ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়ে যাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রায় নিয়মিত পরিবার বা বন্ধুমহলের কারো আইডি হ্যাক হওয়ার খবর আমরা শুনে থাকি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেনোই বা ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়ে যায়? আর কে বা কারা এবং কিভাবে ফেসবুক আইডি হ্যাক করে? এই পোস্টে আমরা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো সেসব প্রশ্নের।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়ে যাওয়ার প্রধান মাধ্যমগুলো। ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হওয়ার মাধ্যমগুলোর পাশাপাশি আমরা আরো জানবো কিভাবে এসব থেকে আপনার ফেসবুক একাউন্টকে রক্ষা করবেন।
ফিশিং
অধিকাংশ ফেসবুক একাউন্ট ফিশিং এর মাধ্যমে হ্যাক হয়। ফিশিং এর মাধ্যমে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকের ক্ষেত্রে ফেসবুক এর মতো দেখতে হুবহু ওয়েবপেজ ব্যবহৃত হয়। এসব আসল দেখতে ফিশিং ওয়েবপেজে ফেসবুক একাউন্টে লগিন এর তথ্য, অর্থাৎ ইমেইল/ফোন ও পাসওয়ার্ড চাওয়া হয়। ফেসবুকে লগিন এর এই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করার পর প্রদত্ত তথ্য হ্যাকারের কাছে পৌছে যায়। ঐ হ্যাকার ব্যবহারের জন্য লগিনের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে।
কোনো ফিশিং পেজে এভাবে ভুলে ফেসবুক লগিন তথ্য প্রদান করে ফেললে একাউন্টের নিরাপত্তা তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে যায়।
ফিশিং এর দ্বারা একাউন্ট হ্যাকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো একজন ব্যবহারকারী কোনোভাবে জানতে পারেন না যে তার একাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছে। যতক্ষণ না হ্যাকার একাউন্টের কোনো তথ্য পরিবর্তন করছে বা কোনো পোস্ট করছে, তার আগ পর্যন্ত ফিশিং এর মাধ্যমে যে ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়েছে, তা বুঝা মুশকিল।
ফেসবুক ফিসিং একটি গুরুতর সমস্যা হলেও ফিশিং থেকে নিজের ফেসবুক একাউন্টটি বাচিয়ে রাখা আহামরি কঠিন কোনো কাজ নয়। ফিশিং থেকে বাচতে কোনো লোভনীয় অফারযুক্ত মেসেজ বা ইমেইল এর লিংকে ক্লিক করবেন না। ফেসবুক কতৃপক্ষের পাঠানো ইমেইল এর ইমেইল এড্রেসে fb.com / facebook.com / facebookmail.com, এই ডোমেইনগুলো থাকে।
ফেসবুক একাউন্ট সম্পর্কে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফেসবুক অ্যাপ বা Facebook.com এ প্রবেশ করলেই দেখতে পাবেন। তাই কোনো লিংকে ক্লিক করে ঐ লিংকের এড্রেস চেক না করেই পাসওয়ার্ড বা লগিন ইনফরমেশন প্রদান করবেন না।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
কি-লগিং
প্রযুক্তি দুনিয়ায় আরেক অভিনব হ্যাকিং মেথড এর নাম কি-লগিং। এমনকি একজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত কি-লগিং ভাইরাস এর অস্তিত্ব বুঝতে হিমশিম খেতে পারেন। একটি কি-লগিং প্রোগ্রাম মূলত কোনো ডিভাইসে, যেমনঃ কম্পিউটার, মোবাইল বা ট্যাবলেটে টাইপ করা সমস্ত তথ্য সেভ করে রাখে।
এই সেভ করা তথ্য চুরি হয়ে পৌঁছে যায় হ্যাকারের কাছে, যার মধ্যে ব্যাংক ডিটেইলস, পাসওয়ার্ড বা অন্যান্য কনফিডেন্সিয়াল তথ্য থাকে। অধিকাংশ সময়ে কোনো সফটওয়্যার ইন্সটলের সময় কিংবা ইমেইলের মাধ্যমে কি-লগার ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করে।
কি-লগার যেহেতু অদৃশ্য ভাইরাস, তাই এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া বেশ দুঃসাধ্য বলা চলে। দেখা গেলো আপনার ডিভাইস অনেকদিন ধরেই কি-লগার ভাইরাসে আক্রান্ত, কিন্তু আপনি জানতেই পারলেন না। কি-লগার থেকে বাচতে সবসময় টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ব্যবহার করুন। এতে হ্যাকার আপনার লগিন ইনফো পেয়ে গেলেও ইউনিক টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন কোড প্রদান করতে পারবে না, সুতরাং আপনার তথ্য কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকবে।
👉 ফেসবুক টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করার নিয়ম
যেকোনো ডিভাইসের সিস্টেম আপডেট আসলে তা ইনস্টল করতে ভুলবেন না। সিস্টেম আপডেটসমূহে লেটেস্ট ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার রুখে দেওয়ার সিকিউরিটি আপডেট থাকে, তাই সিস্টেম আপডেট এড়িয়ে চলা ঠিক নয়। চাইলে ব্যবহার করতে পারেন কি এনক্রিপশন সফটওয়্যার, যা কিবোর্ডে টাইপ করা প্রতিটি অক্ষর এনক্রিপটেড করে দিবে। এছাড়াও কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। মূলত ক্র্যাক অর্থাৎ পাইরেটেড সফটওয়্যার ইন্সটল থেকে বিরত থাকলে অনেকাংশ কি-লগার ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকা যায়।
👉 অ্যান্ড্রয়েড ফোন আপডেট করার নিয়ম
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার
বর্তমানে প্রায় সকল স্মার্টফোনে পাসওয়ার্ড সেভ করার অপশন রয়েছে, যাতে ব্যবহারকারীর নিজ থেকে পাসওয়ার্ড প্রদান করতে না হয়। যদিওবা এই পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের বদৌলতে প্রতিবার লগিনের সময় পাসওয়ার্ড প্রদান করতে হয়না, তবুও নিরাপত্তা জনিত কারণে এই সুবিধা ভোগ করার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে।
👉 শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করার সহজ উপায়
সাইডজ্যাকিং
কোনো পাবলিক নেটওয়ার্ক হতে ফেসবুক একাউন্টে লগিনের ক্ষেত্রে সাইডজ্যাকিং এর শিকার হতে পারেন। সাইডজ্যাকিং মূলত অসাবধানতার কারণে ঘটে থাকে। সাইডজ্যাকিং অ্যাটাক এর ক্ষেত্রে একজন হ্যাকার ব্যবহারকারীর ওয়েবসাইটের অ্যাকসেস চুরি করে নেয়, যার ফলে উক্ত সেশনে ব্যবহারকারীর ছদ্মবেশ গ্রহণ করতে পারে উক্ত হ্যাকার।
সাইডজ্যাকিং আরো বিভিন্ন নাম, যেমনঃ সেশন হ্যাকিং, কুকি হ্যাকিং, ইত্যাদি নামেও পরিচিত। মূলত চুরি করা কুকি (cookies) এর কারণে এই অবৈধ প্রবেশ সম্ভব হয়। এটা থেকে নিরাপদ থাকতে অন্যের কম্পিউটার বা ডিভাইস থেকে ফেসবুক বা অন্য কোনো অনলাইন একাউন্টে লগইন করা থেকে বিরত থাকুন।
সেই সাথে নিজের ফোন বা পিসি অন্যকে ব্যবহার করতে দেওয়ার আগে চিন্তা করে দেখুন তাকে আপনি ভরসা করতে পারেন কিনা। অনেক সময় অজ্ঞতার কারণেও আপনার পিসিতে বা ফোনে অন্য কোনো ব্যক্তি ভাইরাস ইনস্টল করে ফেলতে পারে।
ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হলে কিভাবে বুঝবেন ও করণীয় সম্পর্কে বাংলাটেক এর ডেডিকেটেড পোস্ট রয়েছে। উক্ত পোস্টে ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হলে যেসব বিষয় লক্ষণীয় হতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও এই পোস্টে উল্লেখিত কারণসমূহের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে করণীয় সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।
👉 ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হলে করণীয় সম্পর্কে জানুন
এতোসব ফেসবুক হ্যাকিং এর মাধ্যম থেকে আমরা কি শিখলাম? খুব সহজ! কখনো মোবাইল ফোন সাবধানতা অবলম্বন ব্যাতিত অন্যের হাতে তুলে দেওয়া উচিত নয়। পাবলিক নেটওয়ার্কসমূহ ব্যবহার না করা ভালো, সম্ভব হলে এড়িয়ে চলুন। কখনো কোনো হ্যাকারের কবলে পড়লে মারাত্মক প্রাইভেসি লঙ্ঘনের মুখোমুখী হতে পারেন। এমন অবস্থায় পড়লে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।