেকে বেশ ভালো অংকের অর্থ আয় করছেন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক এনএফটি আসলে কি, এনএফটি কিভাবে কাজ করে, এনএফটি এর ব্যবহার, এনএফটি কেনো জনপ্রিয়, এনএফটি কিভাবে কিনবেন, এনএফটি এর ভবিষ্যৎ ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর।

এনএফটি কি?

এনএফটি (NFT) এর পূর্ণরূপ হলো “non-fungible token” যার মানে হলো এটির ইউনিক প্রপার্টিজ রয়েছে যা রিপ্লেস বা পরিবর্তন করা যায় না। এনএফটি এর কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য হলোঃ

  • ডিজিটাল অ্যাসেটঃ এনএফটি হলো এক ধরণের ডিজিটাল অ্যাসেট যা আর্ট, মিউজিক ও গেম এর মত ইন্টারনেট কালেক্টিবলসকে ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে অথেনটিক সার্টিফিকেট প্রদান করে
  • ইউনিকঃ এনএফটি জালিয়াতি বা ম্যানিপুলেট করা যায় না
  • এক্সচেঞ্জঃ এনএফটি সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সি, যেমনঃ ইথেরিয়াম ব্যবহার করে কেনা-বেচা করা হয়
Bored Ape NFT
Bored Ape NFT

Cryptopunks, Bored Ape কিছু উল্লেখযোগ্য এনএফটি প্রোডাক্ট, যা শুধুমাত্র ১০হাজার পিস আইটেম বিক্রি করা হয় ও মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে।

এনএফটি কিভাবে কাজ করে

এনএফটি কি তা তো আমরা বুঝলাম। এবার জেনে নেওয়া যাক এনএফটি কিভাবে কাজ করে।

বেশিরভাগ এনএফটি ইথেরিয়াম ক্রিপটোকারেন্সির ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা মূলত একটি ট্রানজেকশন রেকর্ড করার একটি পাবলিক লেজার বা হিসাবের মত কাজ করে। এনএফটি হলো ইউনিক টোকেন যাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জমা থাকে।

যেহেতু মার্কেট ও ডিমান্ড অনুসারে এনএফটিসমূহের একটি নির্দিষ্ট দাম রয়েছে, তাই সাধারণ আর্ট এর মত কেনা-বেচা করা যায় এনএফটি। অর্থাৎ মালিকানা পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে এনএফটি এর ক্ষেত্রে। এনএফটি তে স্টোর থাকা ইউনিক ডাটা ব্যবহার করে এর মালিকানা ভেরিফাই বা ট্রান্সফার করা যায়।

👉 বিটকয়েন কি ও কিভাবে কাজ করে

এনএফটি এর উদাহরণ

এনএফটি একটি নতুন ধারণা হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ এর সাথে পরিচিত নয়। বর্তমান সময়ের যেসব ডিজিটাল প্রোডাক্ট এনএফটি হিসেবে ব্রিক্রি হচ্ছে, সেগুলো হলোঃ

  • আর্ট
  • গিফ (GIF)
  • ভিডিও
  • স্পোর্টস হাইলাইট
  • কালেক্টিবলস
  • ভার্চয়াল এভাটার
  • ভিডিও গেম স্কিন
  • ডিজাইনার স্নিকারস
  • গান

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

এনএফটি এর ব্যবহার

ক্রিপট্রো-ট্রেডিং ও আর্টওয়ার্ক সংগ্রহে আগ্রহী ব্যাক্তিগণ এনএফটি নিয়ে অধিক উৎসুক। এছাড়া এনএফটি এর আরো কিছু ব্যবহার রয়েছে, যেমনঃ

  • ডিজিটাল কনটেন্টঃ এনএফটি’র সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল কনটেন্টে। কনটেন্ট ক্রিয়েটরগণ এনএফটি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন
  • গেমিং আইটেমঃ গেম ডেভলপরগণ এনএফটি কে বেশ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছেন। গেমে এক্সক্লুসিভ আইটেম প্রদান করার মাধ্যমে সাধারণের চেয়ে একটি আইটেমের দাম ও চাহিদা বাড়ানো যায় বেশ সহজে
  • ইনভেস্টমেন্ট ও কলাটরেলসঃ এনএফটি ও ডিফাই (ডিসেন্ট্রালাইজড ফাইনান্স), উভয় প্রযুক্তি একই ইনফ্রাস্টাকচার ব্যবহার করে। দুইটি প্রযুক্তি একইভাবে কাজ করার মাধ্যমে ডিফাই (DeFi) ব্যবহার করে জামানত হিসেবে অর্থ ধার করা যায়
  • ডোমেইনঃ মনে রাখতে সহজ এমন ডোমেইন নেম প্রদানে সাহায্য করে এনএফটি। অর্থাৎ ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম সহজ ও মনে রাখার যোগ্য করে আইপি এড্রেস সহজ অ্যাকসেস করার কাজ সহজ করা হয়

এনএফটি কেনো জনপ্রিয়

২০১৫সালে এনএফটি এর উত্থান হলেও সম্প্রতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে এসেছে এনএফটি। এর মূল কারণ হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন ফ্রেমওয়ার্ক, এই দুইটি বিষয়কে দায়ী বলা যেতে পারে। নিজেদের জন্য এক্সক্লুসিভ ডিজিটাল কনটেন্ট কিনতে কিংবা ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে জমা করতে ব্যাপক হারে এনএফটি কিনছেন কনজ্যুমারগণ।

এনএফটি কি? NFT এতো দামি ও জনপ্রিয় হওয়ার কারণ

কেউ যখন একটি এনএফটি কিনেন, তখন উক্ত কনটেন্ট ইন্টারনেটে থাকলেও এর ডিজিটাল মালিকানা থাকে ক্রয়কারীর নিকট। একটি এনএফটি ইন্টারনেটে যত বেশি জনপ্রিয়তা পায়, এর দামও ততো বাড়তে থাকে। যখন কোনো এনএফটি বিক্রি হয়, তখন উক্ত এনএফটি এর আসল ক্রিয়েটর একটি % কাট পেয়ে থাকেন। আবার যে প্ল্যাটফর্মে কেনা-বেচা হচ্ছে, সে প্ল্যাটফর্ম নির্দিষ্ট একটি ফি চার্জ করে। বাকি থাকা রেভিনিউ উক্ত এনএফটি এর বর্তমান মালিক এর কাছে যায়। এভাবে ডিজিটাল অ্যাসেট কেনা-বেচার মাধ্যমে একটি নতুন ইকোনমি তৈরীর সম্ভাবনা রয়েছে।

এনএফটি নামের এই খেলায় আসল বিষয় হচ্ছে অথেনটিসিটি বা কোনো অ্যাসেট এর সত্যতা। ডিজিটাল কালেকটেবিলসমূহ কিছু তথ্য ধারণ করে যা অন্য এনফিটি থেকে উক্ত এনএফটি কে আলাদা করে ও ভেরিফাই করতেও সহজ হয়। ফেইক আইটেম তৈরী করে তা কেনা-বেচা করার চেষ্টায় কোনো লাভ নেই, কেননা ব্লকচেইন প্রযুক্তির সাহায্যে আসল ক্রিয়েটরকে ট্রেস করা যায় সহজে। 

👉 ফেসবুক মেটাভার্স নিয়ে ৫টি জনপ্রিয় প্রশ্নের উত্তর

এনএফটি কিভাবে কিনবেন

এনএফটি এর বহুল জনপ্রিয়তা ও এর ব্যবহার দেখে এনএফটি কিভাবে কেনা যেতে পারে সে সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন। এনএফটি কেনার আগে কিছু বিষয় জানা উচিত, যথাঃ

  • এনএফটি ও ক্রিপটোকারেন্সি জমা করতে প্রথমে একটি ডিজিটাল ওয়ালেট এর প্রয়োজন হবে
  • এনএফটি প্রোভাইডার কি ধরনের কারন্সি গ্রহণ করছে তা খেয়াল রেখে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে হবে
  • ওপেনসি, কয়েনবেস, পেপাল, ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যববার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা যাবে

এনএফটি কেনার জন্য ওয়ালেট রেডি করার পর আপনার পছন্দের এনএফটি কিনে আপনার ডিজিটাল ওয়ালেটে জমা করতে পারবেন। জনপ্রিয় কিছু এনএফটি মার্কেটপ্লেস হলোঃ

  • Rarible: Rarible একটি পাবলিক মার্কেটপ্লেস যেখানে আর্টিস্ট ও ক্রিয়েটরগণ এনএফটি বিক্রি করে থাকেন
  • OpenSea: এনএফটি কেনা-বেচা করার অত্যন্ত জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এটি যেখানে প্রায়সই বিভিন্ন দূর্লভ এনএফটি কালেকশন সেল করা হয়ে থাকে

এনএফটি এর ভবিষ্যৎ

এনএফটি সম্পর্কে এতোকিছু জানার পর এনএফটি এর ভবিষ্যৎ কি সে বিষয়ে আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে। বিভিন্ন আর্টিস্টদের সোশ্যাল মিডিয়াতে দারুণ পরিচিতি প্রদান করেছে এনএফটি। এমনকি টুইটার এর সিইও এবং কো-ফাউন্ডার, জ্যাক ডর্সি তার প্রথম ও জনপ্রিয় টুইট “just setting up my twttr” ৬৯.৩মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ভিগনেশ সুন্দরসেন এর কাছে এনএফটি হিসেবে বিক্রি করেন।

এনএফটি এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে হাজার হাজার ডলার খরচ করেও এনএফটি কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। এইভাবে যদি চলতে থাকে, তবে এনএফটি এর জনপ্রিয়তার জৌলুশ খুব শীঘ্রই কমবে না বলে ধারণা করা যায়। ব্লকচেইন দ্বারা চালিত এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতের ইন্টারনেটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *