বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনে জালিয়াতি ঠেকানোর সম্ভাব্য উপায়

ইতোমধ্যেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে কিছু জালিয়াতির খবর/অভিযোগ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন অসাধু রিটেইলাররা লোকজনকে ধোঁকা দিয়ে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তাদের অগোচরেই বাড়তি সিম নিবন্ধন করিয়ে নিচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে সরকার মোবাইল ফোনের সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সফল করতে (ও ভুয়া নিবন্ধন ঠেকাতে) বাড়তি কিছু পদক্ষেপও দরকার।

এবং সরকার, বা আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চাইলেই খুব সহজে এই ভুয়া নিবন্ধন জনিত সমস্যার অনেকাংশেই সমাধান করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।

  • সরকার একটা সেন্ট্রাল এসএমএস পোর্টাল চালু করতে পারে যেখানে প্রতিটি মোবাইল অপারেটরের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সার্বিক সিম নিবন্ধনের তথ্য রেকর্ড করা থাকবে। গ্রাহকরা একটি নির্দিষ্ট নাম্বারে তাদের নিজ নিজ এনআইডি নম্বর লিখে এসএমএস করে জানতে পারবেন তাদের ঐ এনআইডির অধীনে মোট কতগুলো সিম নিবন্ধিত আছে। উদাহরণস্বরূপ, মনে করি কেউ একজন তার নিজের এনআইডি নম্বর লিখে xxxxx নম্বরে মেসেজ পাঠালেন। এরপর xxxxx নম্বর থেকে তাকে জানানো হল যে “এই এনআইডি নম্বরের অধীনে মোট এতগুলো (x) সিম নিবন্ধিত আছে”। যদি ফিরতি মেসেজে আসা এই সংখ্যা দেখে কারও সন্দেহ হয় যে তার এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে সিম নিবন্ধন করা হয়েছে, তাহলে তিনি বিটিআরসির সাথে যোগাযোগ করে সেই সিমের ব্যাপারে, নিবন্ধনকারী রিটেইলার/কোম্পানি প্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

কিন্তু এখানে একটা প্রাইভেসি ইস্যু আছে। আজকাল কারও জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার সংগ্রহ করা খুব একটা কঠিন না। সুতরাং কেউ কেউ হয়ত নিজের ঠিক কতটি সিম আছে তা অন্যকে জানাতে চাইবেন না। তাহলে বিটিআরসি যদি শুধুমাত্র এসএমএসের মাধ্যমে এনআইডি নম্বর নিয়ে সিম সংখ্যা জানায় তাতে কেউ কেউ বিব্রতবোধ করতে পারেন।

এই ঝুঁকি ঠেকাতে সরকার আরেকটি কৌশল কাজে লাগাতে পারে। কোনো একটি নির্দিষ্ট এনআইডি’র অধীনে মোট কতটি সিম রেজিস্ট্রেশন করা আছে তা জানতে ‘যেকোনো মোবাইল নম্বর’ থেকে মেসেজ পাঠালেই জানানোর দরকার নেই। শুধুমাত্র উক্ত স্পেসিফিক একটি এনআইডি’র মাধ্যমে ইতোমধ্যেই নিবন্ধনকৃত কোনো সিম থেকে মেসেজ পাঠালেই সেই এনআইডির অধীনে থাকা মোট সিম সংখ্যা জানা যাবে, এমনটি হলে ভাল হয়।

এরপর বিটিআরসির সহায়তায় উক্ত এনআইডি’র মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত সকল মোবাইল নম্বর এবং কে, কখন, কোথায় প্রতারণার মাধ্যমে সিম নিবন্ধন করিয়ে নিয়েছে তা জানার ও ব্যবস্থা গ্রহণের উপায় থাকা দরকার।

  • কিন্তু এমন অনেক গ্রাহক আছেন যারা নিজের এনআইডির অধীনে ঠিক কতটি সিম আছে তা জানার ব্যাপারে সচেতন না। এরকম হলে আরেকটি ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একটি এনআইডির অধীনে মোট কতটি সিম আছে তা ঐ এনআইডির অধীনে নিবন্ধনকৃত সকল সিমেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে বিটিআরসি। আর মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকেই সচেতন করা যেতে পারে যে, নিজের এনআইডিতে মোট কতটি সিম নিবন্ধিত আছে তা প্রত্যেকের জানা প্রয়োজন। সুতরাং সবাই তখন নিজ দায়িত্বে ভুয়া সিম থেকে নিজের পরিচয়কে মুক্ত করতে চাইবেন।
  • এরপর ভবিষ্যতে কারও এনআইডি ব্যবহার করে কোনো সিম রেজিস্ট্রেশন করলে তার আগের সিমগুলোতে মেসেজ পাঠানো যেতে পারে যে “আপনার এই এনআইডির মাধ্যমে অমুক মোবাইল নম্বর রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে”।

তাহলে আশা করা যায় ভুয়া নিবন্ধনের ঝুঁকি অনেক কমে আসবে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,571 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *